পোস্টটি পুরোটাই মজার, সিরিয়াস কিছু নেই। কিন্তু দায়িত্ববোধ থেকে শুরুতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতেই হচ্ছে। এবারের ঈদ অন্যবারের চেয়ে আলাদা সেটা আমরা সবাই জানি, কিন্তু মানতে কি পারব? ভীড় থেকে দূরে থাকা, বারবার হাত স্যানিটাইজ করা, বাইরে গেলে মাস্ক/গ্লভস এর ব্যবহার ইত্যাদি সবাইকে করতে হবে - ঈদের মধ্যেও! ধর্মীয় আচারগুলো যতটা সম্ভব সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স রেখে পালন করতে হবে। ইসলাম সরল ও সুন্দর, জীবন বাঁচানো ফরজ আমাদের ওপরে। পরিচিত হুজুরদের সাথে কথা বলে জেনে নিন ইসলামের আলোকে কিভাবে জীবনকে নিরাপদে রেখে ধর্মপালন করা যায়?
তারচেয়েও দরকারি কথা - এবারে নাহয় ঈদ শপিংটা নাই করলেন। কিছু সেভিংস হলো টাকা ও জীবনের! আত্মীয়দের বাড়ির দাওয়াত, পার্ক/চিড়িয়াখানায় বেড়ানো, ঈদ মোবারক বলে প্রতিবেশীদের সাথে কোলাকুলি নাহয় পরের বছরের জন্যে তোলা থাক? মনে রাখবেন, আপনার ভুলে শুধু আপনিই নন, আপনার আপনজন থেকে শুরু করে আশেপাশের অনেক গরীব মানুষও আক্রান্ত হতে পারেন। তাই নিরাপদে থাকুন, নিরাপদে রাখুন - সুস্থতাই হোক এবারের ঈদের লক্ষ্য।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কোরবানির হাট সামুতেই বসল, বিক্রেতারা নিজের গরু বেচার চেষ্টা করছেন নানাভাবে এবং ব্লগারেও দরদাম করছেন নিজ নিজ স্টাইলে! দেখা যাক কিভাবে?
প্রামানিক!
বিক্রেতা: ভাইয়া এই গরুটা দেহেন। পুরা বাজারে এমন ওজনের সাথে মিলাইয়া কম দামে আর একটা পাইবেন না। এইডা আপনেরে নিতেই হইব, আপনেরে ভাই মানসি, ঠকামু না।
প্রামানিক:
হাম্বা হাম্বা করে গরু
মাঝেমাঝে দেয় ঢুস
বিক্রেতারাও কম কি ভায়া
লোভে পড়ে হারায় হুশ!
তোমরা বলো কত কথা
মাংস হেভী, ওজন বেশি
দরদামে করলে নত মাথা
ঈদের বাজেট হবে শেষই!
কিনলে গরু বেশিদামে
গিন্নি মারবে খুন্তি, ঝাঁটা
"গরু কিনলেন কত দিয়ে" প্রশ্নবানে
সবার সামনে নাকটা যাবে কাটা!
ওপরআলার সাথেও চলছে প্রতারণা
লোক দেখানো নিয়তে নেই ঈমানের ছটা
হারিয়ে সকল ধর্ম সাধনা,
ডিজিটাল কি হলো কোরবানিটা?
রাজীব নুর!
বিক্রেতা: ভাইজান, এই গরুটা হাটের সেরা গরু। দাম কম আর জবরদোস্ত স্বাস্থ্য! দামাদামি করুম না আপনার লগে, ভদ্দরনোকের এক জবান, এরচেয়ে সস্তায় কাউরে দিমু না। আপনে জেতবেন আমার কথা হুইনা দেহেন। কি কন?
রাজীব নুর: আমারো খুব পছন্দ হয়েছে গরুটা। কিন্তু সুরভিকে জিজ্ঞেস না করে তো আমি কিনতে পারবনা।
বিক্রেতা: সুরভি কে ভাইয়া?
রাজীব নুর: সুরভি কে? ও আমার বন্ধু, বেস্ট ফ্রেন্ড! আমার প্রেমিকা, বিবাহিতা স্ত্রী, সন্তানের মা! তোমার গরু যেমনই হোক না কেন, আমার সুরভিরর রান্নাটা হবে দশে দশ! ও অন্য বউদের মতো না, আমাকে কোনওওও কষ্ট দেয়না। অফিস থেকে আসা মাত্র জড়িয়ে ধরে। ও অনেক গোছালো, রোমান্টিক, সহজ সরল, মিষ্টি, সুন্দরী, লক্ষ্মী, নম্র, সাদামাটা, ভদ্র, মিশুকে, আন্তরিক, কেয়ারিং, আন্ডাস্ট্যান্ডিং, নিরীহ, নিষ্পাপ, কোমল, দয়ালু, অনুগত, শিক্ষিত, অমায়িক মার্জিত, অকৃত্রিম, অনিন্দ্য, অতুলনীয়.......
এক ঘন্টা পরে!! বিক্রেতার ধৈর্য্যের সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং বলে ওঠে, "ভাইসাব, তয় ভাবীরে নিয়াই আইতেন! তার কথা হুইনা কানডা পইচা গেল থুক্কু পরানডা ভইরা গেল। তারে নিয়া আইলে অহনি কিইন্না লইতে পারতেন!
রাজীব নুর: তুমি যে কি বলো না! হাটে আসলে আমার সুরভির সুন্দর, কোমল স্কিন নষ্ট হয়ে যাবেনা? আর আমাকে মাঝপথে থামালে কেন? শেষই তো হয়নি সুরভির কথা বলা!
বিক্রেতা: কি কন? অহনো শ্যাষ হয় নাই?
রাজীব নুর: নাহ, এতক্ষন শুধু গুণের কথা বলেছি, ওর মধ্যে কোন কোন দোষ নেই সেটা বলবনা? শোন, আমার সুরভির মনে কোন হিংসা - অহংকার নেই, বাজে খরচা করেনা, কাউকে অসম্মান করেনা, আমার কানের কাছে প্যানপ্যান ঘ্যানঘ্যান করেনা ..................................
(পাঠক, শেষ পর্যন্ত রাজীব নুরের আর গরুটি কেনা হয়নি এবং সেই বিক্রেতার কি হয়েছিল সেটাও কেউ জানেনা! কথিত আছে, তিনি পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান আর বিড়বিড় করেন 'সুরভি ভাবী অতি ভালো, ভাবীর গরু রান্না দশে দশে....
বিদ্রোহী ভৃগু!
ওদিকে অনেক ঘুরেও বিদ্রোহী ভৃগুর কোন গরু মনে ধরছেনা। এক জায়গায় একটু পছন্দ হলো, সেখানে প্রচুর দরদাম চলছে। এক পর্যায়ে বিক্রেতা হতাশ হয়ে জানতে চাইলেন, "ফাইনাল কন, কত দিতে চান!"
বিদ্রোহী ভৃগু:
কত দাম দেবেন?
এমন প্রশ্নের মাঝে নিজেরে আজ বড় অসহায় মনে হয়!
অর্থবিত্ত, সম্পদ, অহম দিনশেষে সকলই অর্থহীন
মুখোশের আড়ালে মৃত্যু হায়েনার মতো দাড়িয়ে
দিনশেষে রবে শুধু এক অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি!
গরুর মতোই কোরবান হচ্ছে আত্মমর্যাদাহীন জাতি
সবই মায়ার খেলা, শুভকংরের ফাঁকি
মুখ থুবড়ে পড়েছে সততা, নৈতিকতা, পরম্পরা
বেশি দাম চেয়ে শকুনীরা করছে উল্লাস!
দিনের আলোতে জেগে ওঠে
স্বৈরাচারী বিক্রেতাদের শাসন, শোষন
মুদ্রার অন্যপিঠে বলি চরে প্রকৃত গরুপ্রেমিকের
মিথ্যে দামের ফেরীতে ফিকে হয় ঈদের রং!
বিক্রেতা: ভাইজান, আমারে ক্ষমা কইরা দেন, আমি আর গরু বেঁচুম না জিন্দেগীতে। কসম কাটলাম, আপনে কইলে কানেও ধরুম। আপনের কথা হুইনা আমার মাথাডা ঘুরবার লাগছে, ও মা গো মা.......(বিক্রেতা অজ্ঞান)।
কাজী ফাতেমা ছবি!
এক লোক খুব করে ধরল ছবি আপুকে যে তার গরু নিতেই হবে। তিনি অল্প লাভেই নাকি বেঁচবেন, কিন্তু সে কথা বলেও মাত্রাতিরিক্ত দাম চেয়ে বসলেন। আপু ভদ্রভাবে এড়িয়ে যেতে বললেন....
কাজী ফাতেমা ছবি: গরুটা কিনব কিনা সেটা তো আমি এমনি এমনি বলতে পারবনা ভাইয়া। আমাকে নানা ধরণে ফটোস তুলতে হবে। প্রকৃতির মাঝে, বৃষ্টিতে, বসন্তে, গোধূলি লগ্নে ফটোশুট করব। তারপরে একটা ডিসিশন নেব।
বিক্রেতা: আফা এইসব আপনে কি কন? মাথাডা আউলাইয়া যাইতাছে। আপনেরে আমি গরু ছাইড়া দেই কেমতে? আমারে টাহা দেন, গরু আপনের, আমি অন্য হিসাব বুজিনা। এই গরুডা এমন কম দামে পাইবেন না।
কত দাম বললেন যেন? এই শোনেন
শুধু সংখ্যার পাশের শূন্যর জোড়ে ক্ষতবিক্ষত হতে পারে মন
জানেন তো এক নিম করলা দাম
সততার মন্ত্র ফুঁকে একটুখানি ঠিক দাম হাঁকালে
ঝামুর ঝুমুর সুখের বৃষ্টিতে মন হবে শীতল।
কেন বন্ধ রাখেন মন জানালা?
কাস্টমারের সামর্থ্য, খুশি, বাজেট
কিছুই কি আসেনা মনে?
বিরানভূমি যেন আপনাদের বুকের প্রান্তর!
গুঁড়েবালি আশাগুলো শুন্যে গিয়ে মেশে!
একদিন মুখ ফিরিয়ে নেবে কাস্টমারেরা
গরু মালিকের দাপটে, নির্দয় হাসিতে
হাটময় তীক্ষ্ণ দরদামের জগতে
একা হয়ে পড়বেন, বর্তমান হবে ধূসর স্মৃতি
মহাপরাক্রমশালীকে ভয় করুন, সময় থাকতে।
বিক্রেতা: চুপ হয়ে গেলেন!
রাকু হাসান!
নাহ, ওনাকে কোন বিক্রেতা জোর জবরদস্তি করেননি, উনি নিজে গিয়েই একজনকে বলা শুরু করে দিলেন.....
রাকু হাসান: মানছি, করোনার মধ্যে আপনাদের কঠিন সময় আসতে যাচ্ছে। কিন্তু আমি কোনভাবেই হার মানতে রাজি না। সঠিক পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়নই পারে আপনাদের বেচাকেনা প্রতিবছরের মতো ধরে রাখতে। এ বিষয়ে আমি খোলাখুলি আলোচনা করি, আপনাকে ব্যাপারটা বোঝাই।
প্রথমেই ফেসবুক এর ব্যাপারে আসি। যদি আপনারা ফেসবুকে একটি পেজ খুলে নিজের গরু এবং গোবরের ছবি পোস্ট করেন তাহলে কম বাজেটের মধ্যে ভালো পাবলিসিটি হবে। তারপরে ইউটিউবের মাধ্যমে ভিডিও মার্কেটিং করতে হবে - গরুটি কিভাবে লাথি মারে, গুঁতা দেয় ইত্যাদি দেখাতে হবে কম সেকেন্ডের মধ্যে। কেননা ইয়াং অডিয়েন্স লম্বা সময় নিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু দেখতে চায়না! একটি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং টিম গঠন করে এসব প্ল্যান বাস্তবায়িত করতে হবে। পাশাপাশি আপনাদেরকে কাস্টমারদের সেবার মান উন্নত করতে হবে - যেমন গরুর সাথে সেলফি কন্টেস্ট, দুধ দোয়ানো প্রতিযোগিতা, যেমন খুশি গরু সাজি, কে হবে লাথিপতি, গরুর হাম্বা না আমার হাম্বা? ক্লোজআপওয়ান গরুর আইডল, মারলে গরু ঢুস - কে হারাবে হুশ? সহ নানা ধরণের কর্মসূচির মাধ্যমে আপনারা এ বছরেও পুরোন ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবেন!
বিক্রেতা: ভায়া, হক্কলে আহে, গরু কিইনা নিয়া চইলা যায়, আফনের লাহান আপন ভাইব্বা কেউ এতকিছু কয় নাই! আপনেরে আমি কি দিতাম? ৩০ টা লাইক, ৫০০ টা কমান্ড ফ্রিতে দিয়া দিমু। আপনেরে অনুসরণে লইলাম, আপনের কথা সুজা প্রিয়তে।
রাকু হাসান: গদগদ হাসি। মনে মনে ভাবছেন এবারে অন্য বিক্রেতার কাছে যেতে হবে....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
শেষ কথা: পোস্টে যাদের যাদের নাম নিয়েছি তাদের ওপরে এটুকু বিশ্বাস আছে যে তারা মজাটাকে শুধু মজা হিসেবেই দেখবেন। তারা সবার ভীষন রকম প্রিয় ও গুণী ব্লগার। সবচেয়ে বড় কথা তারা সামুকে অনেক ভালোবাসেন। যদি আমার লেখার কোন অংশে কোন ভুল ত্রুটি হয়ে যায়, দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমি শুধু ঈদকে সামনে রেখে কিছু সচেতনতার এবং মজার কথা বলতে চেয়েছি। সুস্থ ও সুন্দর একটি ঈদ কাটুক সবার।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:১৬