কিছুদিন যাবত পেটের ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছি, এই ব্যাথা কোথা থেকে আসে?
মনে হয় পেটের ভিতর সবকিছু মোচর দিয়ে কিছু একটা চলে যায়, ব্যাথার ওষুধ খেয়েও কোনো আরাম পাচ্ছি না। এমনিতে আমার অনেক সমস্যা আছে, ধুমপান করি। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস পজিটিভ ও আছে, মদ খেতাম ২০১২ সাল পূর্যন্ত, এখন সে পথে নাই। দুই বেলা হোটেলে খাওয়া দাওয়া করি। কিন্তু পেটের ব্যাথার সাথে আবার কিডনির জায়গাটি ও চিন চিন করছে।
শেষে উপায় না দেখে সহকর্মীর পরামর্শে সকাল সকাল সিরিয়াল দিয়ে গ্যাস্ট্রো বিভাগের একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছি, তিনি আমার সব কথা শুনলেন, তারপর যথারীতি টেষ্ট করতে দিলেন, এবং বলে দিলেন ধুমপান বন্ধ, ঘুমের ট্যাবলেট আর ব্যাথার বড়ি খাওয়া নিষেধ। আমি উনাকে (ডাক্তারকে) বললাম যে ব্যাথার কারণে এক কম্পাউন্ডারের কাছ থেকে ওমরফেন নামক ব্যাথার ট্যাবলেট কিনে খেলে কিছুদিন বেশ ভালো ছিলাম, কিন্তু এখন সেটা খেলে বরং ব্যাথা আরও বাড়ে। জীবনের সব কথা খুলে বললাম, পৃথিবীতে আমার কেউ নেই, সেটা জানাতেও দ্বিধা করলাম না। অন্যান্য পরীক্ষার সাথে তিনি এনডোসকপিও দিলেন এবং জানিয়ে রাখলেন এই পরীক্ষা তিনি নিজ হাতে করবেন। পেটের ব্যাথা নিয়ে আমি অনেক কষ্টে উনার সব কথা শুনলাম এবং পরের দিন এনডোসকপি করার জন্য মনে মনে তৈরী হচ্ছিলাম।
পরেরদিন সকাল এগারোটা থেকে রাত পূর্যন্ত না খেয়ে ছিলাম এবং রাত নয়টায় ডাক্তারের চেম্বারে উপস্তিত হলাম। আমি ছাড়াও আরও বারো জন রোগী এনডোসকপি করাবার জন্য ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে আছে, আর আমি তাকিয়ে আছি টেলিভিশনে সৌরভ গাঙ্গুলীর ক্রিকেট খেলার দিকে। মনে হচ্ছে সময় কাটছে না। কিছুক্ষণ পর ডাক আসলো, হাসিনা বেগম, বয়স্ক হাসিনা বেগম চেম্বারের দিকে ঢুকে গেলেন। আমি ছিলাম এক নম্বর রোগী, কিন্তু যেহেতু আমার হেপাটাইটিস আছে তাই আমাকে ডাক্তার সবার শেষে টেষ্ট করাবো....কি আর করা, বসে আছি তো বসেই আছি।
রাত সাড়ে দশটার মতো বাজে, ক্ষিধায় কষ্ট পাচ্ছি, কখন যে ডাক্তার আমাকে ডাকবে.....অপেক্ষার প্রহর গুনছি, চেম্বার থেকে জান্তব আওয়াজ আসছে, আমার হাতে আলট্রাসনো সহ রক্তের বিভিন্ন রিপোর্ট আছে, আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে পরিস্কার উল্লেখ আছে আমার “মাইল্ড হেপাটোমেগালি” হয়েছে, জিনিষটা কি তা আমার মতো মূর্খের বোঝার কথা না। আমি ধরে নিয়েছি এটা এক জাতীয় ক্যানসার হবে হয়তো।
রোগীদের মাঝে দেখলাম একজন কলেজ পড়ুয়া মেয়েও আছে, তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলে দিচ্ছে এটা তার প্রথম এনডোসকপি, আমার পাশে সে বসেছে, ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর বিকট আওয়াজে হঠাৎ সে আমার বাম হাত চেপে ধরেছে, তার আরেক হাত তার বড় বোনের হাতে। মেয়েটিকে ভালো করে দেখলাম, ভয়ে সে নীল হয়ে আছে। তার বোন বার বার বলছে, ‘তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেন? যদি এনডোসকপি করাতে না চাস, তবে করাবি না, চুকে গেলো। সে কোনো উত্তর দিলো না।
এবার আমার হাত ছাড়লো, বললো, সরি, কিছু মনে করবেন না।
আমি বললাম, ‘ভয় পাওয়ার সত্যি কিছু নেই, এর আগে আমি পাচঁবার করিয়েছি, যত ভয় পাবেন, তত কষ্ট পাবেন’।
সিস্টার ডাক দিলেন, ‘মেহের আফরোজ’.....পর পর দুইবার ডাকলো, মেয়েটির বোন বললো, উঠ্, তোকে ডাকছে, সে আবারও আমার হাত চেপে ধরেছে, আমি বললাম, দেখুন ভয় পাওয়ার কিছুই নেই, আপনি নির্ভয়ে যান। অতঃপর মেয়েটি ভিতরে গেলো। এর পরে অনেক সময় পার হলো। মেহের যখন বের হলো তখন তার চোখ ছল ছল করছে, সে অনেক ব্যাথা পেয়েছে বুঝতে পারলাম। অনেক সময় পর আমার ডাক এলো, এনডোসকপি হলো। রিপোর্টে ডাক্তার লিখে দিলো...”কনজেসটিভ গ্যাসট্রোপ্যাথি/ইরোসিভ গ্যাসট্রিটিস। ডাক্তার অনেক কিছু বললেন, ওষুধ দিলেন।
আজ এক সপ্তাহ ধরে উনার ওষুধ খাচ্ছি, কোনো উপকার পাচ্ছি না। ব্যাথা বরং বেড়েছে, কি যে করবো। কিছু বুঝতে পারছি না। এই ব্লগে যদি কোনো ব্লগার ভাই বা বোন একটু এডভাইস করেন, অন্ততঃ পেটের ভেতর যে মোচর দিয়ে ব্যাথা করে তার একটু উপশম হয় তাতেই নিজেকে ধন্য মনে করবো এবং কৃতজ্ঞ থাকবো, পাশাপাশি ভীষণ জানতে ইচ্ছা করে যে, আমার কি আসলে ক্যান্সার হয়েছে? সবশেষে আমার লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। কমেন্ট করার জন্য শুভকামনা। এডভাইস করার জন্য কৃতজ্ঞতা। পেটে ব্যাথা নিয়ে লেখাটি লিখলাম তাই হয়তো গুছিয়ে লেখা সম্ভব হয়নি, নিজগুনে মাপ করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৫০