আপুটার বাবা ছিলেন ভারতীয় সেনা,'৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ,মা বাংলাদেশি।কিন্তু আপুটা মনেপ্রাণে বাঙ্গালী।
"আমার সোনার বাংলা,আমি তোমায় ভালোবাসি" গাইতে গাইতে গলা ধরে আসতো তার।মনের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে!
আমার যতটুকু মনে পড়ে তখনো তরুণদের হাতে হাতে ডিএসএলআর ছিলোনা,কিন্তু আপুটার হাতে ছিলো।
আমি গাড়ির জন্য দাড়িয়েছিলাম।গাড়ি মানে ট্যাম্পু। জামানখান থেকে কাজির দেওরী হাটার রাস্তা।এতটুকু পথ ২০/২৫ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে যাওয়ার মানুষ আমি না। আবার হেটে যেতেও মন চাচ্ছেনা আজ।অগত্যা রিকশাই নিব ভাবলাম!
কিন্তু হায়! রিকশাওয়ালাদের যে ভাব! "এই যাবেন কাজিদ্দেওরি?"
রিকশাওয়ালা ডানে-বামে মাথা নাড়ায়,মানে সে যাবেনা।লক্ষ্য করলাম সেই আপুটা রিকশা নিচ্ছে।যেই রিকশাওয়ালাকে আমি বলেছিলাম এবার সেই রিকশাওয়ালাই উনাকে নিয়ে নিলো।কেন আমাকে না নিয়ে আপুটাকে নিলো আমি সেটা ভাবছিলাম না,আমার মন ওই চিন্তায় নেই। আমি বললাম, আপু আপনি কি কাজিদ্দেওরির দিকে যাচ্ছেন? হ্যা বলার সাথে সাথে বললাম "প্লিজ আমাকে নেন না"
উনি এক সেকেন্ড ইতস্তত করলেন এবং বললেন "আচ্ছা উঠো"
তারপর থ্যাংকু বলে আরো কিছু কথা।কোথায় পড়ো,কোন সাবজেক্ট,কোন ইয়ার এইসব।উত্তর পজিটিভ মনে হওয়ায় আর আমার ভদ্রতাসূচক সম্ভাষণ দেখে উনার অস্বস্তিটা একটু কমে গেলো বলে মনে হলো।
আপুটা দেখতে কেমন ছিলো? সুন্দর? হয়তো! একটা জিনিস আমার অন্যরকম লাগছিলো,সেটা হচ্ছে উনার কপালের টিপ।রিকশায় উঠার সময়ই খেয়াল করেছিলাম,এখন আর পারছিনা কারণ
আমি কথা বলছিলাম উনার দিকে না তাকিয়ে,অনেকটা পিচঢালা রাস্তার গতিময়তার দিকে। কোন এক অদ্ভুত কারণে আধুনিককার মেয়েদের টিপ পড়াকে আমার কেন জানি প্রাচীনত্ব মনে হয়।তাই উনাকে আমি ভাবছিলাম নব্বইয়ের দশকের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ধ্রুবদী তরুণীরুপে। উনি কথায় কথায় বললেন যে উনি এই পর্যন্ত ৩৫টার মতো দেশ ভ্রমণ করেছেন।এটা অবশ্যই অবাক করেছিলো,কারণ ২৭-২৮শের কোন তরুণী যদি বলে সে ৩৫টা দেশ ভ্রমণ করেছে সেটা কি বিশ্বাস হয়! (পরে অবশ্য ফেসবুকে উনার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের ছবি দেখে বিষয়টা বিশ্বাস করেছিলাম)
রিকশাটা কাজির দেওরি হয়ে ডানে মোড় নিলো।কিছুটা সামনে যেয়ে উনি রিকশাওয়ালাকে থামালেন।আমি ভাড়া দিতে উদ্ধত হলাম,যদিও আমি মনে মনে চাচ্ছিলাম ভাড়াটা উনিই দিক।
উনি হাসিমাখা মুখে আমাকে বাই বললেন আর বললেন "দেখা হবে আবার" বলে আবার হাসি।আমি জানি উনার সাথে সহসা আর দেখা হবেনা,হলেও এইভাবে ৭- ৮ মিনিটের রিকশা-ভ্রমণ হবেনা কিংবা হলেও ভাড়াটা আমাকে উনি দিতে দিবেন না। এসব চিন্তা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের...
সেই আপুটা গলিপথটা দিয়ে চলে যাচ্ছিলো,কেন জানি নিজেকে কৃতজ্ঞ মনে হচ্ছিলো উনার কাছে।
আপুটার নাম জানি কি ছিলো ঠিক মনে পড়ছেনা এখন আর।
থাক মনে পড়ারই বা দরকার কি! কিছু কিছু মানুষের হয়তো নামটা মনে থাকেনা কিন্তু থাকে তাদের সাথে কাটানো কিছু সুন্দর মুহুর্ত.......