১. সূর্য
তিমির আয়োজনে আমার জন্ম হলো
'মা' আমার নাম রাখলেন সূর্য
সারারাত ধরে তিনি গল্পের তাওয়ায়
চাঁদের রুটি ছেকলেন
ভোরবেলায় আমি পূবদেশে উদিত হলাম
ঘনঘোর অন্ধমুখে ছুটে এলো মেঘ
ঝড় উঠলো শনশন বাতাসে
অন্ধ-আয়ুরেখা ধরে আমি হেঁটে চললাম।
'মা' আমার নাম রাখলেন সূর্য;
আমি পশ্চিমাকাশে ডুবে যেতে লাগলাম।
২. কামিনী
❑
ঘ্রাণটুকুই কামিনী। বাকিটা অবহেলা ।
৩. গান
❑
পাখি ফুরালে গান, পাতারাও
ঝরে যায় করুণ
দুয়ারে দুয়ারে বায়ুসখা-ট্রেন
বাজায় হলুদ পাতার বাঁশি
মর্মর প্রতিটি সন্ধ্যের কোলে
জেগে উঠে সমস্ত ঝিঁঝিঁপাড়া গাঁও
কোথাও জমে যাওয়া
আমিতুমি
ঠোঁট নাড়ি নির্বাক
অপেক্ষা করি বসন্তের
দৃশ্যঘন হলে; আমরাও গেয়ে
নেব, দু'কলি পাখিকণ্ঠের গান।
৪. প্রণাম
❑
মাটিতে পুঁতে দেওয়া স্বপ্নবীজ থেকে
উঁকি মারছিল একজোড়া চোখ
তারদিকে রাইফেল তাক করলেন পিতা
মুহুর্তেই সেটি ভয়ের ডালপালা
মেলতে মেলতে উঁচুতে উঠে গেল
আমি পাখি হয়ে তার ডালে গিয়ে বসলাম
এবার তিনি ট্রিগার চাপলেন
আমি ডাল হতে মাটিতে পড়ে গিয়ে
গড়াগড়ি খেতে খেতে লাগলাম
তারপর পিতার পায়ের কাছে এসে
রক্ত,পালক আর ছিন্নভিন্ন দেহ নিয়ে
শেষবারের মতো তাঁকে প্রণাম জানালাম।
৫. বোনগাছটি
❑
পত্র-পল্লবে বোনগাছটি বাড়তে থাকে
মায়া ও ছায়ায় ডালপালার নিচে
মেলে ধরে স্নেহের আঁচল
ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের রাতে আকুতির
দরুদ নেমে আসে তার ঠোঁটে
রোদ উঠলে- ছায়ার ছাতা হাতে
নিমেষেই দাঁড়িয়ে যায়
বসন্তে বোনগাছটির ডালে
হলদে রঙের পাখি বসে
শিস দেয়। গান গায়;
গাইতেই থাকে
বোনগাছটি হাসে
হেসে কুটিকুটি হয়
হাসতে হাসতে একদিন;
তাঁর শাখায় সিঁদুরফুল ফোঁটে!
৬. লোভ
*
ফুল ফোটানোর লোভেই মা-গাছটির জন্ম হয়।
৭. হলুদ পাতাটি
*
পাতাটির ভেসে যাওয়া দেখি;
বৃক্ষ-সংসারের সেই বৃদ্ধ হলুদ পাতাটি
প্রতিনিয়ত যাকে হাওয়ারা শুনিয়ে যেত
মৃত্যুর শঙ্খনিনাদ
একদা সেই বৃক্ষ-সংসারের নিম্নদেশে
ঢিবী গড়েছিল পিঁপড়ে দম্পতি
হাওয়ার শাসানি শুনে যারা
বেরিয়ে পড়তো খাদ্যের সন্ধ্যানে
ফিরে আসতো
ক্লান্তি ও দুর্ভাগ্য সমেত
আর, ফিরে এসে দেখতো
বৃদ্ধ পাতাটি গভীর তাকিয়ে আছে
পিঁপড়ের ঢিবীর দিকে
তীব্র স্রোতে পাতাটির কেপে ওঠা দেখি;
আজ তার পিঠে সওয়ার হয়েছে
পিঁপড়ে দম্পতি!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০২২ রাত ৯:১৪