somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাষাণ: একদা কোকিল কাক হতে চেয়েছিলেন।(চলচ্চিত্র সমালোচনা)

৩১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“দেশা-দ্য লিডার” খ্যাত পরিচালক সৈকত নাসির; প্রথম ছবির জন্য যিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন তার সিনেমার উপর একটা আস্থা ছিল আমার। কিন্তু পাষাণ সিনেমাটি দেখার পর সে আস্থা কিছুটা কমে এসেছে। কারন “দেশা-দ্য লিডার” এর মত চলচ্চিত্র নির্মাণ তৎকালীন সময়ে খুবই সাহসী একটা উদ্যোগ ছিল। আর এখন যখন মানুষ আবার কিছুটা সিনেমা হল মুখো হচ্ছে ঠিক তখন পাষাণের মত চলচ্চিত্র নির্মাণ এর যৌক্তিকতা খুজে পাচ্ছি না।


যাইহোক, পাষাণ দেখার পর একটা ব্যাপার খুব ভাবাচ্ছে আমাকে। ইদানীং, বাংলা চলচ্চিত্রে একটা নতুন ধারা দেখছি সেটা হচ্ছে গল্পের কোন না কোন চরিত্র হয়ত নায়ক অথবা খলনায়ক নিজ হাতে নিজ বাবাকে খুন করছে। শিকারি তে শাকিব খান তার বাবাকে গুলি করলেও মারতে পারে না; বস -টু সিনেমায় নায়িকা নুসরাত ফারিয়া ও খলনায়ক ইন্দ্রনীল দু’জনই নিজের বাবাকে খুন করেন। ঢাকা আ্যটাক এ খলনায়ক নিজের বাবা, মা, চাচা সব নিজের হাতে খুন করে। আর সর্বশেষ পাষাণে দেখলাম নায়ক নিজের হাতে বাবাকে খুন করছে। জানি না এটা “দাদাইজম” (Dadaism) এর মত সচেতন কোন মুভমেন্ট নাকি অবচেতন মনেই একটা বিষ ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। এইতো বছর পাঁচেক আগেও বাংলা সিনেমার একটা কমন বিষয়বস্তু ছিল নায়িকা বা নায়কের বোন বাঁচাও বাঁচাও বলে দৌড়াবে আর কিছু ধর্ষক ক্ষুধার্ত কুকুরের মত তার পিছু পিছু ছূটবে। এ দৃশ্যগুলোই হয়ত ধীরে ধীরে দেশে একটা ধর্ষক শ্রেণী সৃষ্টি করেছে যারা এখন নির্বিচারে ধর্ষণ করে যাচ্ছে। তাই ভয় পাচ্ছি সিনেমার এই দৃশ্যগুলো না আবার বাবা হত্যাকারী একটা জেনারেশন তৈরি করে ফেলে কারন প্রথম চৌধুরী বলেছেন “ব্যাধিই সংক্রামক স্বাস্থ্য নয়”। এ অংশটা আমার সমাজ সচেতনতা মূলক ব্যক্তিগত মতামত এতে চলচ্চিত্রের বা চলচ্চিত্রকারের কিছু আসে যায় না।

তাই চিত্রনাট্য প্রসঙ্গ আসা যাক। পাষাণ এর চিত্রনাট্য প্রচন্ড মাত্রায় দুর্বল ছিলো। কয়েটা সিনেমার গল্প এক সাথে জুড়া - তালি দিয়ে নতুন গল্প উৎপাদ এর একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস ছিল। চিত্রনাট্যে খুব নতুন বা চমকপ্রদ কিছু ছিল না। বিরতি পর্যন্ত তেমন কোন গতিই ছিলো না নিজেকে পাষাণ বানিয়ে হলের সিটে বসে ছিলাম। বিরতি’র পর কিছুটা গতি আসলেও তা পরিমিত মাত্রায় ছিল না। চিত্রনাট্যের দুর্বল দিকগুলো ছিল - ওম এর অতিমানবীয় উপস্থাপন। কোন যৌক্তিক কারন ছাড়া মিম ওমের প্রেমে পড়ে যাওয়া, যদিও প্রথমে মনে হবে মিম বাঁচার জন্য অভিনয় করছে কিন্তু শেষে বুঝা যায় যে মীম সত্যিই ওমের প্রেমে পড়েছিল। আবার সে আশৈশব একজনের জন্য অপেক্ষা করছিল। একজন পুলিশ অফিসারকেও আবার সে বিয়ে করবে বলে ঘুরাচ্ছে। পুরাই আউলা এই অংশটা। গল্পে তাড়াহুড়ো খুব বেশি ছিল তাই কোন চরিত্রই ঠিকমত বিকশিত হতে পারে নি। ওম বিভিন্ন কাঁচা লংকা টাইপ মেয়েদের নিয়ে ঠিকি ফুর্তি করতে পারে কিন্তু মিম বা মিশার বোনের সামনে দাঁড়ালেই তার ব্যক্তিত্ব আকাশ ফুঁড়ে নাযিল হয়। ওমের বাবার কি সমস্যা ছিল তা যেকোন প্রাপ্ত বয়ষ্ক পুরুষ মানুষই বুঝতে পারবে সেখানে ওম তার খালার থেকে এত বছর পর কি এমন লুকানো সত্য শুনে ফেলল যা শুনে সে বুঝতে পারল যে তার বাবা সম্পূর্ণ নির্দোষ? আর সাথে সাথে বাবার প্রতি শ্রদ্ধায় তার চোখে পানি চলে আসল! ডাবল ডেকার বাস নিয়া কেউ অপহরণ করতে আসে এমন অভিনব আইডিয়া আর কোথায় পাব জানি না। সুড়সুড়ি দিয়ে হাসানোর একটা প্রবণতা (বিশেষ করে মিমের সাথে তার বসের কথোপকথন অংশটুকু) বিরতি’র পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত খুব ভালো ভাবেই বিরাজ করছিল সিনেমা জুড়ে।

এবার অভিনয় ও চরিত্রায়ন প্রসঙ্গে আসা যাক। পাষাণ সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন - ওম, বিদ্যা সিনহা মিম, মিশা সওদাগর, বিপাশা কবির, সাদেক বাচ্চু, শাহেদ আলী, ইলোরা গহর, মিজু আহমেদ, চিকন আলী, শিমুল খান, শামিম, নাদের চৌধুরী, তানভীর তনু প্রমুখ। ওমের অভিনয় ভালো ছিল। লম্বা ছিপছিপে শরীরে এই চরিত্রটার সাথে খুব ভালো মানিয়েছে। তার কন্ঠ চরিত্রের দাবি অনুযায়ী ভরাট না তাই কিছুটা আলগা আলগা লাগছিলো। তবে তার ডায়লগ খুবই কম ছিল যা প্রশংসনীয়। এ্যাকশন স্টাইলটা ভালো ছিল। মিমের অভিনয় প্রথম দিকটাতে খুবই কাঁচা ছিল তবে তাকে অপহরণের পর থেকে কাঁপিয়ে অভিনয় করেছেন। মিশা সওদাগর বরাবরই উচ্চমানের অভিনেতা এখানেও তাই ছিলেন। নাদের চৌধুরী কিছুতেই তার চরিত্রের ভিতর ঢুকতে পারছিলেন না। সাদেক বাচ্চু আর মিজু আহমেদ এর চরিত্রটা পর্যাপ্ত পরিমান সময়ই পায় নি। বিপাশা কবিরের চরিত্র বিন্যাস একদমই অযৌক্তিক তবে তিনি এ আযৌক্তিক চরিত্রটাকে কিছুটা হলেও যৌক্তিক করতে পেরেছেন তার অভিনয় দিয়ে। ইলোরা গহর বরাবরই শক্তিমান অভিনেত্রী এখানেও তিনি নামের প্রতি সুবিচার করেছেন।

তবে সিনেমার প্রশংসনীয় দিকগুলো ছিলো সিনেমাটোগ্রাফি, লাইটিং আর এডিটিং। এই অংশে খুবই সফল সিনেমাটি। তবে মন ছুঁয়ে যাওয়ার মত কোন গান ছিল না। আবহ সংগীতও মনকে খুব একটা টানে নি।

সবশেষে বলতে চাই, “পাষাণ” পরিচালনায় পরিচালক “সৈকত নাসির” হয়ত নিজের রুচির প্রতিই পাষাণ হয়েছিলেন। তাই নিজের রুচিকে একটু নিচে নামিয়ে এনে আমজনতার সিনেমা বানাতে চেয়েছেন। উনি কতটা সার্থক হয়েছেন সেটা দর্শকের বিচার্য, আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায় তিনি সফল ছিলেন না বরং “কোকিল কাকের কা কা কন্ঠ নকল করতে গিয়ে ব্যার্থ হয়ে নিজের কুহু সুরটাও হারিয়েছে” বলেই মনে হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৪১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×