তারপরও আমার আজ মন ভালো নেই। আমার একমাত্র ছেলে আর ছোট্ট মেয়েটা কাল থেকে ভীষণ অসুস্থ। জ্বর। সম্ভবত ঋতুর পালাবদলের জ্বর। বিষয় সেটা নয়। বিষয় হলো ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছিল। বৃষ্টিতে ভিজলে আমার মেয়েটা উদ্দাম হয়ে ওঠে। ওর উচ্ছ্বাস দেখে ভীষণ ভালো লাগে। আমার সেই শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়। শৈশবে আমিও বৃষ্টিতে অমন ভিজতাম। ভিজে ভিজে পিছল খেলতাম। এক পিছলে কে কতদূর যেতে পারে সেই প্রতিযোগিতাই চলতো আমার বন্ধুদের সাথে। তারপর গা কাদা মাখামাখি হলে আমাদের সে কি উচ্ছ্বাস! বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই গায়ের ময়লা পরিষ্কার করতাম। তারপর দৌড়ে গিয়ে লাফ দিয়ে নামতাম পুকুরে। আহ্ সেই শৈশব আর ফিরে পাবো না! ফিরে পাবো না সেই সোনালী দিনগুলো। আমাদের শিশুরা তো কাদা কি তা-ই জানে না। তারা ময়লা-আবর্জনা আর ইট-কংক্রিট দেখে দেখে বড় হচ্ছে। পুকুর দেখলেই আনন্দ করে, কিন্তু পানিতে নামতে ভয়! যদি ডুবে যায়! কত দুর্ভাগ্য আমাদের সন্তানেরা- তারা সাঁতার শেখারও সুযোগ পায় না! হায়রে শহর, হায়রে আধুনিক সভ্যতা! এই শহুরে ফার্মের বাচ্চারা একদিন প্রকৃতিকে ভুলে যাবে নিঃসন্দেহে।
একটু আগে ফেসবুক খুলে দেখি আমার বড় মেয়েটা বেলকনির গ্রিলের বৃষ্টির ফোঁটার ছবি তুলে দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে- এর চেয়ে ভালোভাবে শহরে বৃষ্টি উপভোগ করা যায় না।
ওর পোস্টটা আমাকে একটা ধাক্কা দিল। আসলেও তো তাই। শহরের মেয়েরা বৃষ্টিতে ভিজতে পারে না, বৃষ্টিতে হাঁটতে পারে না, পুকুরে নেমে গোসল করতে পারে না। বৃষ্টি মানেই শহুরে মেয়েদের জন্য এক বিড়ম্বনা। অথচ আমার শৈশবে আমার সমবয়সী মেয়েরাও আমাদের সাথে বৃষ্টিতে কাকভেজা হতো। পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়তো। পুকুরের এপাড় ওপাড় সাঁতার দিতো। সে সময় আমরা টিভি সিরিয়াল দেখতাম six million dollar man আর the bionic woman ।
তো হলো কি আমাদের সাথে দৌড়-ঝাঁপ করা একটা মেয়েকে বায়োনিক ওমেন-এর নায়িকার মতো মনে হতো। কতোবার ভেবেছি ওই মেয়েটাকে কথাটা বলবো। কিন্তু আর কোনদিন বলা হয় নি। এমন আরো কত কত মজার কথা মনে পড়ে যায় আমার মেয়ের দীর্ঘশ্বাস থেকে। এখন আফসোস হয়- শৈশব এত ছোট কেন?