সময়গুলো খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে । যে সময়টা হারিয়েছি কোন কিছুর বিনিময়ে তা আর ফেরত পাবো না । একটা সময় ছিল যখন লোডশেডিং হলে বাড়ির উঠানে মছল্লা/ওলগা/পাটি বিছিয়ে মা চাচী ভাবি দাদীরা মিলে আড্ডা দিত । আড্ডার বিষয় বস্তু আগের দিন দেখা কোন নাটক সিনেমার চর্বিত চর্বণ । সিনেমাকে তারা বই বা ছবি নামে ডাকতো । অনেক ভাবি চাচীকে দেখেছি সিনেমার শাবানা ববিতার কষ্টে চোখে পানি । কতটা আবেগ প্রবন ছিলেন । পরিবারের বেটা ছেলেরা যেত টং দোকানে চা বা সিগারেট ফুঁকতে ।
পাড়ায় শুধু আমাদেরই টিভি ছিলো সাদা কালো ১৪ ইঞ্চি নিপ্পন টিভি । প্রায় প্রতিদিন স্পষ্ট ছবির জন্য এন্টেনা ঘুরাতে হত । পাড়ার ১৫-২০ জন এক সাথে বসে টিভি দেখা সাথে মুড়ি চানাচুর বা কোন ভত্তা । মেগগাইভার, আলিফ লায়লা, টারজান, রোবকোপ, ছায়াছন্দ, ইত্যাদি, রবিন হুড, সিন্দবাদ, নাম মনে না থাকা জটিল সব নাটক । আর যদি বাড়িতে ভিসিআর (সিনেমার ডিস্ক) আনা হত তাহলে বাড়ি পুরো ভর্তি । এত লোক এক সাথে টিভি দেখা তখন আমার বিরক্ত লাগতো কিন্তু এখন বুঝি সেই সময়টার মর্ম । এখন ত কারেন্ট চলে গেলে মোবাইল হাতে যে যার রুমে । আড্ডা দিলেও সেখানে সেলফি খিচের যন্ত্রণা ।
এখন যত দামি ফল কিনিনা কেন ছোটবেলায় চুরি করা আম, কাঁঠাল, লিচু, নারিকেলের সেই স্বাদ আর পাবো না । এখনকার দিনে পুকুরে চাষ করা মাছের চেয়ে হাজার গুণ সুস্বাদু ছিল জলাশয়ের কই, মাগুর, শিং, বাইন, টাকি, শোল, টেংরা ইত্যাদি মাছ ।
বৃষ্টির দিনে স্কুল মজাই মজা । বৃষ্টি মানেই স্কুলে না গিয়ে ফুটবল খেলা আর মায়ের বকাবকি । সবচেয়ে বিরক্তিকর ছিলো খুব ভোরে উঠে মক্তবে যাওয়া । প্রায় প্রতিদিন সূরা নিয়ত না পারার জন্য হুজুরের হাতে মার খেতাম । তবে ভালো লাগতো যেদিন মিলাদ থাকতো ! ছোট গোল বিস্কিট, সাক্কর বড়া, বাতাসা, জিলাপি ইত্যাদি খাওয়ার জন্য বসে থাকতাম । কেউ আমাকে ২০ টাকা সেলামি দিলে ত কথাই নাই অন্তত ৪-৫ দিনের জন্য আমি রাজা ।
বলতে দ্বিধা নেই এখন যতই উন্নত পরিবেশে মলত্যাগ করি না কেন বাঁশ ঝাড়ের চিপার সেই মলত্যাগের মজা ভুলার নয় যদিও তা অস্বাস্থ্যকর ।
উল্লেখ না করা আরও অনেক ছোটবেলার মজার অতীত হারিয়ে ফেলেছি । আর আসবে না সেই দিন । মিডিয়া এবং পারিপার্শ্বিকতা আমাদের মাথায় খুব ভালো ভাবেই ঢুকিয়ে দিয়েছে যে সন্তান মানুষ করতে চাও তবে শহরে চলে যাও সেখানে ভর্তি যুদ্ধে নেমে ভালো স্কুলে ভর্তি করাও । ভাল স্কুল কলেজ মানেই সেখানে সব A+ পাওয়ারাই ভর্তি হয়েছে সুতরাং তেলে মাথায় তেল দেয়াই চলে । গ্রামের স্কুল কলেজ গুলোর মত মানুষ গড়ার কারখানা হয়ে উঠে না শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রী মফস্বল থেকেই উঠে আসে ।
আমার কথাগুলো কিছুটা সেকেলে মনে হলেও আমার মতে প্রতিটি মানুষের উচিত অন্তত কয়েক বছর গ্রামের পরিবেশে মানিয়ে থাকা । অন্তত অল্প পেয়ে কিভাবে গাল ভর্তি হাসতে হয় তা শেখা যায় । ছেলে মেয়ে খারাপ হয়ে যাওয়ার যথেষ্ট অনুসঙ্গ গ্রামে যেমন আছে তেমনি শহরেও । আমাদের সবারই ঠিকানা গ্রামের মসজিদের পাশের কবরস্থান । প্রত্যেকের পিতা মাতার কবরের পাশে নিশ্চুই নিজের জন্যও একটা জায়গা খালি রয়েছে । মাঝে অনেকটা বছর স্ত্রি সন্তানদের উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নোংরা শহরে অবিরাম ছোটা ছুটি ।
Photo source - google
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:২৫