ইসলামের শাফী আইনশাস্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম শাফীর 'কিতাব-আল-উমম' গ্রন্থে এ চুক্তিটি রয়েছে। সিরিয়া দখলের পর খলিফা ওমরের সাথে খ্রিষ্টানদের প্রধানের সাথে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। ইসলামের কাছে আনুগত্যের শর্ত নির্ধারণ করে খলিফা ওমর একটি চুক্তিপত্র পাঠান।
====================================
"আমি ও সমস্ত মুসলিম তোমার ও তোমার খ্রিষ্টান সদস্যদের নিরাপত্তার অঙ্গীকার করছি যতদিন তোমরা তোমাদের উপর আরোপিত শর্তসমূহ মেনে চলবে। শর্তগুলো হলোঃ
১. তোমরা শুধু মুসলিম আইনের অধীনস্থ হবে, অন্য কারো নয়। এবং আমরা তোমাদেরকে যা করতে বলব, তা অস্বীকার করতে পারবে না।
২. যদি তোমাদের মধ্যে কেউ নবি, তাঁর ধর্ম বা কোরান সম্বন্ধে অশালীন কিছু বলে, সে আল্লাহর, বিশ্বাসীদের সেনাপতির ও সমস্ত মুসলিমের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে। যে শর্তে নিরাপত্তা প্রদান করা হয়েছিল, তা বাতিল হবে ও তোমাদের জীবন হবে আইনের সীমার বাইরে।
৩. যদি তোমাদের মধ্যে কেউ কোন মুসলিম নারীর সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হয় কিংবা কোন মুসলিম নারীকে বিয়ে করে, বা পথে কোন মুসলিমমের উপর ডাকাতি করে, অথবা কোন মুসলিমকে ইসলাম থেকে ধর্মচ্যুত করে, অথবা আমাদের শত্রুকে সাহায্য করে, অথবা কোন গুপ্তচরকে আশ্রয় দেয়, তাহলে সে চুক্তি ভঙ্গ করবে এবং তার জীবন ও সম্পদ আইনের বাইরে।
৪. কোন মুসলিমের সম্পদ ও মর্যাদার প্রতি এর চেয়ে কম ক্ষতি যে করবে সে উপযুক্ত শাস্তি পাবে।
৫. মুসলিমদের সঙ্গে তোমাদের আচরণ আমরা পর্যবেক্ষণ করবো। এবং তোমরা মুসলিমদের প্রতি বেআইনি কিছু করলে আমরা এ চুক্তি বাতিল ঘোষণা করবো ও তোমাদেরকে শাস্তি দিব।
৬. যদি তোমরা কিংবা অন্য অবিশ্বাসীরা বিচার চায়, আমরা মুসলিম আইন অনুযায়ী বিচার করব।
৭. কোন মুসলিম শহরে ক্রুশ প্রদর্শন করবে না, অথবা (যিশুর) মূর্তি নিয়ে মিছিল করতে পারবে না, তোমাদের প্রার্থনার জন্য কোন গীর্জা নির্মান বা সমবেত হওয়ার স্থান সৃষ্টি করতে পারবে না; (চার্চের) ঘণ্টা বাজাতে পারবে না; বা কোন মুসলিমের কাছে মেরীর পুত্র যিশু সম্বন্ধে কোনও পৌত্তলিক ভাষা (অর্থাৎ যিশু ঈশ্বরের পুত্র) ব্যবহার করতে পারবে না।
৮. তোমরা 'জুন্নর' (ফিতা, খ্রীস্টানের চিহ্ন স্বরূপ) পরিধান করবে সমস্ত পোশাকের উপরে, যা কখনোই লুকাতে পারবে না।
৯. ঘোড়ায় চড়তে তোমরা বিশেষ গদি ব্যবহার করবে ও ভিন্ন ভঙ্গি করবে এবং একটা চিহ্ন দ্বারা তোমাদের 'কালানুয়াস' (টুপি) মুসলিমদের টুপি থেকে আলাদা করবে।
১০. মুসলিমরা উপস্থিত থাকলে তোমরা রাস্তার অগ্রভাগে যাবে না বা সমাবেশের প্রধান আসনে বসবে না।
১১. প্রত্যেক সুস্থ সাবালককে 'জিজিয়া' বা বশ্যতা কর দিতে হবে, নতুন বছরে পূর্ণ মাপের এক দিনার করে। কর না দেয়া পর্যন্ত সে শহর ত্যাগ করতে পারবে না।
১২. কোন গরীব লোক নিজস্ব জিজিয়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত দায়গ্রস্থ থাকবে। দারিদ্র জিজিয়া প্রদানের দায়িত্ব বাতিল করবে না, যেমন করেনা তোমাদেরকে প্রদত্ত সুরক্ষাকে বাতিল। তোমাদের যা আছে তাই আমরা নিয়ে নিব। বণিক হিসেবে ছাড়া যতদিন তোমরা মুসলিম ভূখণ্ডে বসবাস ও ভ্রমণ করবে, ততদিন জিজিয়াই তোমাদের একমাত্র বোঝা।
১৩. কোন অবস্থাতেই তোমরা মক্কায় প্রবেশ করবে না। পণ্যদ্রব্যসহ যদি ভ্রমণ কর, তাহলে তার এক-দশমাংশ মুসলিমদেরকে দিতে হবে। মক্কা ব্যতিত তোমরা ইচ্ছেমতো অন্য যে কোন স্থানে যেতে পারো। হেজাজ ব্যতিত অন্য যে কোন মুসলিম দেশে তোমরা থাকতে পারো। হেজাজে তিন দিনের বেশি অবস্থান করতে পারবে না।
এই আদর্শ(!) শর্তাবলি সকল ইসলামী রাষ্ট্রে অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপর প্রযোজ্য হবে। বিখ্যাত হানাফী আইনশাস্ত্রবিদ আবু ইউসুফ লিখেছেন, 'ওমরের চুক্তি পূনরুত্থানের দিন পর্যন্ত বৈধ ও চালু থাকবে।'
এ হল শান্তির ধর্মের চার খলিফার মধ্যে অন্যতম খলিফা ওমরের চুক্তি। এ চুক্তির অন্যতম ভিত্তি কোরান ও নবীর জীবনে প্রদর্শিত উদাহরণ। আমাদের বর্তমান প্রজন্মের অনেকে ইসলামের পূনরুত্থানের স্বপ্ন দেখে কিন্তু ইসলামের বিভৎস অতীত তারা জানেই না।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৮