"দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া......!"
ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত, আখাউড়া স্থল বন্দর নামেও পরিচিত।
সীমান্তের প্রধান আকর্ষন, 'ফ্ল্যাগ ডাউন'।
প্রতিদিন বিকাল পাঁচটা বিশ মিনিটে জাকজমকপূর্ণভাবে একই সময়ে, একই সাথে বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা নামানো হয়।
অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে দেখতে, অথচ সময় সুযোগের অভাবে কাছে থেকেও আমার যাওয়া হয়নি...!
এবার বড় ভাইয়ের উদ্যোগে, ঈদের কয়েকদিন পরে নতুন প্রজন্মদের নিয়ে স্বপরিবারে গেলাম ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে।
উদ্দেশ্য 'ফ্ল্যাগডাউন' দেখা এবং নতুন প্রজন্মকেও দেখানো।
ঈদের পরপর হওয়ায় দর্শনার্থীদের প্রচুর ভীড়, ভীড় ঠেলে ভিতরে ঢুকলাম।
বাংলাদেশ সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছি, ওপাশে ভারত সীমান্ত। মাঝখানে শুধু একটা ব্যারিকেড দেওয়া, ওপাশেও আজ প্রচুর ভীড়....
আজ ওদের রাখিবন্ধন ছিলো, ভারতের সীমান্ত রক্ষীদের হাতে রাখি বাঁধতে তাদের বোনেরা এসেছিলো।
আমাদের কয়েকজন সীমান্ত রক্ষীর হাতেও দেখলাম রাখি বাঁধা। জিজ্ঞেস করতেই গর্ব করে বললো, "ও দেশের বোনেরা বেঁধে গেছে...।"
অবাক হলাম দু'দেশের সীমান্ত রক্ষীদের সৌহার্দ্য দেখে।
অথচ কিছুদিন আগে একটা ভিডিওতে দেখলাম, ভারতের কোন এক যায়গায় যেন মুসলমানদের ঈদের নামাজ পড়তে দেয় নি। কিছু উগ্র তরুন, জামাত থেকে মুসুল্লিদের উঠিয়ে দিয়েছে.....!
ভিসা-পাসপোর্ট করা দু'দেশের যাত্রী, সীমান্ত দিয়ে দু'দেশে আসা যাওয়া করছে।
কিছুক্ষন আগেও ইউনিফর্ম পরা সীমান্ত রক্ষীদের বেশভূষা, হঠাৎ পাল্টে গেলো। ইউনিফর্মের উপরে আরও কিছু পরিধেয় যোগ করে রেডি হলো, 'ফ্ল্যাগ ডাউনের' আনুষ্ঠানিকতার জন্য....।
শুরু হলো একসাথে দু'দেশের পতাকা নামানোর আনুষ্ঠানিকতা ।
পেছন থেকে একজন বলছে, "পতাকা নামাতে বুঝি এত কিছু করতে হয়"।
তিন অক্ষরের "প-তা-কা" শুধু একটা নাম না, এই পতাকা বহন করে একটা দেশের সম্মান, একটা দেশের গৌরব.....!
প্যারেড, স্যালুট, বিউগলের সুরে একসাথে দু'দেশের পতাকা নামানো হচ্ছে।
নিজের দেশের পতাকা নামানোর এই দৃশ্যে গা শিউরে উঠলো...... আহা, যাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই পতাকা, তারা যদি দেখে যেতে পারতো এই পতাকার সম্মানটুকু....!
কি টাইমিং, একটু এদিক সেদিক হচ্ছে না দু' দেশের পতাকা নামাতে। একজন সৈনিক পতাকাটা ঝেড়ে ভাজ করে দু'হাতে নিয়ে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো, যেন সারাদিনের লেগে থাকা ধূলোময়লা ঝেড়ে অতি যত্নে ধরা....!
ভারত সীমান্তেও একই ভাবে পতাকা ভাজ করে ধরে রেখেছে। একপর্যায়ে প্যারেডের মধ্য দিয়েই পতাকাটিকে যথাস্থানে নিয়ে গেলো।
এভাবেই 'ফ্ল্যাগ ডাউন' আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো...!
সেই সীমান্ত রক্ষীরা এবার আগ্রহীদের সাথে ফটোসেশন করছে, সেল্ফি তুলছে.....।
আধার হয়ে আসছে, এবার বাড়ি ফেরার পালা। আসার সময় ঘাড় ফিরিয়ে আবারো দেখে নিলাম, আমার এলাকায় অবস্থিত দু'দেশের সীমান্ত। আমার দেশের পতাকা নামানোর দৃশ্য, মনে গেঁথে রইল,,,,,,
"সারাবিশ্বের বিষ্ময়, তুমি আমার অহংকার....!"
ধন্যবাদ দু'দেশের সরকারকে, সীমান্তে এত আনুষ্ঠানিক ভাবে পতাকা নামানোর আনুষ্ঠানিকতার জন্য।
ধন্যবাদ সেই সব সীমান্ত রক্ষীদের, প্রতিদিন যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এত সুন্দর 'ফ্ল্যাগ ডাউন' হয়।
ধন্যবাদ আমার বড় ভাইটাকে যার উদ্যোগে নিজে এবং নতুন প্রজন্মদের সীমান্তে দেশের পতাকা নামানোর আনুষ্ঠানিকতা দেখাতে পারা.....
(ফ্ল্যাগডাউন দেখার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও, আমার মত যাদের সময় সুযোগ হয় না। তাদের জন্য কিছু ছবি )