যারা কোরআন মুসহাফ (সংকলিত/ লিপিবদ্ধ) করেছিলেন তারা সবাই উচ্চস্তরের সাহাবী ছিলেন। সেই সময় শত শত সাহাবীদের বুকে কোরআন টাটকা মুখস্ত ছিল। ছিল নানা জায়গায় লিখিত আকারেও। হযরত আবু বকর, উমার এবং সর্বশেষ হযরত উসমানের আমলে তা চূড়ান্তভাবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। কোরআন লিপিবদ্ধ করনে সাহাবীরা ছিলেন অথেনটিক পারসন। তাদের সামনেই কোরআন নাজিল হয়েছে, তারা রাসুলের মুখ থেকে শুনেছেন এবং বুকে ধারন করে নিয়েছেন। কাজেই তারাই হলেন অথেনটিক পারসন। কোরআনের কোন আয়াত অমুক তমুক থেকে শুনে শুনে লেখা হয়নি। খোদ সাহাবীরাই লিপিবদ্ধ করেছেন।
কিন্তু মহানবীর মৃত্যুর ২৫০-৩০০ বছর পরে অমুক তমুক থেকে সেই তমুক আরেক তমুক থেকে শুনে শুনে রাসুলের নামে লেখা হাদিসগুলো বুখারি এবং তার সাগরেদরা লিপিবদ্ধ করেছেন। বুখারি-মুসলিম গং তাদের নিজেদের মাপকাঠিতে তাতে সহীহ সীলও মেরে দিয়েছেন। উমাইয়া-আব্বাসীয় শাসকেরা তা নিজেদের রাজতন্ত্রের স্বার্থে মানুষকে গিলিয়েছে কখনো জাহান্নামের ভয় দেখিয়ে, কখনো কাফের হবার ভয় দেখিয়ে। এই হাদিস দ্বারাই ইসলাম থেকে বিচ্যুত এবং আহলে বাইত বিদ্বেষী মুয়াবিয়াকে উচ্চস্তরের সাহাবীতে পরিণত করা গেছে। মানুষকে নানা বিধি নিষেধের খড়গে বেঁধে রাখা গেছে। মানুষের স্বাধীন চিন্তার শক্তি কেড়ে নেয়া গেছে। ইসলামকে নানাভাগে বিভক্ত করা গেছে। শাসকদের ইচ্ছেমত একটা ফরমেটের ভিতর জীবন যাপনে বাধ্য করা গেছে। রাজতন্ত্রকে ইসলামী মর্মে প্রমাণ করা গেছে। ব্যস। আর কি চাই, হাদিস সংকলন সার্থক। এটা ধরে রাখতে পারলে শাসকশ্রেনী এবং মোল্লাশ্রেনী উভয়েরই লাভ। তাই বলা হয় হাদিস না মানলে সে কাফের। মোক্ষম অস্ত্র। সাধারন মানুষ তো এতো কিছু আর বুঝেন না। আর এভাবেই হাদিসের ব্যবসা চলে এসেছে। একথা বলাই বাহুল্য যে, ১০% হাদিস কিন্তু সত্যিই রাসুলের হাদিস। কেননা তা কোরআন পরিপন্থী নয়। এই ১০% হাদিস দিয়েই ৯০% বানোয়াট হাদিসকে জায়েজ করা হয়েছে। উমাইয়ারা তাদের শাসনকে বৈধ করতে মহানবীকে কখনো শাসক, কখনো নিয়ন্ত্রণকারী, কথনো দয়ালু, কখনো ধর্ষক, কখনো কামুক বা শিশুকামী মর্মে চিত্রিত করা হয়েছে।
এবার আসা যাক, বুখারি গং কি সাহাবি ? উত্তর, না। তারা কি তাবেইন? উত্তর হলো, না। তারা কি তাবেতাবেইন? উত্তর হলো, না। তারা কি আরবের লোক? উত্তর হলো, না। তারা সবাই তৎকালীন পারশ্যের নাগেরিক। ইমাম বুখারির বাড়ি আজকের উজবেকিস্থানে। তো তাদেরকে হাদিস লিখতে কে বললো? উত্তর হলো, নিজেদের কৃতিত্ব দেখাতেই তারা সেযুগে এই কাজটি করেছেন। সাহাবী, তাবেইন বা তাবেতাবেইন না হলে তাদের লেখা হাদিস রাসুলের হাদিস বলে কেন মানবেন? তারা তো কোনমতেই অথেনটিক পারসন নয়। তাদের সামনে রাসুল হাদিস বলেননি। তারা রাসুলকে দেখেনওনি। ২০০-৩০০ বছরের পার্থক্য।
তারা কিছু লিখে বলে দিলন, এগুলো রাসুলের বানী। এগুলো মানা ফরজ। না মানলে কাফের। তখন তা যাচাই বাছাই না করেই মানা হয়েছিল। কিন্তু তারা সহীহ বললেই তো তা সহীহ হয়ে যায় না।
তাদের আনিত নবীর নামের এসব কিতাব কিছু মানুষ সহিহ বললো কিছু জাল বললো! মানুষই হলো রাবি, মানুষই তার সত্যয়নকারী ৷ যার সংরক্ষনের দায়িত্ব আল্লাহ নেননি ৷ আল্লাহর কোরআন বলছে, কোরআন আহসানাল হাদীস (উত্তম বানী) সম্বলিত কিতাব (৩৯:২৩) এর বাইরে সব লাহওয়াল হাদীস (অসার বানী, মানুষের মনগড়া বানী)৩: ১৬।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪১