আপনি স্ত্রীর আসনে বহাল থাকা অবস্থায় স্বামী অন্য এক মহিলার প্রেমে পড়বেন এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। ব্যাপারটা কি এ রকম যে আপনি সন্দেহ করছেন কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছেন না। দুজনকেই বেসামাল অবস্থায় হাতেনাতে ধরে ফেলতে পারলে তো কথাই নেই। কিন্তু সেটাও হচ্ছে না। তাহলে অনেকগুলো সন্দেহকে জড়ো করে দেখুন- কী দেখবেন? স্বামীর আচরণ ও দৈনন্দিন কর্মকান্ড। ভিক্টোরিয়া রস স্বামীর অবিশ্বস্ততার ৩০টি চিহ্ন শনাক্ত করেছেন। ভিক্টোরিয়ার প্রেক্ষাপট ইউরোপ-আমেরিকা। এই স্বামী ডিজিটাল যুগের স্বামী- আমাদের বেলায় বাংলাদেশিপনা যোগ করতে হবে। তবে স্বামীদের মৌল আচরণ এশিয়া-ইউরোপ নির্বিশেষে অন্তত অবিশ্বস্ততার প্রশ্নে সারা দুনিয়াতে একই রকম।
ভিক্টোরিয়া রসের ৩০ টিপস, বন্ধনীর ভেতরের ব্যাখ্যা লেখকের :
১. স্ত্রীকে প্রতারণা করেছে বলে স্বামী এক সময় যাদের নিন্দা-মন্দ করত তাদের সম্পর্কে হঠাৎ তার ধারণা পাল্টে গেছে। (যেমন এক সময় বলত হিলারির জন্য কষ্ট হয়, ক্লিনটন একটা আস্ত বদমাশ। এখন বলছে, সো হোয়াট? এটা হিলারির ব্যর্থতা, নিজের স্বামীকে ধরে রাখতে পারে না, এর জন্য তো আর মনিকা লিউনস্কিকে দোষ দেওয়া যায় না!)
২. পরিবারের যৌথ বিষয়গুলো নিয়ে তেমন মাথা ঘামাচ্ছে না। যা হচ্ছে হোক। এমনকি স্ত্রী ও সন্তানদের কাছ থেকে অপরিকল্পিতভাবে হলেও নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে।
৩. অফিস ৯টায়। আগে বাসা থেকে বের হতো ৮টা ৪০ মিনিটে। এখন বের হয় সাড়ে ৭টায়। মানে নির্ধারিত সময়ের আগেই বের হয়ে যায়। (কেন যায়, জিজ্ঞেস করে দেখুন, বলবে, শহরের ট্রাফিক জ্যাম সম্পর্কে তোমার কোনও ধারণা আছে? এক ঘণ্টা সময় এগিয়ে নেওয়াতে সকালে যে কী ভিড় হয়! আর আমাদের নতুন বসও একটা খাটাশ, ৯টার সময়ই হাজিরা খাতা চেক করে।)
৪. স্বামী বাসায়। কম্পিউটারে কাজ করছে। আপনি পাশ দিয়ে যাচ্ছেন। স্বামী স্ক্রিনটা লুকিয়ে ফেলল। (দু-একদিন পর এই আচরণের যদি ব্যাখ্যা চান তাহলে বলবে, ইন্টারনেটে একটা ডার্টি জোঁক পড়ছিলাম। আপনি তখন বলবেন, তাতে কী, তুমি তো আগে এসব আমাকে ডেকে পড়ে শোনাতে। আপনার স্বামী বলবে, আমি ভাবলাম, তুমি যদি কিছু মনে কর।)
৫. চার্চ, ঈশ্বর ও আধ্যাত্মবাদ সম্পর্কে তার ধারণা বদলে গেছে। (ঈশ্বর আছে নাকি?)
৬. তার মেসেঞ্জারে অদ্ভুত আইডি।
৭. তার একটা নতুন ই-মেইল অ্যাকাউন্টও আছে, আপনি এখনও জানেন না।
৮. হঠাৎ সিগারেট ধরেছে। (হঠাৎ সিগারেট ধরার কারণ জিজ্ঞেস করায় বলল, টেনশন, নতুন বস চব্বিশ ঘণ্টা টেনশনে রাখে আর রাজ্যের সব অপ্রয়োজনীয় কাজ আমাকে দিয়ে করায়।)
৯. ই-বুক পড়তে শুরু করেছে। পাঠ্যতালিকায় রয়েছে মেয়েদের সুখী করার উপায়, রাতের সাফল্য ইত্যাদি।
১০. ইংরেজিতে গালাগাল দিতে শুরু করেছে।
১১. স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কটা ধীরে ধীরে শীতল হয়ে আসছে। (শীতলতার মানে স্ত্রী ঠিকই জানেন।)
১২. স্ত্রীর সেই কবেকার ভুলভ্রান্তি আবার নতুন করে মনে করিয়ে দিচ্ছে।
১৩. অফিস থেকে ফিরতে কখনও পাঁচ ঘণ্টাও লেট করছে। (জিজ্ঞেস করলে বলে, ফরেনার গেস্ট ছিল, বোর্ড মিটিং ছিল কিংবা বন্ধু মৃত্যুশয্যায়, তাকে দেখে ফিরেছি।)
১৪. নিজের সেলফোন, ওয়ালেট এবং ব্রিফকেস সম্পর্কে অতিসচেতন। (ব্রিফকেসের ডিজিটাল লকে সন্তুষ্ট না হয়ে এর ওপর ম্যানুয়াল চাবি লকও করে থাকে। সেলফোন ও ওয়ালেট স্ত্রীর হাতে পড়েনি তো?)
১৫. বারবার আয়নার সামনে আসছে। চুলটা বিভিন্ন স্টাইলে আঁচড়াচ্ছে। পরপর তিনটি শার্ট পাল্টেও মনে হচ্ছে স্বস্তি পাচ্ছে না। (ভুঁড়িটা নিয়ে মহাসমস্যায়, কমছে না। সাঁতার কাটছে, সাইকেল চালাচ্ছে। জিমনেশিয়ামে যাচ্ছে- ভুঁড়ি নামবেই।)
১৬. গাড়িতে বাড়তি একসেট কাপড় রাখতে শুরু করেছে।
১৭. ছুটির দিনেও অফিসে যাচ্ছে। (জিজ্ঞেস করলে বলবে সামনে একটা প্রমোশনের মুলো। দেখি বসের মন জয় করতে পারি কি না?)
১৮. যে সব বিষয়ে তার কোনও আগ্রহই ছিল না তা নিয়ে পাত্যপূর্ণ কথাবার্তা বলতে শুরু করেছে। (যেমন ইকনোমিক ডিপ্রেশনের অ্যাফেক্ট, গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের উপন্যাসে জাদু-বাস্তবতা এবং নন-মিলিটারি সিকিউরিটি।)
১৯. আপনাকে বলছে, যাও না তোমার বাবা-মাকে দেখে এস। যাও ছোটবেলার ক্লাসমেটদের গেট টুগেদারে। নাথিং লাইফ ফ্রেন্ডস।
২০. তার কেনাকাটার ধরন পাল্টে গেছে। পারফিউম ও ডিওডোরেন্টের বৈচিত্র্য নিয়ে রীতিমতো পড়াশোনা করছে।
২১. গাড়ি থেকে বাচ্চাদের জিনিসপত্র সব নামিয়ে দিয়েছে। পুতুল, বেবি সিট আর নেই। গাড়ি ঝকঝকে তকতকে।
২২. কনভেনশন, বর্ধিত সভা, সাব-কমিটির মিটিং এসবে বেশি অংশ নিচ্ছে।
২৩. নতুন নতুন শব্দ ও বাগধারা ব্যবহার করছে।
২৪. হঠাৎ গভীর রাতে মনে পড়ছে একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস অফিসের ড্রয়ারে রেখে এসেছে। সুতরাং তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল।
২৫. দূরের হাঁটায় কুকুরটাকে সঙ্গে নিচ্ছে (বাংলাদেশের স্বামী কুকুরটাকেও সাক্ষী হিসাবে রাখতে চায় না। সুতরাং ট্রাকস্যুট পরে কেডস লাগিয়ে একাই যাবে।)
২৬. তার নতুন নতুন হবির কথা শুনবেন। (যেমন নাকফুল সংগ্রহ, পুরনো দিনের হাতঘড়ি সংগ্রহ এবং এটাও তার কাছে শুনবেন যে তার এক বন্ধুর শখ নাকি পুরনো দিনের প্যান্টি সংগ্রহ করা।)
২৭. তার সেলফোন বরাবরই পোস্ট-পেইড। এই প্রথম প্রি-পেইড সেলফোন ব্যবহার শুরু করেছে।
২৮. মাঝে মাঝেই তার তারুণ্যের খেয়াল চাপছে, ব্যান্ডসংগীত শুনছে, ক্লাসিক্যাল মিউজিকও তার প্রিয় বলে প্রচার করছে।
২৯. ঘরে কোথাও কিছু হাতের কাছে না পেলে সরাসরি আপনাকেই দায়ী করছে।
৩০. দিন ও রাতের অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ে এসএমএস আসছে। কিন্তু সব কোডেড মেসেজ।
ভিক্টোরিয়া রস শেষ পর্যন্ত বলেছেন, এগুলো গুরুত্বপূর্ণ টিপস হলেও আসল জায়গা হচ্ছে আপনার মন।
আপনার মন যদি বলে স্বামী সম্ভবত প্রেমে মজে আছে, সেটাই সত্য। নারীর মন সাধারণত ভুল বলে না।
তবে একজন বিপদাপন্ন নারীকে যখন আপনার স্বামী সাহায্য করছে, অকারণে সন্দেহ না করে আপনি স্বামীর সঙ্গে যোগ দিন। দুজনের সাহায্যে সেই নারী আরও দ্রুত বিপন্মুক্ত হবে এবং আপনার পরিবারের একজন অনুগত বন্ধুতে পরিণত হবে।
সূত্রঃ ইন্টারনেট