somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমুভক্তের জোছনারাত

০৩ রা মে, ২০১৪ রাত ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটু আগে বৃষ্টি থেমে গেছে। আকাশটা পরিষ্কার। রাস্তায় পানি জমে আছে, কালো রঙ্গের এক পাজেরো আমার পা থেকে মাথা অবদি ভিজিয়ে সাই করে চলে গেলো। আশ্চর্যজনক বিষয় হল, আমি পেছন থেকে 'শালা' বলে চেঁচিয়ে উঠতেই গাড়িটা থেমে গেলো এ ধরণের পরিস্থিতিতে সাধারণত চালকেরা গাড়ি থামায় না। কালো রঙ্গের গ্লাসের ভেতর থেকে মাঝবয়েসী এক লোকের মাথা বেরিয়ে এলো, গ্লাসের ফাক দিয়ে পিছনের সিটে কড়া মেকআপ দেয়া এক মহিলা ও ছিপছিপে গড়নের এক তরুণীকে দেখা যাচ্ছে বউ আর শালী হবে হয়তো। লোকটা কর্কশ গলায় বলে উঠলো- 'কিইসে?' আমি বললাম- 'দেইখা চালাইতে পারস না? থাবড়ায়া দাত ফালায় দিমু বেয়াদব কোথাকার।' লোকটার কান লাল হয়ে ওঠে। লোকটাকে অধিক শোকে পাথর অবস্থায় রেখে আমি আমার শায়লা খালার বাসার গলিতে ঢুকে পড়লাম।

খালাদের বাসার ডায়নিং টেবিলে আমার জন্যে খাবার দেয়া হয়েছে। আয়োজন অতি সামান্য ভাত, ডাল, আলুভর্তা আর শুকনা মরিচ দিয়ে ডিমভাজি। কোন এক বিচিত্র কারণে এ বাসায় শুকনা মরিচ দিয়ে ডিমভাজি করা হয় খালি পেটে এই ডিমভাজি, আলুভর্তা আর ডাল দিয়ে ধোয়া ওঠা গরম ভাত আমার কাছে বেহেশতি খাবার যদিও বেহেশতে শুকনা মরিচ দিয়ে ডিমভাজি আর আলুভর্তা পাওয়া যাবে কিনা আমার জানা নাই। প্লেটে ভাত তুলে দিতে দিতে নীলা হঠাৎই বলে ওঠে,
-ভাইয়া দাড়ি রাখছ ক্যান? তোমারে তালেবান তালেবান লাগে।
-হলিউডের মুভি দেখিস না? নায়কদের খোঁচা খোঁচা দাড়ি, হলিউডের নায়করা কী সব তালেবান?
-সব বিষয় নিয়া ফাজলামি করবা না।
নীলা নামের অদ্ভুত সুন্দরী এই মেয়েটা আমার শায়লা খালার মেয়ে। নীল কামিজে আজ তাকে নীল পরীদের মত লাগছে এবং এই নীলপরীর আমার প্রতি এক বিশেষ দুর্বলতা আছে যদিও সে তা গোপন রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। দরজায় ধুপধাপ আওয়াজ হচ্ছে, নীলা দরজার দিকে এগিয়ে দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে চারজন পুলিশ প্রবেশ করে এদের মধ্যে ওয়াকিটকি হাতের পুলিশটাকে আমার খুব পরিচিত মনে হয় কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে করতে পারছি না। আমার বেহেশতি খাওয়া থামিয়ে দিয়ে পুলিশ অফিসারটা জিজ্ঞেস করে,
-এইযে, ইউ, কি নাম আপনার?
-বাবু।
-আমাদে সাথে আপনাকে যেতে হবে।
আমি অফিসারের সাথে বেরিয়ে যেতে যেতে ক্ষেয়াল করলাম আমার পর্দানশীন খালা মুখে ওড়না গুঁজে অন্দরমহল থেকে বেরিয়ে এসেছে।

আমাকে কী কারণে পুলিশভ্যানে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। সেই পাজেরোওয়ালা কী কোন রিপোর্ট করেছে নাকি শিবির সন্দেহে ধরেছে। একেতো মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি তারপরে আবার পাঞ্জাবী। পুলিশকে কী বলব স্যার এইটা শিবির পাঞ্জাবী না হিমু পাঞ্জাবী। যদিও পকেট আছে, গত ঈদে আমাকে সাথে নিয়ে গ্রামীণ চেক থেকে খালু এই পাঞ্জাবীটা কিনে দেয় অনেক কষ্টে হলুদ কালারটা পাওয়া গেছে কিন্তু পকেট ছাড়া পাওয়া যায় নাই।হঠাৎই আমার মনে পড়ল এই পুলিশ অফিসারটা আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ড গতকাল তার স্ত্রীর প্রেগন্যান্ট বিষয়ক একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিল, এ কারনেই তাকে চেনা চেনা লাগছিল। আমি পুলিশ অফিসারের মুখের দিকে তাকিয়ে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলে উঠলাম- 'স্যার আমার পিছে সময় নষ্ট না করে স্ত্রীকে সময় দিন তার এখন আপনার সঙ্গ প্রয়োজন।' অফিসার তার বিস্ময় ভাব লুকানোর চেষ্টা করে তারপরেও মুখটা বিস্ময়ে হা হয়ে ওঠে। ঢাকা শহরের পুলিশদের মুখে সাধারণত বিস্ময়ভাব দেখা যায় না তাদের মুখে দুই ধরণের ভাব থাকে বিরক্তিরভাব ও তেলতেলে ভাব।

দেয়ালে টাঙানো ঘড়িতে ১১ টা ২২ বাজে। পুলিশ অফিসারের সামনের টেবিলে একটা প্রিজে আধখাওয়া বাটারবান ও এককাপ চা, পুলিশ অফিসার খুব মনোযোগ দিয়ে সেই চার কাপে মাছির সাতার কাটা দেখছেন। তার মাথার উপরে বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রীর ছবি টাঙ্গানো, বঙ্গবন্ধুর ছবিটা একটু নিচ দিকে ঝুকে আছে তিনিও মনোযোগ দিয়ে মাছির সাতার কাটা দেখছেন। সাঁতার দেখা বন্ধ করে পুলিশ অফিসার বলে উঠলো,
-উপর লেভেলে কোন ভাই বেরাদার আছে? থাকলে ফোন দেন এরপর বিদায় হন।
-আছে।
-কে?
-আনোয়ার দর্জি।
-ফাজলামি করেন? সে কে?
-আমার চাচা, অনেকের বাবা।
-অনেক বিটলামি করসেন, এইবার কিন্তু মাইরা টেঙ্গি লুলা কইরা দেব।
-বিটলামি না, পুরান ঢাকার পীরে কামেল আনোয়ার শাহ দিনে দর্জি দোকান চালায় আর রাতে দরবারে বসে আমি তার দোকানে যাই তাই তিনি আমার চাচা আর যারা দরবারে যায় তিনি তাদের বাবা।
পুলিশ অফিসারের চোয়াল ঝুলে পড়ে, মোলায়েম কন্ঠে বলে ওঠে- 'আপনে আগে বলবেন তো আপনে বাবাজীর পরিচিত এরপর যেদিন বাবাজীর কাছে যাবেন আমার স্ত্রীর কথা একটু বলবেন।' আমার এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে এই অফিসারটি পৃথিবীর সবচেয়ে কিউট পুলিশ অফিসার।অফিসারের একটা ছবি তুলে রাখতে পারলে ভালো হয় পীর বাবাজীর নামে খোলা ফেইসবুক পেজে আপলোড দিতে হবে নিচে লিখে দিতে হবে "বাবাভক্ত এই কিউট পুলিশ অফিসারটির জন্যে কয়টি লাইক? লাইকের সংখ্যা তাতে হাজারখানেক ছাড়িয়ে যাবে যদিও আমার একাউন্টটা বেশিরভাগ সময়ই নীলা চালায়।

আমি এখন হেটে বাসায় ফিরছি যদিও পুলিশ অফিসার আমার হাতে আধখাওয়া বাটারবন ধরিয়ে দিয়ে এক সার্জেন্টকে ডেকে দুইশ টাকা দিয়ে বলেছিল ভাইরে একটা সিএনজিতে উঠায় দিয়া আস। এত রাতে সিএনজি পাওয়া যায়নি, দুইশ টাকা সার্জেন্ট রেখে দিয়েছে। রাতের ঢাকা শহর অতি বিচিত্র। রাস্তার পাশে এক কুকুর আমার দিকে তাকিয়ে মুখ দিয়ে অদ্ভুত এক শব্দ করে আমি আমার হাতের আধ খাওয়া বাটারবানটা কুকুরটার দিকে ছুড়ে দিতেই কুকুরটা দু'পা পিছিয়ে ব্রেক কষে তারপর বাটারবানটা মুখে নিয়ে লেজ নাড়তে নাড়তে চলে যায়। রাস্তার পাশে কোন ল্যাম্পপোস্ট জলতে দেখা যাচ্ছে না তারপরেও রাস্তা অনেক আলোকিত। আচ্ছা আজ কী জোছনা!

হিমুভক্তদের জীবনের প্রতিটি রাতই জোছনারাত।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×