পুরোনোকে যে ছেড়ে দিতে পারেনা তার কপালে দুর্গতি আছে, যেই পুরোনো তাকে ছেড়ে দিছে বহুকাল আগে। পুরুষের মন স্বভাবতই নির্লজ্জ। লাজ-লজ্জা কিংবা লোকচক্ষুর ধার ধারেনা। যা খুশি তাই করা যায়, যেইখানে খুশি যাওয়া যায়। তার চলতে বাধাঁ নেই, বলতে বাধাঁ নেই, লিখতেও বাধাঁ নেই।
তাই পুরুষ জাতির উপর সকল দোষ চাপিঁয়ে হঠাৎ একদিন ফেবুতে পুরোনো হয়ে ধ্বসে যাওয়া সম্পর্কের খেরোখাতায় ইনবক্স করে বসলাম। ইনবক্সের বিস্তারিত কথোপকথন এখানে বলবার প্রয়োজন নেই, শুধু সারকথাটি যে কটি বাক্যে তাকে বুঝিয়েছিলাম তাই এখানে তুলে দিচ্ছি। উল্লেখ্য আমি এখানে প্রত্যক্ষভাবে তার কোনো অপরিচিত বন্ধুকে সম্বোধন করলেও পরোক্ষভাবে তাকেই বুঝিয়েছি, কারন ইনবক্সটা আমি তাকেই করেছিলাম।
" কেমন আছেন?"
সে বলল "ভাল।"
একপর্যায়ে তাকে রাগানোর জন্য বললাম, "আমি আপনাকে চিনি না, আপনিও আমাকে চিনেন না..." যে কথাগুলো সে'ই একদিন আমাকে বলেছিল।
উত্তর পেলাম "না চিনলে কথা বলবার কোনো প্রয়োজন নাই"
আমি বললাম, "এইটা আমার কথা নহে মহোদয়া, এইটা হোটেল ফার্মগেটে কোনো এক দুপুর কিংবা বিকালে কোনো একজনের সামনে চঞ্চল মনে বসিয়া থাকা জনাবা "X"-এর কথা ছিল। তাই দয়া করিয়া অযথা আমার সহিত রাগ করিবেন না। যদি একান্তই করিতে চান তবে আমি আপনাকে তাহার সহিত যোগাযোগ করাইয়া দিতে পারিব। কারন আমি তাহাকে চিনিতাম এবং আজীবনের জন্য চিনিয়া লইয়াছিলাম...জীবনে যে মানুষ একবারই চিনিয়া লইতে পারে, সে আপনাকে চিনিবে কেমন করিয়া?
ভাল কথা আপনার বাড়িও তো 'ঐ'-তে, আপনার সাথে যদি তাহার কোনোদিন দেখা হয় তবে তাহাকে আমার কথাটা বলিবেন...জানেন সে আমার উপর অভিমান করিয়াছিল, আমি যে বড্ড খারাপ ছেলে, তাহার অভিমান ভাঙাইবার সুযোগটুকুও দেই নাই, তাহাকে সরি-ও বলা হয় নাই। কিন্তু কি জানেন সে না অনেক ভালো ছিল, তাহার সহিত খুনসুঁটিতে আমার রাতগুলো খুব অনন্দে কাটিত, সে তাহার অজান্তেই আমার দুঃখ ভোলার সাথী হইয়াছিল, সে আমার ভাবনাগুলোর সহিত কেমন করিয়া মিশিয়া গিয়াছিল তাহা সে কোনোদিন জানিবে না
তাহাকে লইয়া আমি কত কত দেশ-মহাদেশ, কত নদী-পর্বত ঘুরিয়া আসিয়াছি তাহা সে কোনোদিন জানিবে না, কোন্ সমুদ্রের বালুকাবেলায় হাটিতে হাটিতে আমরা দুরে নিবিষ্ঠ ঘন বনের মধ্যে হারাইয়া গিয়াছিলাম, যেখানে বর্ণহীন গোলাপ ফুলেরা বিমর্ষভাবে কেবল ফুটিয়া গিয়াছে, তাহাতে কোনো রং ধরে নাই। যেখানে বিশাল হ্রদের নীল-স্বচ্ছজল স্থির নিস্তরঙ্গ থাকিত কোনো প্রস্ফুটিত পদ্ম তরঙ্গে দুলিত না। কোনো পাখিও কখনো গান গাহিত না। কবে তাহার রক্তিম ওষ্ঠের নিরাভরন নিষ্কলঙ্ক স্পর্শে গোলাপ ফুলেরা রক্তবর্ণ হইল, কবে তাহার চলার ছন্দে স্থর জলে তরঙ্গ জাগিল, পদ্ম ফুলেরা তরঙ্গ ভঙ্গের আন্দোলনে আন্দলিত হইয়া উঠিল, তাহার নুপুরের ছন্দে ছোটছোট খরগোশ গুলি চতুর হইয়া উঠিল, তাহার হাতের কাকনের রিনিঝিনিতে যেন সহসা সুর পাইয়া গাছে গাছে পাখিরা গাহিতে লাগিল, এইসব হয়ত সে কোনোদিন জানিবে না, কোনোদিন বুঝিবে না।
আজ অনেকদিন গত হইয়াছে সে আমা হইতে বহু দুরে, তাহার সাথীটার দিন কিভাবে যাইতেছে, সে কি বাচিঁয়া আছে না মরিয়া গিয়াছে সে খবর তাহাঁকে কে দিবে? সে কি বুঝিয়াও বুঝিল না, এ প্রশ্নের উত্তর আমাকে কে দিবে? এত অবুঝ-অভিমানী-পাষান কেন সে? সে যে নিপুণা ধ্রুব সূর্যের মতই সত্য হইয়া আসিয়াছিল আমার জীবনে, তাহার অজনা আলোকস্পর্শে আমার জীবন আলোক ঝলমলে হইয়া উঠিয়াছিল। আমি যে বড়ই কষ্টে আছি, আমার সুখপাখিটা বোধহয় জানেও না...আমি তাহাকে এখনো মিস করি...
আর বলিতে পারি না, বড় দুঃখ জমা এই বুকে। দয়া করিয়া আমার কথা তাহাকে বলিবেন।"
শেষের মেসেজগুলো হয়ত খুব সুন্দর হতে পারত। কিন্তু না। সে পাষান মন গলল না। তাই আমি লিখতে বাধ্য হলাম, "ok শেষ পর্যন্ত যখন তুমিও আমাকে বুঝলে না, তো আমার আর কিচ্ছু বলার নাই। অনেক হইছে এতদিন, আজ বিদায়। দেখি এভাবে কয়দিন বাচাঁ যায়।"
কিন্তু আমি সেই পুরোনোকে ভুলতে পারছি না। ফলে পুরোদমে না হলেও দুর্গতির গন্ধ কিছুটা পাচ্ছি।
পুনশ্চঃ লেখাটির কোন অংশও কপি-পেষ্ট করা নিষিদ্ধ।