somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিঠি বা অব্যক্ত ভালবাসা মো. আবদুস সালাম

০২ রা জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম দেখায়ই মনিকে ভাললাগে সাঈদের। এই মেয়েটির সবকিছুই ভাললাগে তার। হরিণীর মত ডাগর ডাগর চোখ। মেঘ কালো চুল। মিস্টি মিস্টি কথা আর অমায়িক ব্যবহার। এই সবকিছুই মুগ্ধ করেছে সাঈদকে।
ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্রী মণি। থাকে নারায়ণগঞ্জ। ঢাকায় বেড়াতে এসেছে খালার বাসায়। মণির বখালার বাসা আর সাঈদের মামার বাসা পাশাপাশি। দুটি মুখোমুখি আধা পাকা লম্বা বিল্ডিং। মাঝখানে সরু রাস্তা। দুটি বিল্ডিং থেকে বের হওয়ার একটি চিকন রাস্তা। দুটি বিল্ডিং থেকে বের হওয়ার একটি গেইট।
সাঈদ থাকে মামার বাসায়। পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অনার্স ২য় বর্ষ। বিষয় বাংলা। গত দেড় বিছরে ইউনিভার্সিটিতে কোন মেয়ের দিকে তাকাবার প্রয়োজন পড়েনি তার। কিন্তু এখন কি জানি হয়ে গেল। বার বার শুধু মনে পড়ে মণির কথা। সর্বক্ষণ ভাবনায় শুধু মণি। ইউনিভার্সিটির মেয়েদের কাছে হার না মানা সাঈদ এবার হার মানে মণির কাছে।
মণিরও একই অবস্থা। নানা অজুহাতে ছুটে আসে সাঈদের মামার বাসায়। উপলক্ষ মণির সমবয়সি সাঈদের মামাতো বোন প্রান্তি। প্রান্তির কাছে আসলেও সূযোগ পেলেই ছূটে যায় সাঈদের রুমে। তার সাথে কথা বলতে পারলেই ভাললাগে। সাঈদ অবসরে দাবা খেললে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে মণি। সাঈদ হারলে তার দুঃখি যেন বেশি। আর জয়ী হলে খুশির বাধ ভেঙ্গে যায়। সেদিন দাবা খেলা শেষে দরজার পাশে এসে দাড়ায় সাঈদ। দেখতে পেয়ে মণিও এসে দাঁড়ায় তাদের দরজায়। সাঈদের মন্টা খারাপ দেখে প্রশ্ন করে মণি-
‘ কি? সাঈদ ভাই, খেলায় হেরেছেন বুঝি?’
“হ্যা। মাত্রতো খেলা শিখলাম । তাতে কি আর পুরানোদের সাথে পারা যায়?” বলে সাঈদ।
“প্রথম দিন খেলা শিখেই তো হারালেন ওস্তাদকে।“ সাঈদকে শান্তনা দেয় মণি। সাঈদের পরাজয়ের দুঃখ যে মণিকে বেধ করেছে, চেহারায় তার ছাপ স্পস্ট।
ক্লাশেও মন বসেনা আজকাল সাঈদের। ২য় ইনকোর্স পরীক্ষাটাও খারাপ হয়েছে সাঈদের। স্যারের লেকচার আর আগের মত অনুসরণ করতে পারেনা সে। মনোযোগে বাধা পরে। না, এভাবে আর হয় না। মণিকে বলতে হবে ভাললাগার কথা। ভালবাসার কথা। কিন্তু কীভাবে বলবে। যে মামাতো বোন প্রান্তিকে উপলক্ষ করে আসতো এই বাসায়, সেই প্রান্তির সাথে ঝগড়া হয়েছে মণির। এখন আর আসেনা এই বাসায়। সাঈদ সূযোগ পেলে যায় মণির খালার বাসায়। কিন্তু তাও দিনে একবার বা দুইবার। সেখানে গেলে কথা হয় মণির খালা খালুর সাথে। সেখানে তো আর প্রেমের কথা বলা যায় না। তাহলে উপায় ? না, উপায় একটা বের করতে হবে। সাঈদ বের হয়ে আসে ক্লাশ থেকে। চলে যায় লাইব্রেরীতে। উদ্দেশ্য চিঠি লেখবে। চিঠি দিয়ে জানাবে তার ভালবাসার কথা। এখন প্রতিদিন সাঈদের ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরার সময় হলে বাসার গেইটে এসে দাঁড়িয়ে থাকে মণি। আজ বাসায় ফিরার সময় যদি মণিকে গেইটে দেখা যায় তাহলে চিঠিটা দিবে তাকে।
যথারীতি গেইটে দাঁড়িয়ে মণি। দূর থেকে দেখতে পায় সাঈদ। চিঠিটা বের করে ব্যাগ থেকে। মনে মনে ভাবে আজই বলা হয়ে যাবে তার ভালবাসার কথা। কিন্তু না, কাছে এসে সব ভুলে যায় সে। শুধু চেয়ে থাকেও মণির চোখের দিকে। দিতে পারলনা তার চিঠিটা। জানানো হলনা তার মনের কথা।
পরদিন নতুন করে পরিকল্পনা করে সে। নতুন করে সাহস সঞ্চয় করে সে। আজ দিবেই সে। শুধু আবেগে ভুলে গেলে চলবে না। বাস্তবে কাজ করতে হবে। ফিরার পথে দেখতে পায় আজ্ব গেইটে আছে মণি। দূর থেকে দেখে সাঈদ। চিঠিও হাতে । কিন্তু দিতে গিয়ে থেমে যায়। হঠাৎ তাকিয়ে দেখে রাস্তার ওপারের দোকানদার তাকিয়ে আছে তার দিকে। তাই আজও দেওয়া হল না তার চিঠি।
না, এভাবে আর হয় না। মনে মনে ভাবে সাঈদ। দোকানদার তার কে ? দোকানদারকে ভয় পেলে চলবে না। ভালবাসায় এতো কিছু পরোয়া করলে হয় না। আজ তৃতীয় দিন। আজ সফল হতেই হবে। তৃতীয় বারে মানুষ সাধারণত ব্যর্থ হয় না। ইউনিভার্সিটির বাস থেকে নেমে বাসার গেইটে আসতেই দেখতে পায় মণিকে। বুকে সাহস সঞ্চয় করে । শাটর্টের বোতাম খুলে কয়েকবার বুকে ফুঁ দেয়। এইভাবে করতে করতে একবারে কাছে চলে আসে। হাতেই চিঠি। চিঠিটা মণির হাতে দেওয়ার পূর্বে চারদিক দেখে নেয় সাঈদ। কাছে কেউ আছে কিনা। পিছন ফিরতেই দেখে সাঈদে মামা ফিরছে অফিস থেকে। মনে মনে ধন্যবাদ জানায় আল্লাহকে। ভাগ্যিস পিছন ফিরে তাকিয়ে ছিল। তানাহলে মামার হাতে ধরা পরে যেত সে।
বেচে গেছে মামার হাতে ধরা পরা থেকে। কিন্তু দেওয়া হয়নি চিঠি। তাহলে আবার নতুন করে নিতে হবে উদ্যোগ। সম্রাট নেপোলিয়ান ছয় বার ব্যর্থ হয়েও হতোদ্দম হয়নি। সে কেবল মাত্র তিনবার ব্যর্থ হয়ে ভেঙ্গে যাবে? আজ আবার চেস্টা চালাবে। মনে মনে কল্পনা করতে করতে বাসায় ফিরে সাঈদ। কিন্তু হায়! একি? আজ যে গেইটে নেই মণি। আজ কি তাহলে ঠিক সময়ে আসে নাই? ঘড়ি দেখে সে। না, ঠিক সময়েই আসেছে। তাহলে কোন কাজে আটকে গেছে মণি। তাই ভেবে গেইটে অপেক্ষা করতে থকে সাঈদ। কিন্তু আধা ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও যখন দেখল আসছেনা , তখন অগত্যা বাসায় ঢুকে যায় সে। মন তার ছটফট করছে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা এই সময়ের মধ্যে কতকিছু যে হাত ফসকে পড়ে গেছে তার হিসাব নেই। সন্ধ্যার পর মামতো বোনদের নিয়ে পড়ার টেবিলে বসে। একফাঁকে প্রান্তিকে জিজ্ঞাসা করে সাঈদ
“মণিকে দেখছি না যে, প্রান্তি?”
“মণিতো চলেগেছে,”। জবাব দেয় প্রান্তি। “ সাঈদ ভাই, পরশু দিন আপনার কালো পেন্টের পকেটে কি যেন রেখছে মণি” ।
প্রান্তির কথা শুনে দৌড়ে যায় কালো পেন্টের খোঁজে। কোথাও না পেয়ে মামিকে জিজ্ঞাসা করে-
“আমার কালো পেন্টটা কোথায় , মামি?”
“এইটাতো ধুয়ে আয়রন করে আলমিরাতে রেখে দিয়েছি” । মামির জবাবটা শুনে কলিজাটা স্যাৎ করে উঠে সাঈদের। আলমিরা খুলে খোঁজতে থাকে। অনেক কাপড়ের মাঝ থেকে খোঁজে পায়। পকেটে হাত দিয়ে বের করে একটি কন্ডলী পাকানো কাগজ। অনেক কষ্টে খুলে ভাঁজ। কিন্তু কোন লেখাই পড়া যায় না। শুধু পড়তে পারে চিঠির শেষ প্রান্তে লেখা দুটি শব্দ-
ইতি
মণি।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×