somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চে মারাদোনা ফিদেল

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চে মারাদোনা ফিদেল

শান্তনু দে

‘ইতালিতে যাওয়ার পরই আমি ওঁর প্রেমে পড়ে যাই।
হ্যাঁ, ইতালিতেই। আর্জেন্টিনায় নয়।
আর্জেন্টিনায় ওঁর সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল, যা আমাদের দেশের আমজনতার ধারণা। একজন ঘাতক, একজন সন্ত্রাসবাদী, একজন বিপ্লবী যিনি বোমা মেরে স্কুল উড়িয়ে দেন। আমাকেও পড়ানো হয়েছিল এই ইতিহাস।
কিন্তু ইতালিতে দেখলাম, ধর্মঘটী শ্রমিক, সরকারী কর্মচারীরা চে-কে পুজো করেন।
আমি লক্ষ্য করলাম, ওঁদের প্রতিটি আন্দোলনে ওঁদের ঝান্ডায় ওই প্রত্যয়ী বালকের মুখ। রক্তলাল নিশান থেকে বেরিয়ে আসছে দূরনিবদ্ধ রাখালচোখ। তখনই আমি ওঁর প্রেমে পড়ি। ওঁর সম্পর্কে পড়তে শুরু করি। আমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি : কেন আর্জেন্টিনীয়রা চে’র সম্পর্কে প্রকৃত সত্যটা বলে না? কেন আমরা ওঁর দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেব না? এসব প্রশ্নের উত্তর আমি পাইনি। তাই নিজেই ওঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উপায় বের করে নিলাম। আমার হাতের উল্কিতে প্রিয় গুয়েভারা, যাতে সারা জীবন উনি আমার সঙ্গে থাকেন।
আমি চাই স্কুলগুলি প্রকৃত ইতিহাস পড়াক।’
বলেছেন দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনা নিজে। স্প্যানিশ ভাষায় লেখা তাঁর আত্মজীবনী ‘এল দিয়েগো’তে।
‘শুধু হাতেই আমি ওঁকে বয়ে বেড়াচ্ছি তা নয়, উনি রয়েছেন আমার হৃদয়ের অন্তস্থলের অনেক গভীরে।’
‘চে’র সঙ্গে একবার দেখা হলে আমি খুব খুশি হতাম। মনে হয় না, আমার এই ইচ্ছের কথা শুনে কেউ খুব অবাক হবেন।’
ঠিকই, যারা মারাদোনাকে চেনেন, তাঁরা কেউই এতে অবাক হবেন না।
পৃথিবীর কোন জিনিসটা আপনার কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত মনে হয়?
জেনে রাখুন, ঠোঁটের কোনে তাচ্ছিল্যের হাসি এনে সংক্ষিপ্ত জবাব আসবে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির আসনে বসা’।
খেলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন, এমন বহু বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সঙ্গে দেখা হবার সুযোগ হয়েছে আমার। কিন্তু সবার মধ্যে আমি বেছে নিয়েছি একজনকে। যিনি আমার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছেন, আমার হৃদয় জুড়ে রয়েছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এতটুকু সন্দেহ না রেখেই বলছি, ওঁর জায়গা কেউ নিতে পারবেন না।
তিনি ফিদেল কাস্ত্রো।
তিন-তিনবার আমি কিউবায় গিয়েছি। তবু এখনও, যখনই ওঁকে দেখি, যখন উনি আমাকে স্পর্শ করেন, আমি যেন কেমন ঘাবড়ে যাই।
আজও আমার স্পষ্ট মনে আছে আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার কথা। মনে আছে সবকিছু। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত, প্রতিটি মুহূর্ত। দিনটা ছিল মঙ্গলবার। জুলাইয়ের ২৮তারিখ। ১৯৮৭। প্রায় মধ্যরাত। ওঁর সঙ্গে আমরা মিলিত হই ওঁর দপ্তরে, রেভেলিউশান স্কোয়ারের বিপরীতে। আমি এতটাই বিপর্যস্ত ছিলাম যে একটি শব্দ পর্যন্ত উচ্চারন করতে পারিনি।
আমার সঙ্গে ছিল ক্লাউদিয়া, কোলে তিন মাসের দালমাকে নিয়ে। আর ছিলেন আমার মা। আলোচনার শুরুতেই ক্লাউদিয়ার দিকে তাকিয়ে উনি বললেন, দালমাকে দুধ খাওয়ানোর জন্য কোনও আলাদা ঘর দরকার কি না? আমি বলে উঠি, না, না চিন্তা করবেন না কমান্ডার।
একদিন উনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কিউবার ফুটবলের জন্য আমি কিছু করতে পারি কি না? জবাব যেন আমার ঠোঁটের আগায় ছিল। বলি অনেক কিছুই করতে পারি। কারণ, গরম ছাড়া ওদের সবকিছুই আছে। আছে সহজাত ক্ষিপ্রতা, হালকা-পাতলা শরীর, শারীরিক শক্তি এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তি।
সেদিন আমরা যখন ফিরে আসছি, আমি ওঁর টুপির দিকে তাকাই।
ভ্রূ কপালে তুলে উনি তুরন্ত পড়ে ফেলেন আমার মনের কথা। যেন শুনেছিলেন আমার অনুচ্চারিত কথা — ‘কমান্ডার, দুঃখিত, আমি কি পেতে পারি আপনার টুপিটা?’
মাথা থেকে নিমেষে টুপিটা খুলে সটান পরিয়ে দিতে চাইলেন আমার মাথায়। আমি সরে আসি। সবিনয়ে বলি, দয়া করে যদি সই করে দিন, না হলে এটা মনে হতে পারে যে কারো।
এটা কমান্ডারের টুপি, টুপিটা তাই আমি তুলে রাখি সযত্নে।
বিদায় জানানোর সময় মনে হলো আমি যেন এতক্ষন এনসাইক্লোপিডিয়ার সঙ্গে কথা বললাম।
এক অবিশ্বাস্য মানুষ, যিনি জানেন সবকিছু। এবং এতটাই প্রত্যয়ী, যে একবার তাকালেই যথেষ্ট।
দ্বিতীয়বার আমাদের দেখা ১৯৯৪’র ক্রিসমাসে। তাঁর বাড়িতে। সেদিন তিনি আমাকে আরেকটি টুপি উপহার দেন। আমি আমার একটা দশ নম্বরের জার্সি দিতে চাই। ......কয়েকমাস বাদে কিউবার সরকারের কাছ থেকে একটি ‘সিল’ করা চিঠি পাই। সিল খুলতেই আমি হতবাক। ফিদেলের লেখা চিঠি। ব্যক্তিগত চিঠি। আমাকে। একেবারে নিজের হাতে লেখা। ওই চিঠিতে তিনি আমার জার্সিটি কিউবার স্পোর্টস মিউজিয়ামে রাখার জন্য সম্মতি চান।
অবিশ্বাস্য!
উনি আমার জন্য কী করছেন, তা বর্ণনা করার ভাষা আমার নেই।
আজ আমি বেঁচে আছি ওঁর জন্য।
হ্যাঁ, আমার এই জীবন ওঁর জন্য।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×