আসসালামুয়ালাইকুম ……… উল্লেখিত শিরোনামের প্রথম পর্ব নিশ্চুই আপনারা পড়েছেন । আজ ২য় পর্বে বাংলাদেশে ইসলামে প্রচলিত কিছু মতভেদের নাম এবং কারন বিশ্লেষণ করবো ।
পাঠক, বিশ্বের প্রতিটি ধর্মেই কিছু মতভেদ আছে বা থাকবেই । মত পার্থক্যের দিক থেকে হিন্দু ধর্ম সব চেয়ে এগিয়ে । ক্রিস্টান, বুদ্ধ, শিখ, জৈন এসব ধর্মেও রয়েছে বিভিন্ন ধারা উপধারা । সম্ভবত মতভেদ আছে বলেই মানুষের মধ্যে ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকে যে কোনটা সঠিক মত । সব যদি পানির মত পরিষ্কার হয়ে যায় তাহলে ত আর গবেষণার প্রয়োজন নেই । আল্লাহ্ সম্ভবত ইসলাম ধর্মে এজন্যই কিছু মতভেদ রেখেছেন যাতে মানুষ এটা নিয়ে ভাবে গবেষণা করে খুঁজে বের করে তার সঠিক দ্বীন । মতভেদ না থাকলে আমি নিজেও হয়ত এখন সামু তে ব্লগ লিখতে বসতাম না ।
মত পার্থক্যের আরেকটা বড় কারন মহানবীর আমলে লিখে রাখার ভাল প্রযুক্তি ছিলো না । গাছের পাতা, ভেড়ার চামড়া ইত্যাদিতে লিখে রাখতে হত নাজিল হওয়া কোরআনের আয়াত । রাসুল (সঃ) কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন যেন হাদিস তার জীবদ্দশায় লিপিবদ্ধ করা না হয় । এতে করে কোরআনের সাথে মহানবীর হাদিস মিশে যাওয়ার আশঙ্কা ছিলো । রাসুল (সঃ) এর ইন্তেকালের পর যখন ধীরে ধীরে দূর দুরান্তে ইসলাম ছড়িয়ে পরলো তখন হাদিস লিপিবদ্ধ না থাকায় অনেক সমস্যা দেখা দিলো । এ ক্ষেত্রে আমাদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিলেন ইমামগন । তারা গবেষণা করে মাযহাব বা তরিকা প্রচলন করেন যথাক্রমে – হানাফি, শাফিঈ, মালিকি এবং হাম্বলি মাযহাব । এতে করে সাধারণ মুসলিমরা সঠিক আমলের দিক নির্দেশনা পেলেন ।
কিন্তু ইমামগণের কোন মাযহাব একদম নির্ভুল ছিলো না । পুরো মধ্যপ্রাচ্যে মুখে মুখে তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো লক্ষ লক্ষ জাল, যঈফ এবং বিশুদ্ধ হাদিস । লক্ষ লক্ষ হাদিস থেকে বাছাই করে বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা মাযহাব প্রচলন খুব খুব কষ্ট সাধ্য ব্যাপার ছিলো । তবুও আল্লাহ্র রহমতে তারা আজীবন চেষ্টা করেছেন এবং ইমামগণ ৯০% - ৯৫% পর্যন্ত সফলভাবে মাযহাব প্রচলন করেছেন । ঈমামগন তাদের প্রচেষ্টাকে পরিপূর্ণতা দিতে পারেন নি তাই ত প্রত্যেকেই অনুসারীদের উদ্দেশে বলে গিয়েছেন ‘’ তোমরা কোন ব্যাপারে যখনি সহি হাদিস হাতে পাবে সেটাকেই আমার মাযহাব মনে করবে ‘’ ।
সময়ের প্রয়োজনে কয়েক বছর পর থেকেই হাদিস সংকলন এবং জাল, বিশুদ্ধ যাচাই বাছাই করে সহি হাদিস লিপিবদ্ধ শুরু হয় । এ ক্ষেত্রে অগ্রগামী সহি বুখারী, সহি মুসলিম, সহি তিরমীজি, আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, ইবনে মাজাহ । এই কিতাব গুলো সিহা সিত্তাহ নামে পরিচিত । এর মধ্যে সহি বুখারী হচ্ছে বিশুদ্ধতার দিক থেকে কোরআনের পরেই অবস্থান । ঈমাম বুখারী ৪ লক্ষ হাদিস থেকে বাছাই করে মাত্র ৭ হাজার বিশুদ্ধ হাদিস তার বইতে লিপিবদ্ধ করেছেন । অন্য কিতাব গুলোও প্রায় নির্ভুল । কথা ছিলো আমরা সহি হাদিসের কিতাব অনুসরণ করে মাযহাবের কিছু বিষয় সংশোধন করে নেবো কিন্তু আমরা তা করি নি । হাদিসের কিতাব কিতাবের জায়গায় থেকেছে আর আমরা ঈমামদের মাযহাবকে বিকৃতি করে চলেছি । তাই দিনে দিনে বেড়েছে মতভেদ ।
ভারত উপমহাদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে মহানবীর ইন্তেকালের প্রায় ৭০০ বছর পর সূফীবাদের মাধ্যমে । তখনকার সূফী দরবেশগণ বুজুর্গ আলেম ছিলেন কিন্তু এই অঞ্চলের অশিক্ষা কুশিক্ষার ফলে যুগে যুগে বেড়েছে মাজার পূজারি , পীর কেন্দ্রিক ভণ্ডামি, ধর্ম ব্যবসায়ি ইত্যাদি । তাই এই অঞ্চলের অবস্থা আরও বেশি খারাপ ।
চলুন দেখি বাংলাদেশে কি কি ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে ........
1. তারাবী নামাজ ৮ নাকি ২০ রাকাত ।
2. মিলাদ আছে কি নেই ।
3. রাফঊল ইয়াদাইন (রুকুর আগে পরে হাত উঠানো) আছে কি নেই ।
4. নামাজে আরবিতে নিয়ত পড়া লাগে কিনা ।
5. বিতির নামাজ ১ নাকি ৩ রাকাত এবং দুআ কুনুত কি পরতেই হয় ।
6. নামাজে হাত কোথায় বাধবো ।
7. জায়নামাজের দুআ আছে কিনা ।
8. ঈমামের পেছনে মুক্তাদিদের সূরা ফাতিহা পড়তে হবে কিনা ।
9. সূরা ফাতিহার পর জোরে আমীন বলতে হয় কিনা ।
10. জামাত শেষ হলে ঈমামের মুনাজাত ধরা সহি কিনা ।
এগুলো ছাড়াও আরও বেশ কিছু মতভেদ আছে বাংলাদেশে । পর্ব – ৩ এ আমরা এই মতভেদ সম্পর্কে সহি হাদিসে কি বলা আছে তা জানবো ।
পর্ব- ২ এই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন । আল্লাহ্ হাফেজ
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:১৩