somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বউ

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(পুরোপুরী কাল্পনিক গল্প!কারো ব্যক্তিগত জীবনের সাথে মিলে গেলে আমার কোন দোষ নেয়। কোন এক নাটকে এর কাছাকাছি কোন থিম দেখেছিলাম। নাটক, নাট্যকার কারো নাম মনে নেই । দুঃখিত)

বন্ধু আনিসের দিকে তাকিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কেমন আলু ,পটল মার্কা চেহারা হয়ে গেছে । বললাম “কি রে চেহারার এমন অবস্থা কেনো রে?”
-“বলিসনা কাল রাতে ঝগড়ার পর তোর ভাবি রাগ করে গুদাম ঘরে আটকে রেখেছিলো। ঘর ভর্তি আলু পটল।“ আমি চুপ করে গেলাম। আলু পটল ঘরে থাকার ফলে যদি চেহারা আলু পটলের মতো হয় তাহলে তো আমার চেহারা কমোড, বেসিন মার্কা হবার কথা। কাল ঝগড়ার পর দেড় ঘন্টা বন্দী ছিলাম বাথরুমে। আরিফ এসে গেছে আড্ডায় এরই মাঝে। আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
-জানিস শরিফ কাল আত্বহত্যা করতে যাচ্ছিলাম।ঝগড়ার শেষে রাগ করে তোর ভাবির ওড়না ফ্যানে ঝুলিয়ে ফাসি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ তোর ভাবি দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে পরলো।“ আমি আশার আলো দেখলাম।
-নিশ্চয় ভাবি রাগ করেছিলো যে তুই এভাবে ফাসি নিচ্ছিস দেখে।
-রাগতো করেছিলোই। চেচিয়ে বললো –মরবি তো মর, আমার পাকিস্তানী ওড়নার বারোতা বাজাচ্ছিস কেনো? কোরবানির গরু বান্দার শক্ত দড়ি খানা দিয়ে ঝুলে যাও।“ গল্প এইটুকু শুনেই আনিস ফুস ফুস করে কেদে উঠলো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম –
-কাদিস না, পাগলা, কাদিসনা। দিন সব সময় একরকম যায়না। এই দিন দিন না আরো দিন আছে...পুরুষরা একদিন নিশ্চয় জেগে উঠবে...”...

এই সময় হারুন ভাইয়ের দেখা পেলাম। গ্রামের একমাত্র পুরুষ। বঊ যার পুর্ন নিয়ন্ত্রনে। কেউ কোনদিন তার ঘর থেকে উচ্চগলা পর্যন্ত শোনেনি। আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
-“তোমাদের মুখ দেখেয় বুঝেছি দাম্পত্য কলহে ভুগছো।“আনিসের দিকে আঙ্গুল টেনে বললেন –তোমাকে দেখেই মনে হচ্ছে প্রতিদিন হিলের বারি খাও।“ আনিস বিদ্রোহ করে বসলো - “প্রতিদিন??না না। মিথ্যে অপবাদ দিবেননা ভাই। সপ্তাহে একবার দুইবার হয় আর কি...রোজার মাসে কিন্তু খাইনা...”
- হাহাহা শোন , দ্যাম্পত্য জীবন এতো সহজ নয়। অনেক ভাবে একে নিয়ন্ত্রন করতে হয়। দেখো আমাকে দেখো। সাত বছর এক সাথে। নো ঝগড়া ঝাটি। তোমার ভাবি এক দিনো আমার কথায় “উ” পর্যন্ত বলেনি।
-একদিনও না।
-শুধু বিয়ের দ্বীতিয় দিন । একটু বিরক্তি নিয়ে বললো –
‘এই এতো দেরী করছো কেনো ঘুম থেকে উঠতে?” আমি বললাম –ফকিরনির বেটি তুই চুপ। সেইযে চুপ করলো আজ পর্যন্ত কোন সাড়া নেই।পুরুষ হতে হয় বুঝেছো, পুরুষ।

আমরা গ্রামের একমাত্র পুরুষকে দেখি , একটু আধটু ঈর্ষাও করি। মাঝে মাঝেই উপদেশ দেন –“ শোনো বিশ্বাস থাকতে হয়। দেখো আমাকে। কোনদিন মোবাইল নিয়ে বাইরে আছিনা। কি দরকার ! বিশ্বাস আছেনা। সময় মতো ঘরে ফিরবো। আর কন্ট্রোল থাকতে হয়। তোমার ভাবি সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে ভয় পায় এখনো। ...”আমরা মুগ্ধ হয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি।

এক বিকালে আনিস খুব বিপদে পরে গেলো। তার বঊ তাকে আর বাসার বিড়ালটাকে আটকে রেখেছে প্রায় জলন্ত রান্না ঘরে। বিড়ালের দোষ সে কর্কশ স্বরে ডাকাডাকি করে, আনিসের দোষ সে বিড়ালের মতো ম্যাও ম্যাও করে কথা বলে। আনিস সে অবস্থাতেই ফোন দিয়ে মিনমিনে গলায় বলছে “ আমাদের বাচাও... বাচাও... বিপদে আছি.. আমাদের বাচাও....Save our souls…..sos……sos..” হারুন ভাই উঠে দাড়ালো। “যাই দেখি কি করা যায়! কি যে করে বোকা ছেলে পেলে গুলো...ধুর ! আমাকে দেখে কেনো যে শেখেনা...”

হারুন ভাই চলে যাবার পর আমি আর আরিফ অনেকক্ষন সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। আহা! পুরুষ বটে। হঠাৎ মোবাইল ফোন বেজে উঠলো। আরে হারুন ভাই দেখি আজ মোবাইল আনছে, ফেলে রেখে গেলো। মোবাইলে দেখলাম “মহুয়া”, মানে হারুন ভাইয়ের বঊ। শ্রদ্ধায় সম্মানে আমার চোখে পানি এসে গেলো। এই মহিয়েসী নারীর পদধুলি যদি একবার নিতে পারতাম। আমি ফোন ধরলাম। অপর পাশ থেকে শোনা গেলো-
-“ ঐ বান্দীর পুত…মোবাইল নিয়ে বের হয়েছিস কেন মিনসে? মনে করিস বুঝি না। আড়ালে আবদালে গিয়ে মেয়েদের সাথে কথা বলবি তাইনা? ছুটাইয়া দেবো তোর কথা, আজ বাড়ী আয় ছাগল বেটা।ছাগলের মতো ফ্যাল ফ্যাল কইরা তাকাইয়া থাকা ছাড়া পারসটাকি?“ আমি আরিফের দিকে তাকিয়ে লাউড স্পীকার দিয়ে দিলাম।
-“ গতকাল বলছিলাম হাজার দুয়েক টাকা লাগবে...না দিয়াই পালাইছিস......আব্বা বিয়ের সময়ই বলেছিলো পোলা আবুল টাইপের হলেও মনে হয় কিপটা হবে...তখন বুঝি ন...আজ আয় তোকে যদি দুই হাজার বার কান ধইরা ঊঠ বস না করাইছি......”
আরিফ ফিসফিস করে বললো “তোর পরিচয় দে”। দেবো ভাবছিলাম তার আগেই আবার শুরু হলো-“ চুপ কেন বেটা লুইস। আমার লগে কথা কইটে ভালো লাগেনা। ভালো লাগে বুয়াদের সাথে কথা কইতে? হা...রান্না খুব মজা হয়ছে বুয়া....বান্দীর পুত তোরতো বান্দীদেরই ভালো লাগবো...”
আমরা অসহায় চোখে একে অপরের দিকে তাকালাম। মোবাইল কেটে দিলাম। হারুন ভাই ততক্ষনে চলে এসেছে। আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
-“মিটিয়ে আসলাম বুঝেছো। আসলে দ্যাম্পত্য জীবনে সুখের মুল শর্ত কি জানো?......”


২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×