পত্রিকার পাতা থেকে
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে জনমনে বিভ্রান্তি
৯৬ সালে চালের কেজি ১০ টাকাই ছিল পরবর্তীতে বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ থেকে ৩৮
২০০৬ সালের ১৭ মার্চ ও ২০০৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর নির্বাচনী সভায় ১০ টাকা কেজি চাল দেয়ার কথা বলেছিলেন
এ বি সিদ্দিক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার জাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘‘১০ টাকা কেজি চালের কথা ১৯৯৬ সালে বলেছি, এবার নয়।’’ অপরদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্য সংস্থা টিসিবি'র ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী (বাজার তথ্য) আবুল বাশার খান কর্তৃক ২৩.০৭.০৮ইং তারিখের বাজার মনিটরিং রিপোর্টে বলা হয়- ১৯৯৬ সালে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ১০ টাকা। ঐ রিপোর্টে আরো বলা হয়- ১৯৯৬ সালে মোটা চাল প্রতি কেজির দাম ছিল সর্বনিম্ন ১০, সর্বোচ্চ ১৫ টাকা, সরু প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ২২, সর্বোচ্চ ২৬, আটা সর্বনিম্ন ১২, সর্বোচ্চ ১৬, সয়াবিন (লুজ) প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ৪৪, সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। পিঁয়াজ সর্বনিম্ন ৮, সর্বোচ্চ ২০, ডাল মশুর সর্বনিম্ন ৩২, সর্বোচ্চ ৪৮, আলু সর্বনিম্ন ৯, সর্বোচ্চ ১২, ছোলা সর্বনিম্ন ২২, সর্বোচ্চ ২৬, লবণ সর্বনিম্ন ৮, সর্বোচ্চ ১১, চিনি সর্বনিম্ন ২৯, সর্বোচ্চ ৪২ টাকা। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়ার বছর মোটা চাল প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ১১, সর্বোচ্চ ১৪, সরু চাল সর্বনিম্ন ১৬, সর্বোচ্চ ৩০, আটা সর্বনিম্ন ১২, সর্বোচ্চ ১৫, সয়াবিন (লুজ) সর্বনিম্ন ৩২, সর্বোচ্চ ৪২, পিঁয়াজ সর্বনিম্ন ৯, সর্বোচ্চ ৩০, ডাল মশুর সর্বনিম্ন ৩৪, সর্বোচ্চ ৪০, আলু সর্বনিম্ন ৫, সর্বোচ্চ ১১, লবণ সর্বনিম্ন ৭, সর্বোচ্চ ১১ টাকা। ২০০৫ সালে (চারদলীয় জোট ক্ষমতা ছাড়ার বছর) মোটা চাল সর্বনিম্ন ১৬, সর্বোচ্চ ১৯, সরু সর্বনিম্ন ২০, সর্বোচ্চ ২৬, আটা সর্বনিম্ন ১৬, সর্বোচ্চ ২১, চিনি সর্বনিম্ন ৩০, সর্বোচ্চ ৫০, সয়াবিন সর্বনিম্ন ৪৮, সর্বোচ্চ ৫০, পিঁয়াজ সর্বনিম্ন ১১, সর্বোচ্চ ৪৮, মশুর ডাল সর্বনিম্ন ৪০, সর্বোচ্চ ৫২ টাকা। ২০০৮ সাল বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের বছর মোটা চাল প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ২৮, সর্বোচ্চ ৩৫, সরু সর্বনিম্ন ৩৫, সর্বোচ্চ ৪৫, আটা সর্বনিম্ন ৩৭, সর্বোচ্চ ৪৫, চিনি সর্বনিম্ন ২৯, সর্বোচ্চ ৪৩, সয়াবিন সর্বনিম্ন ৯২, সর্বোচ্চ ১২২, পিঁয়াজ সর্বনিম্ন ১২, সর্বোচ্চ ৩০ টাকা। টিসিবির ২.২.১১ইং তারিখে বাজার মনিটরিং রিপোর্টে বলা হয় গত এক বছরে গড়ে প্রতি কেজি চালের দাম ২০.৫১, এক মাসে ৬.৮২ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে সরু চাল ৩৪ থেকে ৪২, ৪৪ থেকে ৫২, মাঝারি ৩০ থেকে ৩৮, ৩৫ থেকে ৪২, মোটা (ইরি/চায়না) ২৬ থেকে ৩৫, ২৮ থেকে ৩৭ টাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আটা ২১ থেকে ৩৩, ২৫ থেকে ৩৬, ময়দা ৩০ থেকে ৩৫, ৩৪ থেকে ৪০ টাকায় বৃদ্ধি পায়। ডাল মশুর ১ বছরে ১৩ শতাংশ কমেছে। তবে গত একমাস যাবত আবার বাড়ছে বলে উল্লেখ করা হয়। ছোলা এক বছরে ৪৪ থেকে ৫২, ৪৮ থেকে ৫৮ টাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া গত এক মাস ও এক বছরে রসুন যথাক্রমে ১৩.৩৩ ও ৬১.৯০, আমদানি করা রসুন যথাক্রমে ২৪ ও ৫৫ শতাংশ, হলুদ শূন্য ও ৮০.৬০ শতাংশ, বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সময়ে দ্রব্যমূল্য পূর্ববর্তী বিএনপি সরকারের চেয়ে বৃদ্ধি পায়। একই সাথে বৃদ্ধি পায় জীবন-যাত্রার ব্যয়। ৩/১/২০০১ প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকে সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (সিএফএসডি) এক বছরে জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়- ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে এক বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় ৫৪.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে আয়-ব্যয়ের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। আয় যথারীতি সীমিত আকারে থাকলেও ব্যয়ের মাত্রা বেড়েই চলছে। চারদলীয় জোট ক্ষমতা ছাড়ার অর্থবছরে (২০০৫-০৬) সমগ্র গ্রামীণ এলাকায় ভোক্তার মূল্যসূচক ছিল সাধারণ ২.৫৬ যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৬.৮৩ শতাংশে বৃদ্ধি পায়। একই সময়ে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ৭.৬২ ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
দ্রব্যমূল্য নিয়ে বর্তমান সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলছেন। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ আর ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানো ছিল আওয়ামী লীগের বড় অঙ্গীকার। ২০০৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো ও আমার দেশ, ২০০৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর দৈনিক সংগ্রাম ও জনকণ্ঠ এবং ২০০৮ সালের ৩ ডিসেম্বর নয়াদিগন্ত তদানীন্তন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর অঙ্গীকারের কথা প্রকাশ করে। প্রধানমন্ত্রী সেদিন সংসদে একথা অস্বীকার করার আগেও বলেছেন যে, তিনি ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর কথা বলেননি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, দ্রব্যমূল্য অর্ধেকে কমিয়ে আনা হবে। কিন্তু গত দুই বছরে অর্ধেকের বেশি সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ এখন দিশেহারা।