somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প | সানাউল্লাহ সাগর

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানুষ

কাউকে কখনো মানুষের মতো হাসতে দেখিনি। অথবা এমন কিছু দেখিনি যাকে মানুষ ভেবে নিজেকে মেপে দেখা যায়―কতোটুকু মানুষ হলাম!

আগামি স্বপ্নে একটা বিড়াল কিনবো;
হলুদ মেখে―নাম রাখবো মানুষ!
নিকটবর্তী কোন ডোবায় নাচতে দিয়ে―দেখতে থাকবো ভেতরের নাচগুলো কতো মুহূর্ত বাঁচতে পারে।
...আর বিড়াল থেকে সেই নাচগুলো কিভাবে মানুষ হয়!

মা

সেবার বাড়াবাড়ি রকম ভুল হয়ে গেল। মা বললেন―দেখিস সামনের বার; একটু দূরে থাকার কারণে অতি সাধারণ ভুলগুলো মায়ের চোখ এড়িয়ে যায়। আর আমি ভুল করতেই থাকি খেয়ালে বেখেয়ালে।

শুদ্ধতার চিমটিতে ঘুম ভেঙে যায়। দেখি মা―সিথানের ওয়ালম্যাট হয়ে বাতলে দিচ্ছেন নিকষ কালো অন্ধকারে সাদা পথের ঠিকানা। জলে ভেজা চোখ আমার দেখছে আর হাঁটছে মায়ের পিছু পিছু।

অতিদ্রুত বদলে যাচ্ছে সব। রঙহীন দেয়ালে বেড়ে উঠছে হরেক রঙের আল্পনা। অধরা কুঠুরী আমার―অন্ধকার লেপটে আছে পুরো শরীরে। কী করে বলি―ভুল থেকে যারা শিক্ষা নেয় আমি তাদের পিছনে। শখের বশেও ভুল করি আমি।

কারো কারো জীবনে ভুলগুলোই বড় সত্য!

ইদানীং ঘুম

ইদানীং ঘুমালেই একটা স্বপ্ন দেখি
একটা স্বপ্নই বারবার দেখি―
খোলা মাঠে ঘোড়ার পিছনে দৌড়াচ্ছি
চারদিকে হাজার মানুষ
আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কেউ কেউ আনন্দে হাততালি দিচ্ছে
মনে হচ্ছে, জয় কের ফেলেছি রাজা-রাজ্য-রানী...

বাস্তবে আমি কখনও ঘোড়ায় উঠতে পারিনি
অবলীলায় মেনে নিয়েছি বিলাইয়ের জীবন।
তাই স্বপ্নটা আমার খুব পছন্দ
খারাপ লাগলেই ঘুমিয়ে পড়ি,
খুব ঘুমাই―আর ঘুম থেকে উঠেই
আয়নার নিজের হাসি মুখটা বারবার দেখি।

ডেনভার

ফিরে আসছে মেদ
মৃত্যু, হাতের বরফে―
ঘেমে ক্ষীর।

দূর্যোগ এলো―গল্পের ঘামে রেখে গেলো নৃত্যের ট্রেন।

বুক ঘেষে কিসের শব্দ―অবিরত গদ্যকোলাজ
তিতে রাত―
মদ নদী;
কোথায় বেঁকে বাঁচে অথৈ―

শরীর থামে―গলিপথে কথাকার খোঁজে যন্ত্রণা
আঙুলে ছুটি; ওড়নায় উড়ে গ্যাছে বৃত্তের গড়জ।
মুখ থেকে বুকে―নেমে যাচ্ছে কই
সুখের সিরিজ!


ভুল থেকে ফুল; ―নিভে আসে বায়ুর শরম।
চোখে রেখে গন্ধ
গেঁথে রাখি ছুঁড়ির কাম...

রোজ রাতে ছুড়ে ফেলি বিকেল;
শিখে রাখি সিঁড়ির টান
পালাগানের বানান―

নিভে গেলে অন্ধ কিশোর―ছড়িয়ে ঘুমায় হাসি
আমি মাটিমেপে খেয়ে আসি ধানের সুবাস...

বিষ-টি’র কাটপিস

না হও―তবু হয়ে আছো। ফেলে গেছো যাতায়াত।

‘হ্যাঁ’ বলতেই নেলপালিশ জ্বলে ওঠে। ইচ্ছেডাঙায় নেমে আসে সঙ-সারের ফটোশ্যুট। আরো অপরাপর যেসব চোখহীন কথারা এখনো ছুঁতে শেখেনি প্রতিবেশীর পা। তারাও অন্যান্য পবিত্রতায় শোক ছড়িয়ে রাধা-কৃষ্ণ হয়ে ওঠে! তারপর ডানে-বামে বেয়ে ওঠে নিষিদ্ধ।

‘না’ বলতেই মিথ্যা হয়ে যাচ্ছি। ভূগোলে কাঁদছে বৈরী-উষ্ণতা; ওখানে যদি কেউ থাকে―সেও তুমি! বৃত্তান্ত পটিয়ে প্রতিটি মহাদেশের সিঁথিতে পাঠালেও ফিরে আসো তুমি। আর তুমি বাদ দিয়ে শুরু হলে পথ―ছক্কায় গ্যালারি বলে দেয় এই বলে বোল্ড হয়ে যাচ্ছে পৃথিবী।

শৈশবে হেগেল আসতো। প্রথম আঠেরোতে রাধার আংশিক। পুরো সিনেমার জন্য চোখ বিক্রির হাট বসিয়ে―হ্যাঁ-না’র কসরত দেখতাম। শাদা চুলে চোখ ফিরে শেষ দমে ঠোঁটেই নেমে যেত।

শুক্রবার এলে বর্গা চাষির কথা মনেপড়ে―
শাহবাগ, টিএসসিতে তোমার গন্ধ পাই না। মনে হয় রাধার চশমায় কেউ কাঁদছে।

খুলছি। না তুমি, না পোষাক। খুলেই যাচ্ছি...

কবিতার গল্প

আমি হাঁটলে পাশাপাশি বড় হতে থাকা ছবিগুলোও হাঁটতে থাকে। সেই ছবিগুলোর মুখ কখনও পরিচিত মনে হয় আবার কখনও মনে হয় তাদের কখনও দেখিনি। এই দেখা না দেখার মধ্য থেকেও আমি পরিচিত হয়ে উঠি সেইসব ভেঙে হাসা ছবিদের সঙ্গে। তারপর শুরু হয় তাদের সাথে কথাপোকথন। চলতে থাকে, চলতেই থাকে। তাদের মধ্যে মানুষের মুখগুলো নুয়ে থাকে আর মুখোশগুলো উঁচু হয়ে আঁতেলামি করে। এইসব ছায়াবাজির মধ্যেই জন্মলাভ করে ‘মানুষ’ শিরোনামের আরেকটি মানুষ!

‘মা’ কবিতাটি লিখেছিলাম বরিশাল থেকে লঞ্চে ঢাকা আসার পথে। লঞ্চের ডেকে যাত্রীদের সঙ্গে নিজের মুখ মিলিয়ে শৈশব-কৈশর হারানো সাগরকে খুঁজছিলাম। যে আমি খুব কড়া শাসনে বড় হয়েছি, সেই আমি এখন ইচ্ছে মতো, হ্যাঁ, অনেকটা ইচ্ছে মতোই চলতে পারছি। কেউ আর আটকাতে আসছে না। কারণ, তারা জেনে গেছে আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। অথবা বলে বলে ক্লান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু দিন শেষে বালিশের কাছে আমি একা হয়ে যাওয়া আমাকে দাঁড় করালে মা এসে হাজির হন। তখন আমার সমস্ত পাপ আমার বিরুদ্ধে কথা বলে ওঠে। যে পাপগুলো আমার পোষ্য ছিলো একটু আগেও! সেই পাপদের আর চিনতে পারি না। তারপর আমি পাপ করতেই থাকি। সেই চিন্তার জন্ম ‘মা’ কবিতাটি।

স্বপ্ন দেখতে আমার ভালো লাগে। অনেক বাস্তবকে ছাড়িয়ে নিজের মতো করেই উড়ে বেড়াতে পারি। সেজন্য কোনো পজিটিভ স্বপ্ন নিয়ে এমনও হয়েছে আমি মাসের পর মাস ভেবেছি। স্বপ্নটা অনেক দিন আচ্ছন্ন করে রেখেছে আমাকে। যে বাস্তব আমাকে দাঁড়াতে দিচ্ছে না, সেই বাস্তব থেকে স্বপ্নের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে মুখটাকে হাসাতে, মনটাকে হাসতে চেষ্টা করছি বলেই এই ‘ইদানিং ঘুম’ লেখা হয়ে গেছে।

‘ডেনভার’ আমার প্রিয় মানুষের পছন্দের সুগন্ধি ব্রান্ডের নাম। যে কিনা এই বডি স্প্রে দেওয়া কারও মধ্যেই প্রিয় মানুষকে খুঁজতে থাকে। একথা বহুবার তার মুখে শুনে শুনে আমার মনে হয়েছে ইস্ আমি-ই যদি ডেনভার হয়ে যেতে পারতাম। তাহলে সে সারাজীবন আমার ঘ্রাণ নিতো। সকলের মধ্যেও আমি একক থাকতাম। সেই ভাবনা থেকে ‘ডেনভার’র জন্ম।

অনকে দিন থেকে মনের মধ্যে ঘুরছিলো হেমলকের যাপন। নিজেকে পরিচিত যাপন থেকে দূরত্বে না রাখতে চাইলেও বাবারবার পিছলে পড়ছিলাম সেই হেমলকে। যেখানে পুড়ে পুড়ে আগুন হয়ে যাচ্ছিলো আমার স্বপ্ন, রঙ, পথ। তারপরও ফিরতেই হবে! কিন্তু দিনে দিনে সাহসগুলো ঝিমিয়ে পড়ছিল। খুলে যাচ্ছিল প্রিয় সব মানুষের মুখোশ। যারা পবিত্র বৃষ্টির নামে বিষ-টি [ বিষের চা] খাইয়ে যাচ্ছে প্রতিমুহূর্তে। তবুও কোনো এক অজানা কারণে তাদের আকড়ে ধরেই বেঁচে থাকতে হচ্ছে। মনের মধ্যে জ্বলে যাচ্ছিল সেই ন্যুড, ‘বিষ-টি’র কাটপিস’। যাকে বমি করার চেষ্টা এই কবিতায়।

[ banglanews24.com এ প্রকাশিত ]
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:২০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×