বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কোভিড পরবর্তী সময়ে অন্য অনেক দেশের চেয়ে ভালো। ৭,৯% জিডিপি গ্রোথ রেট বিশ্বের খুব কম দেশের মধ্যেই আছে। মাথাপিছু জিডিপি'তে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে(যদিও ইহা অবাস্তব জিনিস, শুধু সংখ্যা) নারীর ক্ষমতায়ন, নারী শিক্ষার হার, নবজাতক ও ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনায় বাংলাদেশের সূচক ভারতের চেয়ে বেশ খানিকটা উপরে। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠা এবং করোনাকালে উন্নয়ন ধারাকে অব্যাহত রাখার পারদ ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ উপরে। পাকিস্তান একসময় বাংলাদেশের চেয়ে ৭০ শতাংশ ধনী ছিল অথচ বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি ধনী বলে বেশ শোনা যায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারত সরকারের সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামানিয়ান ‘দ্য প্যারাডক্স অব বাংলাদেশ মিরাকল’ নামে একটি নিবন্ধে বাংলাদেশকে উন্নয়নের উজ্জ্বল মডেল হিসেবে তুলে ধরে তা থেকে ভারত ও পাকিস্তানের শেখার আছে মনে করেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হইতেছে বৈদেশিক রেমিট্যান্স। করোনা শুরুর সময়ে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ অনেক অর্থনীতিবিদ ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে বিদেশে বসবাসরত অভিবাসীদের কর্মসংস্থান হারানোর কারণে বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যাবে। অথচ বাস্তব চিত্রটি ছিল ঠিক বিপরীত। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বৃদ্ধি ছিল ১১ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ভোগ বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই যে বৈদেশিক রেমিট্যান্স এর ফল- অভ্যন্তরীণ ভোগের চাহিদা অব্যাহত বেড়েছে, অন্যদিকে তা বিনিয়োগেও গিয়েছে।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ভালো করতেছে এ কথা হলফ করে বলা যায়। (তবে আমি মনে করি বাংলাদেশ আরো অনেক দুর এগোতে পারত যদি মেগা প্রকল্পের নামে অর্থ লোপাট না হইত।) কিন্তু শ্রীলংকার অবস্থা খুব খারাপ। অতিমূল্যস্ফীতির দিকে এগোচ্ছে শ্রীলঙ্কা। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না পণ্য। বিদ্যুৎ-গ্যাসের সরবরাহ বিঘ্নিত। আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত। স্থানীয় মুদ্রার মূল্যমানে ধস নেমেছে। শেয়ারবাজারে ঘটেছে ব্যাপক পতন।
অথচ দক্ষিণ এশিয়ায় পোশাক খাতের রপ্তানি প্রথম শুরু হয়েছিল এই শ্রীলঙ্কা থেকেই যা এখন বাংলাদেশে। অনেক পর্যটকেরও পছন্দের জায়গা ছিল শ্রীলঙ্কা। একসময় সামাজিক সূচকে শ্রীলঙ্কা ছিল দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সেরা। শিক্ষায় ছিল সবচেয়ে এগিয়ে তাহারাই। কিন্তু ভুল পরিচালনা তাদেরকে খুব খারাপ অবস্থায় নিয়ে এসেছে।
আজকাল লংকার খারাপ অবস্থার পেছনে বিশ্লেষকগণ যা যা দায়ী করতেছেন তার মধ্যে প্রধান কারণ সমুহ হইলো-
১। রাজাপাকসে পরিবারের গোষ্ঠীতন্ত্র (মনে পড়ে যায় না বাংলাদেশী পরিবারতন্ত্র?)
২। খামখেয়ালিপূর্ণ সরকারি সিদ্ধান্ত (বিরোধী মত অবজ্ঞা করতে খুব মজা লাগে)
৩। ভুল নীতি (যাতে নিজ রাজনৈতিক দলের চেলা চামুন্ডা উপকৃত হয়)
৪| ভুল ভুল প্রকল্প বাছাই যাতে সম্পদ মেরে দেওয়া যায়।
৫| আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি
প্রকৃতপক্ষে রাজাপাকসে সাহেব নিজ হাতেই অর্থনীতির বারোটা বাজায় দেন। তিনি হুট করেই ভ্যাট কমিয়ে দেন ফলে সরকারী ভান্ডারে টান পড়ে যায়। ডলারের রিজার্ভের সাথে অনুপাত না রেখে টাকা প্রিন্ট করতে থাকেন ঐদিকে মুল্যস্ফিতির হার বাড়তে থাকে। এই ভারসাম্যহীনতার কারণে দেশের বাজারে নেগেটিভ প্রভাব পড়তে থাকে। শুরু হয় টানাপোড়ন।
এর মধ্যে দেশের কৃষিখাতকে অবহেলা করেন মিঃ রাজাপাকসে। ডলার কিপটেমি করতে গিয়ে তিনি করেন কি; রাসায়নিক সার আমদানি নিষিদ্ধ করেন ফল? দেশের খাদ্য খাতে এবং বহু বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী খাতে ধ্বস নামে।
কোভিড তো আছেই কিন্তু প্রধান এই সকল ভুলই আজ লংকাকে এই খারাপ অবস্থায় নিয়ে এসেছে। ২০১৯ সালেও লংকার উন্নতির হার ছিল উপরের দিকে কিন্তু এখন এত খারাপ অবস্থা যে ইউক্রেন এর থেকেও মানবেতর অবস্থায় তাদের পড়তে হইতেছে।
সমস্যাটা কম হইত যদি জনগণের পেছনে ব্যয় করা যাইতো। কিন্তু লংকার অবস্থা অনেকটা বাংলাদেশের মতো কি-না। বছরে বছরে হাতি পুষার মত সরকার পুষতে হইতেছে জনগণের শ্রমের টাকায়। অধিকাংশ ব্যয় চলে যাইতেছে সরকার পরিচালনা খাতে, টেন্ডারে, দুর্নিতিতে। ফলে দেশের মোট উৎপাদনে বিশাল পরিমাণ খারাপ প্রভাব পড়তে হইতেছে।
এখন সতর্কতা স্বরুপ বাংলাদেশের ভবিষ্যত কল্পনা করুন-
১। গোস্ঠীতন্ত্র কি আছে?
২। যা ইচ্ছা তাই বলা, করা (আছে?)
৩। অদভুত সব ব্যয় (পুকুর বানানো দেখা, ক্যামেরা দেখতে বিদেশ সফর)
৪| অনিয়ন্ত্রিত মেগা প্রজেক্ট (প্রজেক্ট আর শেষ হয় না, ব্যয় বাড়তে থাকে)
৫| রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নিতি(আছে?)
একটা ভুল চালই বাংলাদেশের বাইরে ফিটফাট ভিতরে ফাঁক এর খবর বিশ্ববাজারে তুলে ধরবে। অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকা'র ঘটনা জানার মতই।
আমি মনে করি (সতর্ক হইলে) বাংলাদেশ সরকার এখন যা করতে পারে-
১। এক নম্বরে চুরি'র সংস্কৃতি বন্ধ করতে সচেষ্ট হইতে পারে। পুকুর চুরি নহে, এ তো সমুদ্র চুরি! বছরে বছরে কোটি কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা খসানোর নামে তো চুরি করাই হইতেছে। তার ওপরে সরাসরি অনেক চুরি আছে যেটা ইমপোর্ট/এক্সপোর্টের নামে করা হই।
২। সমস্ত বিরোধী মত সহ্য করার চেস্টা।
৩। রাশা'র সাথে সখ্যতা কমানো, আমেরিকার সাথে বাড়ানো।
৪। দুর্নিতির বিরুদ্ধে দুদক'কে শক্তিশালী করা।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২২ সকাল ১০:৫৩