somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কে প্রথম ভালোবেসেছি?

২৭ শে জুলাই, ২০১০ রাত ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- এ্যাই ভালো করে ছবিটা দেখনারে ভাই আমার।জানিস মেয়েটা খুব ভালো।আমার বিয়ে হলো এখন ৬বছর চলছে,আমার শশুড়বাড়ির পাশে ওদের বাড়ি কিন্তু জানিস আমি মেয়েটাকে কোন দিন দেখিনি। তুই দেশে আসবি, মা বলেছে এবার তোকে বিয়ে দিবে,তাই আমার ননদ মেয়েটাকে দেখালো।রুমারাতো ওকে নাকি ছোট্ট থেকে দেখে আসছে।ওদেরকে নাকি ফুপি করে ডাকে.....খুব আনন্দাগ্রহে কথাগুলো বলছিলো রেশমা।

সাইফ বালিশটা কানে চেপে ধরে কিছুটা বিরক্ত সুরে বলে উঠলো............
- আচ্ছা!আচ্ছা!অনেক হয়েছে এবার তোর ক্যাঁচাল বন্ধ করতো X(( রেশমা।সকাল হলেই তোর দেখি পাত্রী খোঁজার বিজনেস আরম্ভ হয়ে যায়।গত দু সাপ্তাহে পাঁচ টা মেয়ে দেখিয়েছিস।একজন শোড়ষী তো আরেকজন পয়ঁত্রিশের কোঠায়,একজন বেশি পন্ডিত তো আরেক জন ন্যাকা।আরেকজনের ফ্যামিলি তো আমার বিদেশে ব্যবসা-পাতির খবর নেওয়ার জন্য তিন দিনের সময় চেয়েছে।যত্তসব পাগলের দল। তোর কি সংসারের কোন কাজ করতে হয়না।বাড়িতে আসার পর থেকে দেখছি কোন না কোন বাহানা বানিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে আসিস........ বলেই আবারও ঘুমাতে চেষ্টা করলো সাইফ।

রেশমাও নাছোড়বান্দা,একটু অভিমান আর আদরমিশ্রিত কন্ঠে তার ছোট ভাইটির হাত-পা ধরে টানতে টানতে বলতে লাগলো....
- আমি না দৌড়ালে তোর বিয়ের জন্য কেউ দৌড়াবেনা বুঝলি।ও... জানিস মেয়েটা নাকি খুব ভালো একটা চাকরিও করে।

কথাটি শুনে সাইফ মুখ থেকে বালিশটা সরিয়ে হাসতে হাসতে বললো........
- তাহলেতো ভালোই হলো আমারও আর বিদেশে ভালো লাগছেনা, ব্যবসা-পাতি গুছিয়ে দেশে চলে আসি, মেয়েটার টাকা দিয়ে আমার পকেট খরচ চললেই হলো।ভাইয়ারাতো সংসারের সমস্ত খরচ দিচ্ছে।;)
[কারন সাইফদের যৌথ ফ্যামেলী। পাঁচ ভাই,দুবোন, মাতুল্য তিন ভাবী, চার মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে তাদের মায়ার সংসার।পরিবারের সবার ছোট বলে সংসারের দায়ভার কি জিনিস সে কখনোই বুঝেনি।]

দু ভাইবোনের দুষ্টোমির মাঝে বড় ভাবী চা হাতে এসে বলতে লাগলেন
- কী! মেয়ে দেখার কদ্দুর কি করলে?
- ভাবী বলোতো এই পাগলীকে আমাদের বাড়ীতে ঢুকতে দেয় কে?
বলেই সাইফ বড় ভাবীর হাত থেকে চা নিয়ে চুমুক দিলো।
সাইফের পাশে শোয়া ভাতিজা বলে উঠলো
-ছোট চাচ্চু বলে কি?ওকে আমাদের বাড়ীতে ঢুকতে না দিলেতো আমাদের মেইন গেইট কটকটি খাওয়ার টিন হয়ে যেত, আর আশে পাশের সবাই ভাবতো এলাকায় ভুমিকম্প হচ্ছে..হে..হে..হে :D
- হয়েছে আর তোমাকে পাকামো করতে হবে না।বাবুকে ধমক দিয়ে রেশমা বড় ভাবীকে বললো... -দেখনা ভাবী, সেই কখন থেকে বলছি ছবিটা দেখ, কেমন লাগে জানা,আর ও আমার কথায় পাত্তাই দিচ্ছে না।
বড় ভাবীও সাইফকে বুঝালেন... - শোন ভাই, তুমি এখন বড় হয়েছ, তোমার ও নিজেস্ব একটা মতামত থাকা দরকার, আর এমনও নয় যে তুমি আমাদের সাথে থাকছ,তোমার নতুন জীবন, নতুন সংসার শুরু হবে পরবাসে, তাই তো তোমাকে একটু বেশি জাষ্টিফায় করতে হবে।

এবার ছবিটা হাতে নিয়ে একপলক দেখে সাইফ বলে উঠলো....
- আরে একে তো আমি চিনি,এলাকার মেয়ে কিন্তু কোন দিন কথা হয়নি, আমাদের ৫/৬বছরের জুনিয়র হবে,ধুর ভাবী!এপিচ্চির সাথে কি কথা বলবো
- কি বললি তুই! রেশমা ক্ষেপে গেলো - আরে এখনকার পোলাপানরা দু/চার বছর প্রেম না করে বিয়েই করে না, আর তুই ঘন্টাখানেক কথা বলতে পারবি না..শোনো ভাবী, শোনো তোমার দেবরের কথা শোনো।
- শোন রেশমা তুই বেশি কথা বলবি না,তোর পাল্লায় পড়ে আমি কতগুলো মেয়ে দেখেছি, অথচ একটাকেও বিয়ে করিনি, ছিঃ ছিঃছিঃ না জানি মেয়েগুলো আমার সম্পর্কে কি ভাবছে?আমি জীবনেও ভাবিনি এতগুলো মেয়ের সাথে এমন আচরন করবো। সাইফ বললো/:)/:)

এবার দুভাইবোনের মধ্যে মধ্যস্থতা করে বড় ভাবী বললেন....
-ছবি দেখে মেয়েটাকে আমাদের মোটা মুটি পছন্দ হয়েছে,আর তোমার ও সময় কম,তাই বলছিলাম যদি তোমার মতামত বলতে , আমি আশিককে বলে সরাসরি দেখার জন্য একটা দিন ক্ষন করে নিতাম ।
- তোমাদের পছন্দ হয়েছে বেশ!আমি রাজি, কিন্তু এসব মেয়ে দেখাদেখিতে আমি আর নেই, আগে থেকে বলে দিলাম।কেজানে আগের গুলো কি ভাবছে!!
বলেই সাইফ বন্ধুদের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে ড্রেসআপ করে বেরিয়ে গেলো।
এদিকে রেশমা আর বড় ভাবী ওর কথা শুনে চাপা হাসিতে ফেটে পড়লেন।
--------------------------------------------------------------------

স্নিগ্ধ সকাল।
বারান্দায় নিজ হাতে গড়া ছোট্ট বাগানটার দিকে তাকিয়ে আছে তাজরীন, কিন্তু মনে মনে অরন্যচারীনি হয়ে উঠেছে সে।

গতকাল অফিস থেকে ফিরার পর ছোটখালা একটা ফটো হাতে হাপাতে হাপাতে বললো...
- তাজু দেখ! ছেলেটাকে যা লাগছেনা!একদম ফাটাফাটি।B-)
তাজরীন বললো...
- এ আর নতুন কি?তুমিতো যেকোন ছেলে দেখলেই ফেটে গলে পড়।;)
- আরে আগে শোন ওদের নাকি তোকে মোটামুটি পছন্দ হয়েছে,আপা দুলাভাইও ছেলেটার ছবি দেখে, ফ্যামেলী ব্যাকগ্রাউন্ড শুনে মোটামুটি রাজী আছে, এখন তোর একটা মত পেলে ছোকড়াটাকে একটু বাজিয়ে দেখতাম।:P
- আহাহা! কি কথা! ছোকড়া বাজিয়ে দেখার কথা বলে তোমাদেরও উদরপূর্তির ব্যবস্থা হোক আর কি। ওসব চিন্তা ছাড়ো খালা, এবারও হবে না,তোমার মনে নেই গত মাসেইতো এক বিদেশী আমাকে ছ্যাকা দিলো....কি যেনো বলে ছিলো! মেয়ে চাকরি করে, ফরোয়াড, পরে কোন ঝামেলা হলে ট্যাকেল দেওয়া যাবেনা.... হাহাহাহা B-)
- আরে ওটাতো একটা রামছাগল ছিলো..স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হলো বিশ্বাস আর সমোঝতা এরমাঝে আবার ট্যাকেল কিরে, কিভাবে কথা বলতে হয় তাও ঠিক করে জানেনা,উযবুক কোথাকারX((
- আর বলো না খালা, আমার লাগছে, ঔবেটাও ফাটাফাটি সুদর্শন ছিলো।:P

খালার সাথে দুষ্টমী করলেও সাইফের ছবিটাযে তার মনকে কিছুটা নাড়া দিয়েছে তার প্রমান মাঝরাতে চোখ থেকে ঘুম হাওয়া হয়ে যাওয়া,একটি শান্ত স্নিগ্ধ ভোর উপভোগ করা।পাত্রদেখা তার জীবনে এই প্রথম তা কিন্তু নয়,কতক ছেলেকে সে না করেছে, কিছু ছেলে তাকে রিজেক্ট করেছে।কিন্তু আজ তার কি হলো,চোখ থেকে ছবির চেহারাটা সরছেই না,এ কেমন অনুভুতি?একে কি ভাললাগা বলে? কিন্তু এযে একতরফা।
- না, আমি হারতে চাই না এভাবে ভাবা আমার উচিত না, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে একটু নড়ে বসলো আর মনে মনে প্রার্থনা করলো....
আমার জন্য যা ভালো, যা মঙ্গল তাই আমাকে দাও প্রভু।

মা তজবী হাতে বারান্দায় এসে তাজরীনকে দেখে একটু অবাক হলেন!
- কিরে অফিসে কোন ঝামেলা হয়েছে?
- না আম্মু! এমনিতে আজ খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো,তাই বারান্ধায় বসেছি।
- হ্যারে! ছেলেটাকে তোর কেমন লাগছে?যদি পছন্দ না হয় কোন সমস্যা নেই আমরা আগাবো না,তোর ভাইয়াও বার বার ফোন করে বলছে, তোর অমতে যেন আমরা কোন কিছু না করি।
মাকে জড়িয়ে ধরে তাজরীন বললো...
- না আম্মু, আমার কোন আপত্তি নেই তোমরা দেখতে পারো।চলো আজ নাস্তা বানাতে তোমাকে হেল্প করি।
মনের ঝড়তুফান মনে চেপে রেখে প্রাত্যহিক কাজে মনযোগ দেয় তাজরীন।

--------------------------------------------------------------------


এ কয়দিন সাইফের খুব ভালো সময় কাটলো।ছোটবেলার বন্ধুবান্ধবসহ ঘুরে আসলো কক্সবাজার, হিমছড়ি, সেন্টমার্টিন। সাগরের বিসালতা, বন্ধুদের ভালোবাসা,প্রকৃতির উদারতা সব মিলিয়ে সেএক অন্য রকম অনুভুতি।
পুর্নচাঁদে সাগর পারে তাদের মৌলিক গান ছিলো..........

"এই মুখরিত জীবনের চলার বাঁকে; অজানা হাজার কত কাজের ভীড়ে ছোট্ট বেলার শত রং করা মুখ, সুর তোলে আজও এই মনকে ঘিরে। ঝিনুক সামুকে ভরা বালুচরে ঢেউ-এর সাথে নেচেছি, রঙ্গিন স্বপ্নে গাঁথা স্মৃতির মালা সৈকতে ফেলে এসেছি"।

বিদেশ-বিভুয়ে ছয় বছরে সে কোনদিনই এভাবে জীবনের স্বাদ উপভোগ করে নি।
সকাল থেকেই গানটা তার মাথা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
- উহঃ না গানটা শুনতেই হবে, ভাবী........ বড়ভাবী তোমার কাছে কি পার্থের মুখরিত জীবন গানটা আছে? আরে!এত আয়োজন, আজ কি বাসায় কেউ আসছে?
-হ্যা..তুমিও এলে আর রেশমার শ্বশুড়বাড়ীর লোকজনকে বলেছি।বাচ্চাদেরও পরিক্ষা শেষ।আমিতো তোমার ভাইয়ার জীবন সাজাতে সাজাতে অস্থির, মেজোর কাছে দেখো,থাকতে পারে।
- মেজভাবী....... মেজ ভাবী....সাইফের চিৎকার শুনে ইমানী, মিলা, তুলি,সামিন,তাসিন,বাবু সবাই ওকে ঘিরে ধরলো।
- ছোটচাচ্চু আজ আমরা পার্কে যাবো,পার্কে যাবো।আমাদের পরিক্ষা শেষ।
সামিন,তাসিনও এসেছে।আমাদের পার্কে নিয়ে যাওনা।আর জীবনেও তোমার কাছে কিছু চাইবো না।/:)
- আরে বাবা! ঠিক আছে,পার্কেই তো যাবি,এতো দিব্যি কাটতে হবেনা, তবে আমার একটা শর্ত আছে, তোরা কিন্তু আর জীবনেও বড় হতে পারবি না, সবসময় এমন থাকতে হবে।
বাচ্চারা আনন্দে একসাথে চিৎকার করে বললো.....
- আমরা জীবনেও বড় হবোনা।

মেজভাবীর রুমে ঢুকতেই ছক্কা ছক্কা আওয়াজে তার মাথা ধরে গেলো।
বড়ভাই, সেজভাই, মেজ ভাবী, আশিকভাই, রেশমা,আশিক ভায়ের বোনেরা সবাই বিছানায় বসে লুডু ঘরের উপর উপুড় আছে।কেউ খেলছে কেউ খেলা দেখছে।কোন মতে মেজভাবীকে গানটা প্লে করার কথা বলে সেও বিছানার এককোনে জায়গা করে নিলো।দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে একটু রেস্ট নিয়ে সবাই মিলে বের হলো পার্কের উদ্দশ্যে।

--------------------------------------------------------------------

বাচ্চারাতো পার্কে এসে নানা রাইড পেয়ে একেবারে ছন্নছাড়া,মায়েরা আনন্দের মূহুর্ত গুলো ক্যামরাবন্ধী করতে তৎপর।
আশিক আর সাইফ বাদাম চিবিয়ে হাটতে লাগলো....
- আচ্ছা আশিক ভাই, এটানা আগে অনেক বড় মাঠছিলো,পার্ক হলো কবে?
শহরের বড় বড় ফুটবল ম্যাচ গুলোতো এখানেই হতো, আমিওতো কতবার এখানে মিলনস্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষ থেকে খেলতে এসেছিলাম।
- সবই বিজনেস.......
বলতেই আশিকের চোখ পড়লো পার্কের এককোনে গল্পরত দুটো মেয়ের উপর।আর সাথে সাথে হ্যাচকা টানে সাইফকে নিয়ে মেয়েগুলোর কাছে উপস্থিত।

- আরে তাজরীন যে! এখানে, আজ অফিসে যাওনি?
আশিকের হঠাৎ উপস্থিতিতে তাজরীন ভয় পেয়ে গেলো,তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো....
- ওহচ্ছে আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড নাসিমা, আজ ওর জন্মদিন, তাই একটু আরলী বের হয়েছি।আপনারা?
- আর বলোনা, গিয়েছিলাম শ্বশুড়বাড়ীতে, তারপর এখানে, তোমার রুমা ফুফিরাও এসেছেতো।ঔদিকে ফটোশেসন করছে।ও.. পরিচয় করিয়ে দিই...
ও হচ্ছে আমার একমাত্র শ্যালক সাইফ,ঔযে ফটোওয়ালা সাইফ।হে..হে..B-)
হাসি থামিয়ে আবারও মজা করে তাজরীন আর সাইফকে উদ্দেশ্য করে বললো.......
- কি ব্যাপার, তোমরা কি প্ল্যান করে এলে নাকি;) ? আমার কাছে কেমন যেন লাগছে..।আচ্ছা সাইফ তুমি এখানে একটু ওয়েট করো, আমি রেশমাদের ডেকে আনছি...বলে আসলে আশিক সাইফ আর তাজরীনাকে কথা বলার স্কোপ দিয়ে হাঁটা শুরু করলো।:P

এরকম অনাকাংখিত পরিস্থিতিতে সাইফ, তাজরীন, নাসিমা তিনজনই কিংকর্তব্যবিমুঢ হয়ে গেলো।তাজরীন নাসিমা যদিও একটু আগে সাইফকে নিয়ে কথা বলছিলো কিন্তু এখন একেবারেই চুপ।
পরিস্থিতি সামলে সাইফই প্রথম উইশ করলো নাসিমাকে....
- হ্যাপি বাড্ডে..মেনী মেনী হ্যাপি রিটার্নস্ ইন ইউর লাইফ।তো! আজ আপনাদের আর কি কি প্ল্যান আছে?
নাসিমা বললো ...- থ্যাংক্স,আসলে আমাদের তেমন কোন প্ল্যান নেই,এইতো কিছুক্ষন এখানে থাকবো,তারপর কে.এফ.সি, তারপর বাসায়।আপনিতো বাইরে থাকেন, তো দেশে কেমন ফীল করছেন?
- আসলে খুব ভালো লাগছে বলে বুঝানো যাবে না।প্রতিটা মুহুর্তই এনজয় করছি।কথার ফাঁকে ফাঁকে সে তাজরীনকে দেখছে..সাদাহলদে ড্রেসের শুভ্র আভায় মুখটা কেমন মায়াবী হয়ে উঠেছে।কোন কথা বলছে না মেয়েটা, শুধুই শুনে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে চোখে চোখ পড়তেই পলক ফেলে দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে।

কথা আর বেশি দূর আগালো না,রেশমা হঠাৎ অসুস্থ ফীল করায় তাজরীনের মুখ থেকে কোন কথা না শুনে বিদায় নিতে হলো তাকে।বিদায় বেলায় সাইফ বললো...ইটস্ নাইস টু মিট ইউ, আবার দেখা হবে:)
তাজরীন মৃদু হেসে বললো..আল্লাহ্ হাফেজ।

--------------------------------------------------------------------

আকস্মিৎ দেখা, আর টুকরো টুকরো কথা দুটো মনেই যে ঝড় তুলেছিলো তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।;)
আজ রাতটা বেশ বড় লাগছে সাইফের কাছে।চাঁদটা উত্তারাকাশে হেলে পড়েছে,কিন্তু চোখের পাতা হেলছে না। বাবুটাও দুষ্টুমি করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে, গানশুনলে কেমন হয়? ভাবা মাত্র হেড ফোনের জন্য ড্রয়ার খুলতে চোখ পড়লো তাজরীনের ছবিটার উপর।তারপর ছবিটা হাতে নিয়ে খুব ভালো করে দেখতে লাগলো।রেশমা প্রথম যেদিন ছবিটি দিয়েছিলো একপলক দেখেই রেখে দিয়েছিলো, কিন্তু আজ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে,তবুও মন ভরছেনা।

একসময় নিজের অজান্তেই ছবিটির সাথে কথা বলা শুরু করলো সে.....
- তুমি কিন্তু বেশ বড় হয়ে গেছো,তবে চোখদুটো আগের মতই আছে।
যেমনটি আগে দেখেছিলাম।নীল স্কুলড্রেসে সাদা স্কার্ফ মাথায় দিয়ে যখন স্কুল যেতে তোমাকে শান্ত,লক্ষী মেয়ে মনে হতো তবে কেমন যেন অসহায় লাগতো।
আর এখন? আজ তোমাকে অসাধারন লেগেছে। আচ্ছা তুমি আজ আমার সাথে কোন কথা বলনি কেন?
এমন সময় বাবু ঘুমের ঘোরে একটু নড়ে উঠে বললো....
- চাচ্চু সারাদিনইতো তোমার সাথে কথা বললাম এতো রাতে আবার কিX((
এবার সাইফ লজ্জা পেয়ে অন্য পাশে ফিরে ছবির সাথে আবার ফিসফিস করে বলত লাগলো.......
- আচ্ছা আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি?না ! তোমার চোখ কিন্তু সে কথা বলেনি।আমি কিন্তু তোমার চোখ পড়েছি।:) কিন্তু কথা..বলনি.....কে..
আস্তে আস্তে শেষ রাতের দিকে ছবিটা বুকের উপর দুহাতে চেপে ধরে হা করে ঘুমিয়ে পড়লো সাইফ।

ওদিকেও একই অবস্থা;)।আবেগের থেকে তাজরীনের মাথা বেশী কাজ করে বলে সে প্রেম ভালোবাসায় খুব একটা বিশ্বাসী না।মনেরটান বা ভালোলাগার ব্যাপারটা মানতে চাইনা, সে হারতে চাইনা বলে।কিন্তু নির্ঘুম রাত্রি যাপনের ফলে অফিসের ডেক্সে বার বার মাথা হেলে পড়ছে তাজরীনের।

সেজো ভাবী সাইফের রুম গোছাতে এসে তার শোয়ার কন্ডিশন দেখে হাসতে হাসতে বড় ভাবীদের টেনে নিয়ে এলো।তিন ভাবীর হাসির শব্দে হুড়মুড় করে উঠে বসলো সাইফ
- কি ! কি ! কি হয়েছে?বড়ভাবী তোমরা সবাই এখানে?
মেজো ভাবী বিছানা থেকে ছবিটা হাতে নিয়ে বললো....
- কিছু হয়নিরে !একটা ছ্যাচড়া চোর ধরেছি।:P তা কাল সে কি কি বলেছে, ২৪ ঘন্টা যেতে না যেতেই একেবারে বুকের উপর জায়গা করে নিলো;)
এবার বড় ভাবী বললেন......
-তোমার ভায়ের সাথে নাকি দুদিন আগে আশিক আর মেয়েটির বাবার সাথে মসজিদে দেখা হয়েছিলো।খুব ভালো মানুষ নাকি,তোমার ভাইতো বলছে ওদের সাথে আত্মীয়তা করা যায়।
সাইফ বললো..
- ভাবী তোমরাও একবার দেখনা।ওর মতামতও জানা দরকার।
ভাবি বললেন ...
তাহলে আমি আশিকের সাথে কথা বলে দেখি একটা ডেট ফিক্স করে আমরা কজন গিয়ে দেখে আসলাম।

--------------------------------------------------------------------

৩০শে জুলাই।
আজ অফিস থেকে একটু আগেই বের হলো তাজরীন।ফুলের দোকান থেকে চারটে গাজরা কিনলো সে, তারপর নাসিমাকে ফোন করে বললো সন্ধ্যার আগে যেন বাসায় আসে।বাসায় এসে দেখে ছোটখালা, চাচী, আম্মু সবাই ব্যস্ত।

তাজরীন ছোট খালার কাছে এসে বললো
- দু-তিনজন মানুষের জন্য এত আয়োজন কেন?:-*
- দু-তিনজন নারে ওরা বিশ জন আসছে।:D
- কি বললে? বিশ জন?আমাকে কি হাটের গরু পেয়েছো?X((
এরচেয়ে যারা প্রেম করে বিয়ে করে তাদের অনেক সম্মান।অন্ততপক্ষে মেয়েগুলোকে গরু হতে হয়না X( ।আমি এতো মানুষের সামনে যেতে পারবোনা :((
খালা বললে...
- এতে কান্না করার কি আছে?আসলে ওদের ফ্যামেলী মেম্বার অনেক তাই।দেখনা মেয়ের কান্ড! এ্যাই একদম কান্না করবিনা, তোকে একদম পেত্নীর মত লাগছে।

এমন সময় নাসিমা ঢুকলো বাসায়.....
- কিরে!!! একি অবস্থা তোর।:-*
ছোট খালা বললেন ... - দেখতো নাসিমা,পাগলীর হঠাৎমাথা খারাপ হয়ে গেছে।ওকে ঠান্ডা করে একটু সাজিয়ে দাও তো।সন্ধ্যের পর পরই ওরা দেখতে আসবে।আমি যাই আপাকে একটু হেল্প করি।
নাসিমা তাজুকে টেনে রুমে এনে বললো....
- কিরে এ কদিনতো আমার কানটা ঝালাপালা করে দিয়েছিস
কেমন লেগেছে, কিভাবে কথা বলেছে, কিভাবে হেসেছে, আর আজ ?
আচ্ছা তুই রাজী না থাকলে আমি কিন্তু লাইনে আছি;)।এমন সুদর্শন ছেলে পেলে আমি বিশ কেন একশজনের সামনে যেতে রাজী B-)
তাজরীন এবার চোখ মুছে হেসে বলো উঠলো....
-থাক! থাক! যা বলেছ, থাক আর বলোনা, মিরাজ ভাই তোকে খুন করে ফেলবে।

- বড় ভাবী শুনো!একটু এদিকে এসো!সাইফ বড়ভাবীকে একটু আড়ালে ডাকলো।
- কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো,সবাই রেডী, আমরা এখনই বের হবো।
সাইফ পিছন থেকে লালগোলাপের একটি তোড়া, একটি গোল্ডের আংটির বক্স আর একটা কার্ড বের করে বললো....
- আমি যাচ্ছি না।এগুলো আমার পক্ষ থেকে তুমি দিয়ে দিবে।আমার মন বলছে আমাকে তাজরীনের ভালো লেগেছে।
- আরে পাগল! আমরাওতো ঠিক করেছি ওকেইআমাদের ছোট বউ বানাবো ইনশাল্লাহ্। তোমার ভাই তাজরীনের জন্য অলরেডী ছোট একটা সেট কিনেছে।আমরা আজ একেবারে বিয়ের কথা পাকাপাকি করে আসবো, কিন্তু তোমার আবার কি হলো? যাবে না কেন?
- জানি না! নার্ভাস লাগছে।আর আমিতো ওকে দেখেছি, কথাও বলেছি।
ওকে তাড়াতাড়ি যাও, গুডবাই এন্ড গুডলাক।


তাজরীনকে তাদের সবার পছন্দ হলো।তাজরীনেরও সাইফের পরিবারকে পছন্দ হলো।সাইফের বড় চার ভাই, আশিক , আশিকের বাবা, তাজরীনের বাবা, চাচাদের মত নিয়ে আগস্টের তিন তারিখ তাদের বিয়ের দিনক্ষন ঠিক করলেন।
বিদায় বেলায় বড় ভাবী তাজরীনকে সাইফের গিফট্ গুলো হাতে দিয়ে বললেন.......
- সাইফ খুব লক্ষী ছেলে।আজ নার্ভাস, এখনবোধয় ছাদে বসে আমাদের জন্য ওয়েট করছে।ও.. আরেকটা কথা ...-ও তোমাকে ভিষন পছন্দ করেছে।
আর এগুলো আমাকে লুকিয়ে দিয়েছে তোমার জন্য ।
মেজো ভাবী বললেন....
- ও... আমি কিন্তু কার্ডের প্রেমালাপ দেখে ফেলেছি ....স্যরি;)
তোমাদের প্রেমের যাত্রা শুভ হোক লক্ষী বোন।
আর শোন তোমার ফোন নাম্বারটা আমাকে দিতে পারবে? তোমার বরকে আমার পেছনে একটু ঘুরাতাম।:P

বাসায় এসে বড় ভাবী সাইফকে বললেন........
আমাদের সাথে জমবে ভালো, আলহামদুলিল্লাহ্।তোমার ভাইয়াদেরও খুব পছন্দ হয়েছে।বাচ্চাগুলোতো গিয়েই ছোটচাচী ডাকা শুরু করেছে।
সেজোভাবী বললেন ........
যাক! অবশেষে আমি একজনকে আদশ করতে পারবো।বড় ভাবী, মেজো ভাবীতো আমাকে আদেশের উপরই রেখেছে।
মেজভাবী একটু ভাবধরে বললো তাজরীনের ফোন নাম্বারটা .........
নাও .... আজ থেকে তিনদিন প্রেম করার পারমিশন দিলাম।B-)


মাঝরাতে সাইফের দেওয়া গিফট্ গুলো বার বার দেখছে তাজরীন।
এযেন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার।

সাইফের দেওয়া কার্ডে লেখা ছিলো...
LOVE DON’T ASK
“DO YOU LOVE ME?”
LOVE ONLY SAYS
“I LOVE YOU”
LOVE DON’T ASK
“WHO ARE YOU?”
LOVE ONLY SAYS
“YOU ARE MINE!”
LOVE DON’T ASK
“WHERE ARE YOU FROM?”
LOVE ONLY SAYS
“YOU LIVES IN MY HEART!”

এমন সময় ফোনে একটা রিং এলো....

- হ্যালো....

অন্য প্রান্ত থেকে সাইফ বললো

কে প্রথম ভালোবেসেছি? তুমি না আমি

----------------------------------------------------------[সমাপ্ত]
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ৮:৪৯
১৩৩টি মন্তব্য ১২৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×