somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার খেরোখাতা-৪ (আধুনিকি মিডয়া ভাবনা ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী থেকে বেহুলা নামা)

২৮ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবন কিছু আদিম-গৎবাঁধা, কাল ক্রমে তথাকথিত কিছু স্বাভাবিক নিয়মের বেড়াজালে আটকে পড়ে যায়।হয়ত সেই বেড়াজাল ভাঙ্গার সাহস আমাদের থাকেনা কিংবা আমরা হয়ত সেই বেড়াজাল ভাঙ্গতেই চায়না। যদিও বা কেউ ভাঙ্গতে চায় কিন্তু আমাদের এই মরচে পড়া পৃথিবী দূর দূর ছাই ছাই করে সেই চেতনাটাকে দূ্রে সরিয়ে রাখতে চায় ,প্রয়োজন বোধে সেই চেতনার অস্তিত্বটুকুকে ধ্বংস করে দিতে পিছপা হয়না।

আজকাল আমাদের সর্বগ্রাসী এই মিডিয়াকে খুব বড় গলায় বলতে শুনি সমাজ পরিবর্তনের কথা কিন্তু এই পরিবর্তন এর স্বরুপ কি সেটা আমি ঠিক এখনও বুঝতে পারিনা হতে পারে সেটা বোঝার মত জ্ঞান গরিমা আমার নেই এবং না থাকাতে আমি গর্বিত। কারণ সমাজ পরিবর্তন বলতে এরা যদি বোঝে দু চারটা বিদেশি কোম্পানির হাতে দেশকে বিক্রি করে দেওয়া ,২১শে ফেব্রুয়ারী কিংবা ১৬ই ডিসেম্বরে লোক দেখানো দেশপ্রেম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া কিংবা লালন,রবীন্দ্রনাথ এমনকি চে গুয়েভারাকে নিয়ে ব্যবসা করা তবে দ্বিধাহীন ভাবে বলি এরকম সমাজ পরিবর্তনের কোন ই প্রয়োজন নেই। কেউ কি একবার ভেবে দেখেছেন কি হচ্ছে আমাদের দেশের এই মিডিয়া গুলোতে কি দেখাচ্ছে কি শেখাচ্ছে তারা আমাদের ? হয়ত অনেকেই বলবেন মিডিয়ার কাজ এন্টারটেইন করা জ্ঞান দান করা নয় , আমি পারশিয়ালি কথাটাকে সাপোর্ট করি কিন্তু পুরোটা নয়। আমরা অস্বীকার করতে পারিনা যে আমাদের মত স্বল্প শিক্ষিত দেশে যেখানে মানুষের ব্যাক্তিত্ব তৈরী হয় অন্যের অনুকরণে সেখানে এই ধরণের মিডিয়া যাদের মূল উদ্দেশ্য বিজ্ঞাপনপ্রচার এবং সেই ধরণের বিজ্ঞাপন যা দেখে আমাদের মত স্বল্পবুদ্ধির মানুষ সহজেই আকৃষ্ট হবে এবং জড়িয়ে যাবে মার্কেটিং নামক দৈত্যের ফাঁদে।

পূঁজিবাদের উথথানে একটা কথা সবসময় বলা হয় এই পদ্ধতিতে ধনী আরো ধনী হয় ,গরীব আরও গরীব। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি কেন হয় ? আমি জানি অর্থনীতিতে হয়ত এর অনেক রকম ব্যাখ্যা দেওয়া আছে কিন্তু একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারব এই ক্ষেত্রে মিডিয়ার প্রভাবও কম নয় । মনে আছে সেই ফেয়ার এ্যান্ড লাভলীর কথা যেখানে দেখানো হয় একটা মেয়ের গায়ের রং কালো এই জন্য বিমান এর ক্রু হিসেবে সে নিজেকে যোগ্য বিবেচনা করেনা।আবার হয়ত আপনারা একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন হরলিক্স এর এ্যাডে দেখানো হয় হরলিক্স না খেলে বাচ্চারা স্ট্রং হয়না, মেধাবী হয়না তাহলে দেখা যাচ্ছে যে সব বাবারা এগুলো দিতে পারছেনা তার ধরেই নিচ্ছে তাদের সন্তানরা কখনই প্রতিযোগিতাই টিকবেনা কারণ এই ধরণের এ্যাডের কল্যাণে তাদের কনফিডেন্স লেভেলটা এমনিতেই কমে যায়।

এবার ঈদে একটা মজার ঘটনা ঘটেছে, আমার খুব কাছের বন্ধু আছে একটা এ্যাড ফার্মে ওরা মূ্লত বাংলালিংকের এ্যাড তৈ্রী করে ,তো সে ঈদের ২য় দিন খুব উত্তেজিত হয়ে ফোন দিল, দিয়ে বলছে দোস্ত তুই আমাদের নতুন বাংলালিংকের এ্যাডটা দেখছিসআমি বললাম দোস্ত আমিতো টেলিভিশন দেখিনা তবে নিউজ পেপারে দেখেছি। ও বলল
দোস্ত মিস করিসনা এখনই দেখ বন্ধুর অনুরোধে টেলিভিশন অন করলাম
কিছুক্ষণ দেখার পরই দেখি খুবি জাঁক জমক পূণ বিয়ের সেট দেখলেই বোঝা যায় হিন্দি ছবির কপি পেস্ট সেট। অতঃপর "কাভি খুশি কাভি গাম" স্টাইলে তরুণ তরুনীর প্রবেশ, যাই হোক এ পযন্ত হজম করলাম কিন্তু যখন দেখলাম সেই বিয়ের আসরে আমাদের কিছু নাদান মডেল আতিশয় সুসজ্জিত হয়ে কলরেট বলছে তখন আর চ্যানেল পরিবর্তন না করে থাকতে পারলাম না। আধা ঘন্টা পর আমার বন্ধুর ফোন জিজ্ঞেস করে দোস্ত কেমন দেখলি ? আমি ঢোক গিলে বললাম দেখলাম আর কি তোমাদের বান্দি প্রোডাক্ট ও জিজ্ঞেস করে বান্দি মানে কি আমি ওরে বোঝাই বান্দি মানে (বাংলা+হিন্দি=বান্দি)।ও বোঝে কিনা সেটা আমি বুঝতে পারিনা , কিন্তু ও দ্বিগুন উৎসাহে আমাকে ওই এ্যাডের ভারতীয় কলা কুশলীদের গল্প করতে থাকে ।আর আমি অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকি টেলিভিশনের স্ক্রিণে যেখানে ঈদ উপলক্ষে বিজ্ঞাপনের বণ্যা বয়ে যাচ্ছে।

বাংলার লোককাহিনী অনেক সমৃদ্ধ এবং এগুলো আমেদের বিশেষ সম্পদ। বিশেষ করে মনসা মঙ্গল তথা বেহুলা লখিন্দর এর মত বহুল পঠিত এবং সমাদৃত এবং কালক্রমে আমাদের সমজেরই একটা অংশ হয়ে ওঠা কাহিনী নিয়ে যখন শুধু অর্থের কারণে কাহিনী বিকৃত করে "বেহুলা" নামক থার্ড ক্লাস মেগা সিরিয়াল প্রচার করে ভারতের টিভি চ্যানেল এবং তা বুদ হয়ে দেখে আমাদের অসচেতন দর্শক । তখন সত্যই খুব খারাপ লাগে কি হচ্ছে আমাদের চারপাশে এসব ??





সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:০১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×