ধানমন্ডির সিটি হাসপাতালের আই.সি.ইউ- এর সামনে একটা ব্যাপক আয়োজন জমে উঠেছে কারণ ডিউটি ডাক্তার একটু আগেই আরিফের পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছেন হ্যাপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত আরিফ রাত ৪ টার মাঝেই ক্লিনিক্যাল ডেড হয়ে যাবে, আপনারা আয়োজন শুরু করেন।
এই মাত্র আরিফের শশুর বাড়ির লোকজন এসেছেন এবং আরিফের শাশুরি তার নিজ মেয়েকে জড়িয়ে ধরেই কেঁদে বলে উঠলেন, "আমার মেয়ের একি সর্বনাশ হলরে...আমি আগেই কইসিলাম ঐ খান বাড়ির ছেলে বিয়ে করিসনে!
আরিফের ছোট ভাই ইতিমধ্যে একটা টুপি পড়ে তজবি হাতে লাইলাহা বলে কান্না শুরু করে দিয়েছে্ন। ডিউটি ডাক্তার ২ বার ধমকও দিয়ে গেছে, "এইসব বাইরে গিয়ে করুন, আই.সি.ইউ- এর সামনে থেকে সরে যান।" ছোট ভাই অবশ্য ডাক্তারের ধমকে ওঠেননি বরং রাত ৪ টা পর্যন্ত যখন কোন খবর আসেনি তখন সে নিজেই উঠে চলে গেছেন মোড়ের দোকানে একটা সিগারেট খেতে!
কিছুক্ষন বাদে বাদে কাছে-দুরের অনেক আত্নীয়ই আসছেন এবং প্রত্যেকেই আরিফের স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে এক প্রকার জোর করেই কাঁদিয়ে দিয়ে আবার চলেও যাচ্ছেন!
আরেক গ্রুপ গোল হয়ে বসে রোগীর চিকি্ৎসায় পরিবারের ত্রুটি নিয়ে ফিস ফিস করে আলাপ করছে এবং রাত বাড়ার সাথে সাথে অনেকেই দেয়ালে হেলান দিয়ে ঝিমিয়ে পড়ছে তবে এদের মাঝে ইয়াংমত এক ভদ্রমহিলা বুদ্ধিমানের মত তার ওড়না ফ্লোরে লম্বা করে বিছিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন!
আরিফের মৃত্যু রাত ৪ টায় নয়, সকাল ৭ টায় হয়েছে এবং লাশ বাসায় আসার পর এখানেও একটা ছোটখাট আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। দুর-দুরান্ত থেকে লাশ দেখতে আসা মুরব্বীদের জন্যে জিরোক্যাল দিয়ে চা বানানো হচ্ছে কারণ বেশীরভাগেরই ডায়াবেটিকস্ আর যেই গ্রুপ লাশের সাথে কবরস্থান পর্যন্ত যাবে তাদের জন্যে জাস্ট গরুর মাংস আর ডাল রান্না হচ্ছে কারণ দুরের পথে কী খায় না খায়!
আমাদের জীবনে মেগাসিরিয়ালের মত কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড ও স্লো মোশনের দরকার কারণ এ দু'য়ের সমন্বয় ছাড়া আমাদের বুকের কোনে ব্যাথা জমাট বাধে না, চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে না দু'ফোটা বিশুদ্ধ জল।