১২ জানুয়ারি ২০১৩:
শফিক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। সাভারের এই 'বিলাসী' সিনেমা হলটাতে সে মোট ১২ টা ছবি দেখেছে, সবগুলাই একশানধর্মী মারমার-কাটকাট, এককথায় সিরাম! তবে আজকের সিনেমার কাহিনীটা রোমান্টিক ও বেশ কঠিন। এক নায়িকার দুই নায়ক, দুইজনই নায়িকাকে ভালবাসে আবার নায়িকাও দুইজনকেই ভালবাসে, কোন সমাধান দেখা যাচ্ছে না! এটাই মূলত দুশ্চিন্তার কারণ! হঠাৎ কারেন্ট চলে যাওয়ায় ছবি মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। শফিক পিছনে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে- 'ওই শালার বিটা ছবি চালু কর!' স্ক্রিনে ছবি চলতে শুরু করে। সামনের সারিতে বান্ধবীদের সাথে ছবি দেখতে আসা শেফালী পিছন দিকে একটু তাকিয়ে দেখে, মনে মনে ভাবে- 'আল্লা কী সাহসী লোকটা, উনি না থাকলে আইজকে মনে হয় ছবিখান দেহনই হইত না!' দুজনের চোখাচোখি হয়। ছবি শেষে শফিকই শেফালীর দিকে এগিয়ে যায়। শফিক সরল মনে বলে ওঠে- 'তুমি মালেক স্যারের গার্মেন্টসে কাম হর না! তোমার নাম্বারহান দেও তো!'
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩:
শফিকের সিমফনির ওপাশ থেকে ভেসে আসছে একটা মিষ্টি কন্ঠের গান- 'আইজ পতি রাতে জেগে তাহি তুমার আশায়, তুমি চলে গেছ তাই বিরহের গান গাই ঘুম নাই দুটি চোখে তুমার আশায়...' এপাশ থেকে শফিকও বেসুরো গলায় গেয়ে ওঠে- 'ও বন্দু লাল গুলাপি কই রইলারে, এস এস বুকে এস মনরে...'
২৭ মার্চ ২০১৩:
সারাদিনের কাজ শেষে ক্লান্ত দেহে দু'জন একসাথেই বাসায় ফেরে। নতুন সংসার, খাটটা এখনো ঘরে তোলা হয়নি, ফ্লোরে বিছানো চাদরেই শেফালী সকালের পানি দেয়া ভাতে আলুর তরকারিটুকু ঢেলে দেয়। শফিক সরল গলায় ডাক দেয়- 'কাছে আইসা বস'। শেফালীর মুখে ভাত তুলে দেয় শফিক। ভালবাসা মাখামাখি হয়ে থাকে পান্তা-ভাত ও আলুর তরকারিতে।
২৪ এপ্রিল ২০১৩:
সেলাই মেশিনে হাত চলতে থাকা শেফালীর গলা বেয়ে টপটপ করে ঘাম ঝরছে। দুরে কাপড় প্যাকেটিং করতে থাকা শফিক খানিক বাদে চেয়ে চেয়ে নিজের বউটাকে দেখছে, প্রতি ফোটা ঘাম শফিকের হৃদয়টাকে দুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎই বিকট শব্দে কানে তালা লেগে যায়, চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসে। শফিক দৌড়ে এসে শেফালীকে দু'হাতে জাপটে ধরে, শফিকের সরল আকুতি- 'শেফালী আমারে শক্ত কইরা ধইরা রাহ, ছাইড় না সোনা।'
২৪ এপ্রিল ২০১৪:
প্রথম আলোর শিরোনাম- "শোকের দহনে স্বজনেরা"। নয়া দিগন্তের শিরোনাম- " বছর পূর্তিতে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় রানা প্লাজা"। শফিক শেফালীর কোন স্বজন কি ছিল? এক বছর পুর্তিতে একটা আনুষ্ঠানিক শোকের প্রকাশের জন্যে তাদের খুজে বের করাটা দরকার না?