somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মীয় গোঁড়ামি ও হানাফি আহলে হাদিস কাদা ছোড়াছুড়ি .।..। পর্ব - ২

০৫ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসসালামুয়ালাইকুম ……… উল্লেখিত শিরোনামের প্রথম পর্ব নিশ্চুই আপনারা পড়েছেন । আজ ২য় পর্বে বাংলাদেশে ইসলামে প্রচলিত কিছু মতভেদের নাম এবং কারন বিশ্লেষণ করবো ।

পাঠক, বিশ্বের প্রতিটি ধর্মেই কিছু মতভেদ আছে বা থাকবেই । মত পার্থক্যের দিক থেকে হিন্দু ধর্ম সব চেয়ে এগিয়ে । ক্রিস্টান, বুদ্ধ, শিখ, জৈন এসব ধর্মেও রয়েছে বিভিন্ন ধারা উপধারা । সম্ভবত মতভেদ আছে বলেই মানুষের মধ্যে ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকে যে কোনটা সঠিক মত । সব যদি পানির মত পরিষ্কার হয়ে যায় তাহলে ত আর গবেষণার প্রয়োজন নেই । আল্লাহ্ সম্ভবত ইসলাম ধর্মে এজন্যই কিছু মতভেদ রেখেছেন যাতে মানুষ এটা নিয়ে ভাবে গবেষণা করে খুঁজে বের করে তার সঠিক দ্বীন । মতভেদ না থাকলে আমি নিজেও হয়ত এখন সামু তে ব্লগ লিখতে বসতাম না ।

মত পার্থক্যের আরেকটা বড় কারন মহানবীর আমলে লিখে রাখার ভাল প্রযুক্তি ছিলো না । গাছের পাতা, ভেড়ার চামড়া ইত্যাদিতে লিখে রাখতে হত নাজিল হওয়া কোরআনের আয়াত । রাসুল (সঃ) কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন যেন হাদিস তার জীবদ্দশায় লিপিবদ্ধ করা না হয় । এতে করে কোরআনের সাথে মহানবীর হাদিস মিশে যাওয়ার আশঙ্কা ছিলো । রাসুল (সঃ) এর ইন্তেকালের পর যখন ধীরে ধীরে দূর দুরান্তে ইসলাম ছড়িয়ে পরলো তখন হাদিস লিপিবদ্ধ না থাকায় অনেক সমস্যা দেখা দিলো । এ ক্ষেত্রে আমাদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিলেন ইমামগন । তারা গবেষণা করে মাযহাব বা তরিকা প্রচলন করেন যথাক্রমে – হানাফি, শাফিঈ, মালিকি এবং হাম্বলি মাযহাব । এতে করে সাধারণ মুসলিমরা সঠিক আমলের দিক নির্দেশনা পেলেন ।

কিন্তু ইমামগণের কোন মাযহাব একদম নির্ভুল ছিলো না । পুরো মধ্যপ্রাচ্যে মুখে মুখে তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো লক্ষ লক্ষ জাল, যঈফ এবং বিশুদ্ধ হাদিস । লক্ষ লক্ষ হাদিস থেকে বাছাই করে বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা মাযহাব প্রচলন খুব খুব কষ্ট সাধ্য ব্যাপার ছিলো । তবুও আল্লাহ্র রহমতে তারা আজীবন চেষ্টা করেছেন এবং ইমামগণ ৯০% - ৯৫% পর্যন্ত সফলভাবে মাযহাব প্রচলন করেছেন । ঈমামগন তাদের প্রচেষ্টাকে পরিপূর্ণতা দিতে পারেন নি তাই ত প্রত্যেকেই অনুসারীদের উদ্দেশে বলে গিয়েছেন ‘’ তোমরা কোন ব্যাপারে যখনি সহি হাদিস হাতে পাবে সেটাকেই আমার মাযহাব মনে করবে ‘’ ।

সময়ের প্রয়োজনে কয়েক বছর পর থেকেই হাদিস সংকলন এবং জাল, বিশুদ্ধ যাচাই বাছাই করে সহি হাদিস লিপিবদ্ধ শুরু হয় । এ ক্ষেত্রে অগ্রগামী সহি বুখারী, সহি মুসলিম, সহি তিরমীজি, আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, ইবনে মাজাহ । এই কিতাব গুলো সিহা সিত্তাহ নামে পরিচিত । এর মধ্যে সহি বুখারী হচ্ছে বিশুদ্ধতার দিক থেকে কোরআনের পরেই অবস্থান । ঈমাম বুখারী ৪ লক্ষ হাদিস থেকে বাছাই করে মাত্র ৭ হাজার বিশুদ্ধ হাদিস তার বইতে লিপিবদ্ধ করেছেন । অন্য কিতাব গুলোও প্রায় নির্ভুল । কথা ছিলো আমরা সহি হাদিসের কিতাব অনুসরণ করে মাযহাবের কিছু বিষয় সংশোধন করে নেবো কিন্তু আমরা তা করি নি । হাদিসের কিতাব কিতাবের জায়গায় থেকেছে আর আমরা ঈমামদের মাযহাবকে বিকৃতি করে চলেছি । তাই দিনে দিনে বেড়েছে মতভেদ ।

ভারত উপমহাদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে মহানবীর ইন্তেকালের প্রায় ৭০০ বছর পর সূফীবাদের মাধ্যমে । তখনকার সূফী দরবেশগণ বুজুর্গ আলেম ছিলেন কিন্তু এই অঞ্চলের অশিক্ষা কুশিক্ষার ফলে যুগে যুগে বেড়েছে মাজার পূজারি , পীর কেন্দ্রিক ভণ্ডামি, ধর্ম ব্যবসায়ি ইত্যাদি । তাই এই অঞ্চলের অবস্থা আরও বেশি খারাপ ।

চলুন দেখি বাংলাদেশে কি কি ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে ........

1. তারাবী নামাজ ৮ নাকি ২০ রাকাত ।
2. মিলাদ আছে কি নেই ।
3. রাফঊল ইয়াদাইন (রুকুর আগে পরে হাত উঠানো) আছে কি নেই ।
4. নামাজে আরবিতে নিয়ত পড়া লাগে কিনা ।
5. বিতির নামাজ ১ নাকি ৩ রাকাত এবং দুআ কুনুত কি পরতেই হয় ।
6. নামাজে হাত কোথায় বাধবো ।
7. জায়নামাজের দুআ আছে কিনা ।
8. ঈমামের পেছনে মুক্তাদিদের সূরা ফাতিহা পড়তে হবে কিনা ।
9. সূরা ফাতিহার পর জোরে আমীন বলতে হয় কিনা ।
10. জামাত শেষ হলে ঈমামের মুনাজাত ধরা সহি কিনা ।
এগুলো ছাড়াও আরও বেশ কিছু মতভেদ আছে বাংলাদেশে । পর্ব – ৩ এ আমরা এই মতভেদ সম্পর্কে সহি হাদিসে কি বলা আছে তা জানবো ।
পর্ব- ২ এই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন । আল্লাহ্‌ হাফেজ
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:১৩
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×