রিতু আমার খুব ক্লোজ একটা বান্ধবি। আজ নাকি বেড ছেড়েই রিতুর প্রথম মনে হওয়া অনুভূতিটা হলো মাঝে মাঝে আজরাইলের সাথে দেখা হলে মন্দ হয়না। ওর এহেনরকম কথা শুনেই আজ ওর বাসায় যাবো বলে ঠিক করলাম।
সারাদিন অস্বাভাবিকরকম অসুস্থ ছিল সে। ঘুমিয়েছে সকাল ৮টায়। নানান টেনশনে তার আর ঘুম হয়নি রাতে। সাড়ে ১০টায় স্বপ্নর মেসেজে ঘুম ভাঙ্গল একবার। তারপর ১২টা থেকেই হঠাৎ ভীষণ বুকে ব্যথা। সত্যিই আজ মৃত্যুকে অনেক কাছ থেকে দেখে এসেছে সে। কোনমতে ৩টার পর উঠে একটু পাউরুটি দুধ ভিজিয়ে খেলো রিতু। এখন নাকি মোটামুটি ভালো আছে।
ওর এই অবস্থায় স্বপ্নর অফিসে থাকা কষ্টকর ছিল। কিন্তু বেতনটা নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় ওকে বাধ্য হয়ে সাড়ে ৫টায় বেরোতে হলো। ততক্ষণে অবশ্য রিতু অনেকটা সুস্থ। রিতু অসুস্থ মানেই স্বপ্নর দুনিয়া অন্ধকার। বিয়ে করেছে বেশিদিন হয়নি কিন্তু মেয়েটা এত বেশি অসুস্থ থাকে যে স্বপ্নর টেনশনের সীমা থাকেনা।
এক ফাঁকে আমি রিতুর বাসায় যাওয়ার জন্য উঠে টুকটুক করে কাপড় গুছালাম। কেন জানি আজ শুচিবায়ুগ্রস্ত এই আমি ঝাড়ু দেইনি। দিবো হয়ত। নাও দিতে পারি, ইচ্ছে হচ্ছে না। আজ রিতুর বাসায় আমার দাওয়াত।
রিতুর সাথে স্বপ্নর বেতনের চকচকে টাকাগুলো আমিও শুকবো। এতগুলা টাকার ঘ্রাণ একসাথে আগে কখনই পাইনি। আমারি তো পাওয়ার কথা আগে। জানি এই ঘ্রাণ রিতুকেও ও পেতে দেয়নি।
খিদে পেয়ে গেলো সন্ধ্যা না হতেই। রিতু স্বপ্নকে অফিস থেকে আশার সময়ে নান আর হালিম আনতে বললো। কারণ আমি আজ গেস্ট। বেতন যেহেতু হলো কিছু ভালো মন্দ খেয়ে উদযাপন তো করাই যায়।।
আজ সকালে এক ফাঁকে উঠে আমার ছেড়া চিঠি জোড়া লাগিয়েছি। পুরো চিঠি মিলিয়ে নতুন করে লিখেছি। এটা স্বপ্নর রাগের মাথায় করা এক সময়ের আবদার ছিল। কিন্তু আমি সেটা পূরণ করেছি স্বতঃস্ফূর্তভাবে। ভালই লেগেছে। নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে।
আমাকে দেখে স্বপ্ন একটুও অবাক হলোনা। চাহুনিতে কোন আলাদা রঙ ছিলোনা। আমিও রাতের খাবার সেরে কায়দা করে স্বপ্নর বুক পকেটে চিঠিটা গুজে দিয়ে ছিন্ন করে এলাম শেষ স্মৃতিটুকু।
বাইরে পা ফেলতেই বৃষ্টি নামলো । বৃষ্টির পানিতে কতটুকুি বা ধুয়ে যায় আজ তার একটা পরীক্ষা করলে খারাপ হয়না...
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৬