আমি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ২০০১ সালের ২৮ মার্চ =৩৪০০/-১০,৬৭০/ স্কেলে ১০ম গ্রেডে এই চাকুরিতে যোগদান করি। তার পূর্বে এমপিও ভুক্ত কলেজে লেকচারার ছিলাম। আমার বন্ধু মোঃ তোফাজ্জল হোসেন ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে =৩৪০০/-১০,৬৭০/ স্কেলে ১০ম গ্রেডে সোনালী ব্যাংকের অফিসার পদে যোগদান করে। এখন ২০১৫ সাল। টাইম স্কেল থাকার সুবাধে ১টি টাইম স্কেল পেয়ে বর্তমানে আমি এক গ্রেড আতিক্রম করে ৯ম গ্রেডে ১১০০০/ স্কেলে বেতন পাই। যা অষ্টম পে স্কেল অনুযায়ী ২২০০০/ হবে। আমার বন্ধু টাইম স্কেল ও পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে ২২০০০/ স্কেলে ৫ম গ্রেডে বেতন পায়। যা অষ্টম পে স্কেল অনুযায়ী ৪৩০০০/ টাকা হবে। প্রবেশকালে একই স্কেলে একই গ্রেডে চাকুরি নিয়েছিলাম। ১৪ বছরের ব্যবধানে আমার চেয়ে আমার বন্ধুর বেতন স্কেল ও বেতন গ্রেড উভয়ই দ্বিগুন হয়েছে। এই বার একটু পিছন ফিরে দেখতে চাই। আমি ১৯৯১ সালে এইচ.এস.সি পাশ করে ১৯৯২ সালে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে সমাজ কল্যাণ বিষযে অনার্সে ভর্তি হই। আমার বন্ধু মোঃ তোফাজ্জল হোসেন ১৯৯০ সালে এইচ.এস.সি পাশ করে ১৯৯১ সালে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে চান্স পায়নি। সে ১৯৯২ সালে আবার আমাদের সাথে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে সমাজকল্যাণ বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়। অনার্স ও মাস্টার্সে ৫৫% উপরে মার্কস নিয়ে পাশ করেছি। আমার বন্ধু ৫০% এর নীচে। তার সকল একাডেমিক পরীক্ষার ফলাফল আমার চেয়ে নিম্ন মানের। ই"ছা করলে তার মত অফিসার পদে ব্যাংকের চাকুরিতে হয়তো যোগদান করতে পারতাম। কিন' শিক্ষকের ছেলে হিসাবে বেচে নিলাম শিক্ষকতাকে। সেদিন বুঝতে পারিনি এক সমান বেতনে চাকরিতে যোগদান করলেও ১৫ বছরের ব্যবধানে বেতন বৈষাম্য দ্বিগুন হবে। টিউশনি বা কোচিং আমার পছন্দ না। তাই বেতন ছাড়া আমার কোন উপরি আয় নাই। আমার বন্ধু ৫ বা ৬% সুদে ব্যাংক থেকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা লোন পেয়েছে যা অন্য ব্যাংকে ১৩% বা ১৪% সুদে জমা রেখেছে। এথান থেকে আমার বেতনের চেয়ে বেশি পায়। এত কিছু বৈষাম্যেও পরেও বর্তমানে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বন্ধ করে দিয়ে মরার উপর খাড়ার গা হয়ে আছে ৮ম পে স্কেল। মেধাবী ভাইদের প্রতি অনুরোধ যোগ্যতা থাকলে শিক্ষকতার চাকুরিতে আসবেন না।
বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজের মাঝে সৈয়দ মুজতবা আলীর পাদটীকা গল্পের নায়ক পন্ডিত মশাইয়ের প্রতি"ছবি দেখা যায়। গল্পের পন্ডিত মশাইয়ের মাসিক বেতন ছিল ২৫ (পঁচিশ) টাকা। তার সংসারের সদস্য নয় জন। পন্ডিত মশাইয়ের বিদ্যালয় পরিদর্শনে আগত ইংরেজ লাট সাহেবের সাথে এনছিলেন একটি তিন ঠ্যাংগা কুকুর। যার পিছনে মাসে ব্যয় হয় ৭৫ (পঁচাত্তুর) টাকা। পন্ডিত মশাই তার প্রিয় ছাত্র সৈয়দ মুজতবা আলীকে প্রশ্ন করে বলেছিলেন- “ তবে বল তো দেখি গণিতে তোর কত বিদ্যা ? আমার পরিবার লাট সাহেবের তিন ঠ্যাংগা কুকুরের কয় ঠ্যাংগের সমান?” দেশের গণ্যমান্য বুদ্ধিজীবি ব্যক্তিগন বলতে পারেন ? শিক্ষকতা পেশা বাংলাদেশে অন্যপেশার কয় ঠ্যাংগের সমান ?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৪৯