নতুনদিন প্রতিবেদন: ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সর্বশেষ হালহকিকত সবারই জানা। কিন্তু সবার যা নিয়ে জানা নেই তা হচ্ছে- আইপিএল যুগে ম্যাচ পাতানোর তদন্ত করার জন্য কতটুকু যোগ্যতা অর্জন করেছে আইসিসি? বিপিএল বা আইপিএল যুগের ম্যাচ পাতানোর সাথে হ্যান্সি ক্রোনিয়ের যুগের ম্যাচ পাতানোর রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। কিন্তু আইসিসি এখনও ম্যাচ পাতানোর তদন্ত চালায় হ্যান্সি ক্রোনিয়ে যুগের আইন দিয়েই। ফলে, আইনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে বুকিরা। আর শাস্তির শিকার হচ্ছেন খেলোয়াড়েরা।
বিপিএল যুগের ফিক্সিংয়ের ভিন্ন বৈশিষ্ঠ্য তুলে ধরার জন্য আমাদের নজর দিতে হবে ২০১০ সালের একটি ঘটনার দিকে। ২০১০ সালে দলের হোটেল থেকে পালিয়েছিলেন পাকিস্তানি উইকেটরক্ষক জুলকারনাইন হায়দার। যুক্তরাজ্যে গিয়ে অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। জুলকারনাইন জানিয়েছিলেন, ম্যাচ পাতাতে অজ্ঞাত লোকের হুমকির কারণেই পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
আইপিএল-বিপিএল যুগে ম্যাচ পাতানোর জন্য হুমকি লাগে না। ম্যাচ পাতানোর নাটকে অংশ নেওয়া হয়ে পড়ে খেলোয়াড়দের ‘দায়িত্ব’। ২০১০ সালের দলের নায়ক পাকিস্তানি উইকেটরক্ষক জুলকারনাইন পালানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আইপিএল-বিপিএলের মালিকেরাই যদি চায় দল হারুক কিংবা কোন খেলোয়াড় দলকে হারাতে ভূমিকা পালন করুক, তাহলে কি খেলোয়াড়দেরকে কোথাও পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে? আরো প্রশ্ন ওঠে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের শাস্তি কে পাবে? খেলোয়াড় নাকি দলের মালিক? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা ভবিষতের জন্য তুলে রাখি।
এই প্রতিবেদনের বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, বিপিএল-আইপিএল যুগে দলের মালিকদের দ্বারা ম্যাচ পাতানোর এই অভিনব পদ্ধতি আইসিসি কিভাবে খতিয়ে দেখা তা জানা।
পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে আশরাফুলের বিরুদ্ধে ফিক্সিংয়ের যেসকল অভিযোগ স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে তা হচ্ছে, আশরাফুল বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের দুটি ম্যাচে অধিনায়ক ছিলেন এবং দুটি ম্যাচই ছেড়ে দিয়েছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের ইশারায়। বিনিময়ে যে অর্থ পাওয়ার কথা ছিল, সেটা তিনি পাননি। তিনি অর্থতো পেলেনই না, বরং ম্যাচ ছেড়ে হয়ে পড়েছেন বিতর্কিত।
স্পষ্টতঃ আশরাফুল যদি ফিক্সিং করেনও তা করেছেন মালিকের ইশারায়। বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে নিলামে আশরাফুল ছিলেন ‘এ’ ক্যাটাগরির। আশরাফুলকে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স কিনে নেয় কয়েক হাজার ডলারে। খেলোয়াড় কিনে নিয়ে দল বানানোর এই পদ্ধতি বদলে দিয়েছে খেলার সাথে খেলোয়াড়দের সম্পর্ক। ফ্রাঞ্চাইজির স্বার্থ দেখাই হয়ে দাঁড়ায় খেলোয়াড়দের কাজ। তাই আইপিএলের যুগে খেলোয়াড়েরা আর ম্যাচ পাতানোয় অংশ নেওয়ার ভয়ে পালিয়ে যান না। মালিকের স্বার্থ দেখতে গিয়ে দলের মালিকের কথা শুনে আশরাফুলের মতো অনেকেই খেলার মাঠেই তরী ডুবান। হ্যান্সি ক্রনিয়ের যুগে কিংবা আইপিএল-বিপিএলের আগে এই ধরণের ফিক্সিংয়ের কথা কল্পনাও করা যেতো না।
বদলেছে খেলার ধরণ, বদলেছে ফিক্সিংয়ের ধরণ। কিন্তু বদলায়নি আইসিসি’র আকসু। আকসু তদন্ত করতে গিয়ে বিবেচনায় আনে না ফ্রাঞ্চাইজির ভূমিকা। নতুনদিনের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আকসু তদন্তকালে শুধুমাত্র বিবেচনায় আনে কোন খেলোয়াড় খেলাকে কেন্দ্র করে কোনভাবে উপঢৌকন নিয়েছে কিনা? ফলে, আইসিসির তদন্ত হয়ে পড়ছে একমাত্রিক। ফিক্সিংয়ের মূল হোতা ফ্রাঞ্চাইজির মালিকেরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোয়ার বাইরে।
আকসুর তদন্তের কৌশল পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, টাকার টুর্নামেন্ট আইপিএল-বিপিএলে যেখানে খেলোয়াড়েরা প্রায়শঃ দলের মালিকদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত অর্থ পাননা। তাই দলের মালিকদের কাছ থেকে টাকা নিলে কখন ফিক্সিং হিসেবে গণ্য হবে, কখন হবে না নিয়েও ভাবছেনা আইসিসি। ফলে, অপরাধের ধরণ বদলালেও পিছিয়ে আছে আইসিসি।