somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী" !!! আবার ও সেই পুরানো বোতলে পুরানো মদ !!!

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হলের গিয়ে আরো একখানা বাংলা সিনেমা দর্শনের মাধ্যমে দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের আগ্রযাত্রায় আরো একটি গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখলাম। বিভিন্ন সংবাদ এ “একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী" নিয়ে যেই পরিমাণ পাম পট্টি দেয়া হইছে, তা তে সিনেমাখানা সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরী হতে বাধ্য। তাই নিজের জীবনের মূল্যবান আধাঘন্টা নষ্ট করে একখানা মুভি রিভিউ খাড়া করাইলাম। আশা করি রিভিউ পরে সিনেমাখানা সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা আসবে। সকলকে ধন্যবাদ

“ইন্সেপশান” মুভিখানা দেখতে গিয়ে প্যাচে পড়েন নাই, এমন দর্শক পাওয়া বিরল। কে কখন কোথায় কি স্বপ্ন দেখতেছে, কোন স্তরের স্বপ্ন, স্বপ্ন ভাঙ্গছে কি ভাঙ্গে নাই, তা বুঝার জন্য অনেকেই দুই বার তিন বার চার বার করে মুভিখানা দেখেছেন। “একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনীর” লেখক বোধকরি সেই তিন চার বার “ইনসেপশান” মুভিখানা দেখার দলে ছিলেন। তাই তার উগ্র প্রভাব এই চলচ্চিত্রের মধ্যে বিদ্যমান। সিনেমার আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত দর্শককে যে বিভিন্ন স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাইতে হইছে, তা মোটামুটি “ইনসেপশান” কে ও হার মানাবে। “একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী” পুরাই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নের গোজামিলে ঘেরা সেই পুরানো বোতলে পুরানো মদ। দুই নায়ক এক নায়িকা (যদিও সিনেমার মধ্যে আরো একজন সুন্দরী নায়িকার উপস্থিতি ছিলো, কিন্তু প্রযোজকের বাজেট ঘাটতির কারণে ই হোক আর পরিচালকের অনিচ্ছার কারণেই হোক, পুরা সিনেমাতে কিছু ন্যাকামি ছাড়া তাকে আর কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় দেখাযায় নি) দুই নায়কের হাতাহাতি, পিতা মাতার মধ্যে যেকোনো একজন খুন, ৭/৮ খানা গান, একজনের ভাড়ের মাধ্যমে সহ্যের সীমার বাইরের কিছু ভাড়ামি, আর সব শেষে নায়ক নায়িকার মিলনের মাধ্যমে সিনেমার শুভ সমাপ্তি, এ যেন সেই প্রস্তর যুগের থেকে শুরু হয়ে আসা কাহিনীরই পুরনাবৃত্তি !!!

সিনেমার পরিচালকের বুদ্ধির প্রশংসা করতেই হয়। ঠিক যেই মুহূর্তগুলাতে হলের দর্শক টিকিটের একশত টাকার মায়া ত্যাগ করে হল থেকে ওয়াক-আঊট করার চিন্তা করতেছিলো, ঠিক সেই মূহূর্ত গুলাতেই পরিচালক জয়ার অপরূপ সুন্দর মুখখানা গানের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাংগেল এ দর্শকদের সামনে উপস্থিত করে দর্শকদের সিটে বসে থাকতে বাধ্য করে। তবে সমস্যা একটা ই, হাতে শুধু মাত্র ট্রাম্প কার্ড নিয়ে খেলতে গেলে যা হয়, ট্রাম্প কার্ড শেষ হওয়ার পর পরিচালকের হাত পুরাই শূন্য। পুরা সিনেমাতে জয়া আহসানকে দেখা ছাড়া না আছে কোনো কাহিনী, না আছে কোনো অ্যাকশন, না আছে কোনো থ্রিল, না আছে কোনো আকর্ষণ। সিনেমার নাম “একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী” না হয়ে “জয়া আহসান ও কিছু স্বপ্ন” হলেই মনে হয় ভালো হতো।

সিনেমার ট্রেইলার দেখে অথবা একটি মাত্র গান শুনে যে কোনো মতেই বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, তার প্রমাণ আরো একবার পেলাম। সিনেমার “আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো” গানখানা শুনে যেই পরিমাণ বিমোহিত হয়েছিলাম, পুরা সিনেমার হাজার হাজার গান শুনে ঠিক সেই পরিমাণ ত্যাক্ত বিরক্ত হলাম। পুরা সিনেমাতে বোধ করি ডায়লগের থেকে গানের পরিমাণ বেশি। যদিও সিনেমার ডায়লগের খুব বেশি গুরুত্ব খুঁজে পাওয়া গেলো না, কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত শতকরা ৯৯ ভাগ সিনেমাতে ব্যবহৃত ডায়লগ সমূহ ই এই সিনেমাতে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে স্ক্রিপ্ট লেখক আধুনিক মানুষ বিধায় নতুন শব্দ বলতে শুধুই “ফেসবুক” শব্দটার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো, যদিও ফেসবুক এর ব্যবহার সম্পর্কে মনে হয় কাহিনী লেখকের তেমন কোনো ধারণা নাই।

বাংলা সিনেমা হবে, আর সেখানে মেডিকেল সাইন্স মিরাকল থাকবে না, এইটা চিন্তার ও বাইরে। এই “একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী” ও তার বাইরে নয়। তবে মিরাকলের সংখ্যা এই সিনেমাতে কিঞ্চিত বেশি। গুলি পেট দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যাওয়া, চাক্কু দিয়ে পেট এফোঁড় ওফোঁড় হওয়া, ফাটা মাথায় ব্যান্ডেজ করতে গিয়ে ব্রেন টিউমার ধরা পড়া ও সাথে সাথে সফলভাবে তা অপারেশন করে রুগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে ফেলা, এই সবই এখন সম্ভব মেডিকেল মিরাকলের নামে। ছোটবেলায় শুনছিলাম, ব্যকরণে কিছু না মিললে সেইটারে নিপাতনে সিদ্ধের মধ্যে ফালাইয়া দিলে ই হয়, আর এখন বড়বেলায় আইসা বাংলা সিনেমা দেখতে গিয়ে বুঝলাম, মরা মানুষরে জিন্দা করতে হইলে সেইটারে শুধুমাত্র মেডিকেল মিরাকল এর মধ্যে ফালাইয়া থুইলে ই চলে।

পরিশেষে একটা কথা ই বলার আছে, সিনেমার মধ্যে অজস্র স্বপ্নের প্যাচ ও মেডিকেল মিরাকল বিদ্যমান। তাই কেউ যদি এই সিনেমা দেখার আশা করেন, অবশ্যই সাথে একটা কলম ও খাতা রাখবেন নোটা রাখার জন্য। কারণ সিনেমা কখন কার স্বপ্ন থেকে কার স্বপ্নে প্রবেশ করবে, যে কখন মইরা গিয়া আবার জিন্দা হয়ে ফেরত আসবে, তা মনের রাখার জন্য শুধুমাত্র ব্রেনের কর্মদক্ষতার উপর নির্ভর করলে ধোঁকা খেতে হবে। তাই সাথে খাতা কলম রাখুন, আর সিনেমাখানা প্রাণ ভরে উপভোগ করুন। হলে গিয়ে সিনেমা দেখুন, নিজে মরুন কিন্তু দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচান !!!

বি.দ্র. কোন শ্রেণীর দর্শকরা এই সিনেমাটি দেখতে যাবেন –
১. জয়া আহসানের ডাই হার্ড ফ্যান
২. “ইনসেপসান” মুভির ফ্যান
৩. মালয়েশিয়া ঘুরতে যেতে চান, কিন্তু টাকার অভাবে যেতে পারছেন না, এমন ভ্রমণ-প্রেমী
৪. সিনেমা নয়, সিনেমা হলের তিন ঘন্টাই যাদের জন্য মুখ্য তারা !!!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×