১৯৭১ সালে জামাত পাকিস্তান ভাঙতে চায়নি, ১৯৪৭ সালে সেই একই জামাত ভারত বিভক্ত করতে চায় নি। এরশাদের সময়ে নির্বাচনে গিয়েছিল আওয়ামীলীগের সাথে (না যাবার ওয়াদা ছিল) ফলতঃ বেইমানী করেছিল বলে রেকর্ড আছে। জামাত দলটি সাধারণত মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি হিসাবে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার দ্বারা সনাক্ত হয়েছে যেখানে অন্যান্য বামপন্থি দল রেহাই পেয়ে যায়।
এই জামাত আবার একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে ঘুরে দাড়ানোর চান্স দেখা যাইতেছে যা বছর খানিক আগেও কল্পনার বাহিরে ছিল। জামাতের পজিটিভ সাইড হইল তাদের সাংঘঠনিক শক্তি, অর্থনৈতিক ভিত্তি অনেক মজবুত। নেগেটিভ সাইট হইল একাত্তরের পরাজিত শক্তি।
মিডিয়ার পচানি + র এর হস্তক্ষেপ না খাইলে আজকে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে আবির্ভুত হইতে পারত জামাত। জামাত বাংলাদেশে জেগে ওঠলে ভারতের জন্য হবে ভয়ানক সংবাদ। এখানে জামাতের দায়-ই আসলে বেশি।
কেন জামাত এখনো রাজনিতীতে দুর্বল?
১। কৌশলগতভাবে ভারতকে বন্ধুভাবাপন্ন হিসাব না করে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছে।
২। একাত্তরের বিষয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ভুল স্বীকার করে সেটাকে জাতীয় অর্জন হিসাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।
৩। কেবলমাত্র ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে নেওয়া।
৪। সূদুরপ্রসারী রাজনৈতিক চিন্তাধারার অভাব।
বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থায় জামাত নতুন করে আলোচনায় যেহেতু আসছে তাদের নিয়ে একটা প্রশ্ন করা জরুরী। প্রশ্নটা আসলে জামাতের কি করা উচিত হলেও আমি প্রশ্নটা ভিন্নভাবে করতে চাই। কারণ দল হিসাবে জামাত এতটাই কট্টর যে এই প্রশ্ন/আলাপ করাটাই বৃথা।
জামাতের সমর্থকদের কি করা উচিত?
১) জামাতের উচিত বাস্তবমুখী চিন্তা করা। ১৯৩০-৬০ সালের মওদুদীবাদ এখন আর চলার কথা না। জামাতের মৌলিক জায়গাতেই সমস্যা আছে, তা হল ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে রাজনীতিতে আনা। কিন্তু মানুষ শুধু ধর্মকেন্দ্রিক চিন্তা করে না, চলে না, ফিরে না। এই সহজ বিষয়টা বুঝে ফেললেই শুধু জামাত কেন অন্য সব ইসলামপন্থী দলও ক্লিয়ার রাজনিতির একটা হিসাব পাবে।
২) সাবেক নেতা গোলাম আজম সহ বর্তমান জামাতের পুরা থিংকট্যাংকই আসলে ব্যাকডেটেড এবং বর্তমান যুগের রাজনিতিতে এনারা আসলে সাড়া জাগানো কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। তাই ইনাদের সবাইকে বাদ দিতে হবে, শিবিরের থেকে মেধাবি সাবেক ছাত্রনেতাদের যারা ধর্ম নিয়ে বেশি কনসার্ন না এমন লোকদের নিয়ে থিংকট্যাংক বানাতে হবে।
৩) আধুনিক আর্টিফিসয়াল ইনটেল এর যুগে টেকনোলোজিতে অগ্রসর তরুণদের নিয়ে নতুন করে রাজনিতির মাঠ সাজাতে হবে।
শেষকথা
দেশের উন্নতি চাইলে জামাতের রাজনিতির বিকল্প নাই এমন ভাবনা থাকলে উহা ঝেড়ে ফেলুন, কারণ জামাতের আগানোর কোন ভাল রিজন আর নেই। কেন এ কথা বললাম, আমার পরিচিত এমন কিছু লোক আছেন যারা মননে বাংলাদেশকে ধারণ করেন এবং এই কারণেই শেখ হাসিনা-ইন্ডিয়া ইস্যুতে জামাতকে সমর্থন করেন। তাদের ভাবনা হইল জামাতই একমাত্র দল যারা ভারতের সাথে বিরোধিতা করার সাহস রাখেন। অথচ ইহা যে কেবলমাত্র রাজনৈতিক বৈশিষ্ট উহা বুঝার মত মষ্তিষ্ক খুব কম লোকই আসলে ধারণ করেন।
আমার অভিমত জানতে চাইলে বলব- জামাতের কোন রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। কারণ এই দল ধর্ম নিয়ে মানুষকে যে বার্তা দিচ্ছে আদতে উহা ভন্ডামি বৈ কিছু নহে, এটা চলে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:৪৩