রাজধানীর ইস্কাটনে বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানের বাসার মূল গেটে ধাক্কা দেন দুই ব্যক্তি। তারপর আরেকজন আসেন। ওই ব্যক্তিরা একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল থেকে এসেছেন বলে জানান। এসময় তাদের হাতে ছোট ক্যামেরাও ছিল। আজ শনিবার সকাল ৬টার ঘটনা এটি।
সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তিদের বাসার ভেতরে নিয়ে যান কেয়ারটেকার মতিন। আগত ব্যক্তিরা মতিনকে জানান, তাদের টেলিভিশনে শফিক রেহমানের একটি সাক্ষাৎকার রয়েছে। তাই তারা তাকে নিতে এসেছেন।
আগত ভদ্রলোকদের বসতে দেন মতিন।পরে শফিক রেহমান এসে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ওই ব্যক্তিরা শফিক রেহমানকেও একই কথা বলেন যে, তারা টেলিভিশন থেকে এসেছেন। এরপর তিনি ফ্রেশ হতে ভেতরে যান এবং ওই ব্যক্তিদের জন্য নাস্তা ও মিষ্টি পাঠান।
শফিক রেহমান রেডি হয়ে নতুন পোশাক পরে তাদের সামনে এলে ওই ব্যক্তিরা নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে বলেন, আমরা ডিবি সদস্য, আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে।
এরপরই তাকে একটি গাড়িতে করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। গণমাধ্যমের কাছে এভাবে ঘটনার বর্ণনা দেন শফিক রেহমানের বাসার কেয়ারটেকার আব্দুল মতিন মোল্লা।
সত্যিই কত নাটক করতে পারেন পুলিশ। গল্প তৈরি করে, অভিনয়ের মাধ্যমে দেশের একজন বিশিষ্ট সাংবাদিককে গ্রেফতার করলেন পুলিশ। এরপর আবার অস্বীকারও করেছেন। কিছুক্ষণ পড়ে আবার স্বীকারও করে নিলেন।
আরও কিছুক্ষণ পরে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ চেষ্টা মামলায় শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন পুলিশ। তার রিমান্ড চাইতে পারে পুলিশ। এজন্যই হয়তো অনেক সময় মানুষ বলে শুনি, পুলিশ কি না পারে?
ধরে নিলাম কোন দুর্বৃত্তকে আটক করতে কৌশল নিতে হয়। তাই বলে শফিক রেহমানের মতো একজন সাংবাদিককে আটক করতে এতো কৌশল কেন? পুলিশ পরিচয় দিলে তিনি কি ওয়াল টপকিয়ে পালিয়ে যেতেন? তিনি কি পুলিশের ওপর হামলা চালাতেন? তিনি কি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেন। যদি প্রতিরোধ করতেন, তাহলে তো বরং আরেকটা মামলা দেয়ার সুযোগ তৈরি হতো পুলিশের জন্য।সরকারি কাজে বাঁধা দেয়ার মামলা। নাকি শফিক রেহমানদের গ্রেফতারে এতো ফন্দির প্রয়োজন হয় না সেটাও বুঝতে পারে না পুলিশ।
পুলিশ সবই পারে। শুধু পারে না, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের (সম্মান) শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে (১৯) রক্ষা করতে। হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে। পারে না এ হত্যার রহস্য বের করতে। পারে না সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার কিনারা বের করতে। পুলিশ পারে নি-অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, রাজিব হায়দার, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় ও অনন্ত বিজয় দাশকে রক্ষা করতে।
অপহরণ চেষ্টা মামলায় শফিক রেহমানদের গ্রেফতার করেন ভালো কথা, পাশপাশি এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্যও বের করেন। তাহলেই মিলবে সব নাটকের সার্থকতা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:২০