somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের স্বাধীনতাঃ এপিঠ ও পিঠ

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরাধীনতা শিকল ভেঙ্গে স্বাধীনতার স্বাদ আমাদের গায়ে লেগেছে।এই স্বাধীনতায় আমরা গা ভাসিয়ে দিয়ে যা খুশি তাই করছি। স্বাধীনতা আসলে কেমন তা আমরা অনুধাবন করতেই পারিনা। দীর্ঘ দিন পরাধীন থাকার পরে স্বাধীনতা পেয়ে আমরা আত্মহারা আর উল্লাসিত হয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করতে করতে নিজকে হারিয়ে ফেলেছি। আমি যে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব এর সঙ্গা কি তাও ভুলে গেছি। যখন যা খেয়াল হয় তাই করে থাকি। কারো কিছু বলার নেই। সরকারী ভাবে হোক, প্রশাসনিক ভাবে হোক, পিতা-মাতার মাধ্যমে হোক, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন কারো কিছু বলার নেই। আবস্থা ভেদে স্বাধীনতার মানে স্বেচ্ছাচারিতা হয়ে গেছে। এই স্বেচ্ছাচারিতার প্রয়োগ শুধু অপরের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করি না। স্বাধীনতার অপপ্রয়োগ করতে করতে অভ্যাসগত ভাবে নিজের উপরও প্রয়োগ হচ্ছে দেদারসে যা আমাদের বুঝার ক্ষমতাও হারিয়ে গেছে। অভ্যাসগত বিষয়টা কেমন- ধরুন আমারা মাতৃভাষায় কথা বলি। বই পুস্তক পড়ার সময়তো মোটামুটি শুদ্ধভাবেই পড়ি।কিন্তু ছোটকাল থেকে যে এলাকায় থেকে কথা বলতে বলতে বড় হয়েছি সেই এলাকার আঞ্চলিক ভাষা এমন ভাবে রপ্ত হয়ে গেছে যা ইচ্ছা করলেও বা প্রয়োজন হলেও সেই আঞ্চলিক ভাষা ছেড়ে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারি না বা আমি কথা বলার সময় কথা শুনতে কেমন লাগছে, আমি শুদ্ধ ভাষা না আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করছি তা খেয়ালও করতে পারি না। এটা হলো অভ্যাসের ফসল। স্বাধীনতার অবস্থাও তাই হয়েছে। কোনটা স্বাধীন আর কোনটা স্বেচ্ছাচারিতা তা বুঝার ক্ষামতাও হারিয়ে গেছে।
উদাহারণ হিসেবে বলা যায় আমার এখন বার্ধক্যজনিত রোগে ধরেনি বা বিছানাগত হয়নি কিন্তু ছোট খাট কিছু অসুখ হয়েছে। চলাফেরা কাজকর্ম সবই করতে পারি।এমতাবস্থায় ডাক্তার দেখানোও জরুরী নইলে রোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। সব কিছু জেনে শুনেও ডাক্তারের কাছে যায় না। আবার যদি ডাক্তারের কাছে যায় এবং ডাক্তার যে ওযুধ লিখে দেয় তা সময় মত কিনি না। যদিও বা কিনি নির্দেশনা মতে সেবন করি না।ঔষুধ না খেলে ক্ষতি হবে জানি তারপরও খাই না। কেন? কারণ আমি নিজকে স্বাধীন মনে করি।কিন্তু যদি অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হই তখন নার্স এবং ডাক্তারে বাধ্য করে ঔষুধ সেবন করতে। ফলে ঠিক মতই ঔষুধ খাই। কারণ তখন আমি হাসপাতালের অধিন। সেখানে আমি আমার অবস্থানে ঠিক থাকলেও আমার স্বত্তাকে আমি হাসপাতালারে অধিন করে দিয়েছি। অর্থাৎ নিজকে কোন নিয়মতান্ত্রিক রীতিনিতীর অধিন করে দিয়েছি। ফলাফল নিজের মঙ্গল ছাড়া আর কিছুই না।
আবার ধর্মীয় বিষয়ে দেখেন আমি মুসলিম হিসেবে ইসলাম ধর্মের কথাই বলছি। ইসলাম ধর্মের বিধান হচ্ছে কোরআন সুন্নাহ। আমরা যারা মুসলমান তারা অবশ্যই কোরান-সুন্নাহকে মানি।আর তা মানার জন্য জানার দরকার। প্রত্যেক মুসলমান জানে আল্লাহ এক, একদিন আমাদের মৃত্যু হবে। মৃত্যুর পর কেয়ামত হবে, সেখানে আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে এবং পুংখানুপুংখ বিচার হবে। বিচারের ফলাফলের উপর জান্নাত জাহান্নাম নির্দ্ধারণ হবে। জান্নাত এবং জাহান্নাম কি তা আমাদের সকলেরই জানা আছে। জাহান্নামের ভয়াবহতা সম্পর্কেও আমাদের মোটামুটি ধারনা আছে। যদিও আমরা তা দেখি নাই। দুনিয়াতে অপরাধ করলে তার বিচার হবে এবংশাস্তি হবে জানি কিন্তু সেই শাস্তির স্বাধ কেমন লাগবে তা কিন্তু আমরা জানি না। তো মুসলমান হিসেবেও আমাদের কিছু বিধান আছে যা না মানলে ভয়াবহ শাস্তির মুখামুখি হতে হবে জানি। কিন্তু মানি না। কেন মানিনা? কারণ আমরা স্বাধিন।আমরা জানি নামাজ পড়া ফরজ বা বাধ্যতামূলক কিন্ত পড়ি না কারণ কেউ বলার নাই। আবার যারা পড়ি তারা ঠিকমত পড়ি না। ৫ ওয়াক্ত নামাজে ৪/৩/২ ওয়াক্ত পড়ি। আবার যারা ৫ ওয়াক্ত পড়ি তারা নামাজে এখলাস/খুশুখুজুর দিকে খেয়াল করি না। কারণ কারণ আমি কাউকে কিছু বলার অধিকার দিইনি। অপর দিকে যারা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে তাদের ক্ষেত্রে এই স্বাধীনতা নেই যে তারা ইচ্ছা হলো নামাজ পড়ল বা না পড়ল। ঐ হাসপাতালের মতই বাধ্য হতে হয় নিয়মমত চলতে।
একজন সন্তান যতক্ষণ পিতা-মাতার অধিনে থাকে ততক্ষণ সে বাধ্য থাকে পিতা-মাতার নির্দেশমত চলতে। আর পিতা-মাতা যেমন ভাবে তার সন্তান গড়বে তেমনভাবে সেই সন্তানের মধ্যে চলার অভ্যাস তৈরী হবে। আবার অভ্যাস তৈরী হলেও একজন স্বাধীনচেতা মানুষ তার ভাল অভ্যাসকে ধরে রাখতে পারে না। কারণ একজন মানুষ সব সময় শয়তান ও নফস্ দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকে। ফলে মানুষের মধ্যে লোভ লালসা ও প্রবৃত্তি জাগ্রত হয় এবং মানুষ তার নিজের অজান্তেই অনেক সময় নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধেই সে অনেক খারাপ কিছু করে বসে। আর এই খারাপ কাজগুলি যদি সে দ্রুত দমন করতে না পারে তবে তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। আর এভাবেই আমারা আমাদের চরিত্রকে খারাপ থেকে খারাপের দিকে নিয়ে যেতে যেতে আমরা খারাপ হয়ে যায় এবং সৃষ্টির সেরা জীব থেকে নিকৃষ্টজীবে পরিণত হই। আর এইভাব সমাজের অধিকাংশ মানুষ খারাপ হওয়ার পরও একজন আরেক জনকে খারাপ মানুষ হিসেবে চিন্হিত করি। হয়তো জানি আমাকে সবাই খারপ বলছে। তাতে আমার কোন ভ্রক্ষেপ নেই। থাকলেও আমার সংশোধন হওয়ার কোন ক্ষমতা নাই। কারণ আমি স্বাধীন। স্বাধীনতার স্বাধ নষ্ট করে নিজকে কারো হাতে বন্দী করতে মন/নফস্ চাই না। আসলেই কি আমরা স্বাধীন। ভেবে দেখেন তো। না আমরা কখন স্বাধীন না। কারণ আমরা নফসের কাছে বন্দী। অর্থাৎ নফসের গোলাম। আমরা আমাদের নফসের ইচ্ছা অনুযায়ী চলি। সেক্ষেত্রে ভাল মন্দ দেখার এখতিয়ার কোন কোন ক্ষেত্রে একেবারে থাকে না।
আবার লেখাপড়ার ক্ষেত্রে দেখেন আমরা স্কুলের কাছে বন্দী। অর্থাৎ শিক্ষকদের গোলাম হয়ে যায়। আর শিক্ষকক্ষের গোলমা হয়ে যায় বলেই আমাদের লেখাপড়া হয়। যে যতো নিজকে শিক্ষকদের হাতে সর্ম্পন করবে তার লেখাপড়া ততো ভাল হবে। এক্ষেত্রে যারা নিজ স্বাধীন হয়েছে তাদের লেখাপড়া সম্ভব হয়নি।
কাজেই বলা যায় আমরা যদি আমাদের অবস্থা ভেবে এবং প্রয়োজনানুযায়ী নিজকে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তির কাছে বন্দী করতে পারি তবে আমাদের পথ চলা সহজ হবে যেমন তেমনি চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে নিঃসন্দেহে।
তাই স্বাধীনতাকে গুলি মারি এবং নিজকে কারো জিম্মায় রেখে নিজের চরিত্রকে গঠন করি।
আমার এ লেখার উদ্দেশ্য কাউকে উপদেশ দেয়ার জন্য নয় বা স্বাধীনতাকে বিদ্রুপ করা নয়। বরং আমি আমাকে সংশোধন করার জন্যই এ লেখা। এ বিষয়ে আপনাদের কাছে মন্তব্য চাই। বিদ্রুপ করবেন না। আর লেখালিখি আমার অভ্যাস নাই তাই ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:৫৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×