যখন নাইন টেনে পড়তাম বাংলায় একটা রচনা পড়েছিলাম ‘দুর্নীতি ও তার প্রতিকার’। প্রথম লাইনটা ছিল এ রকম- ‘যা নীতি বহির্ভূত তাই দুর্নীতি’।এখন বাংলাদেশে যা চলছে তার কোনটা নীতি, আর কোনটা দুর্নীতি তা আলাদা করা অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।কারন আমাদের দেশে শুধুমাত্র পয়সা চুরিকেই দুর্নীতি হিসেবে ধরা হয়! অন্য সকল অসৎ অনৈতিক কার্যক্রমকে দুর্নীতি হিসেবে ধরাই হয় না!! কাজেই আমরা সত্যিকার অর্থেই কোনটা দুর্নীতি আর কোনটা নীতি সেটা আলাদা করতে ভুলে গেছি! বাংলাদেশে অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবে তারা নির্যাতনের শিকার হবে!
আজকের প্রথম আলোর শেষের পৃষ্ঠার নিউজ, “রাজধানীর শাহবাগ থানার ‘সার্ভিস ডেলিভারি রুমে’ ঢুকিয়ে মেডিকেলে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়েছে পুলিশ। গতকাল বুধবার এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে ওই শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে টিএসসি থেকে শাহবাগের দিকে যাওয়ার পথে টেনেহিঁচড়ে পুলিশ তাঁদের তুলে নিয়ে যায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের টেনেহিঁচড়ে পুলিশ শাহবাগ থানার ভেতরে নিয়ে যায়। পরে বিপুলসংখ্যক গণমাধ্যমকর্মীর উপস্থিতিতে পুলিশ ওই শিক্ষার্থীদের ‘সার্ভিস ডেলিভারি রুমে’ ঢোকায়। এ সময় ওই কক্ষের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। ছাত্রফ্রন্টের মহানগর শাখার সভাপতি নাঈমা খানম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সোফায় শুইয়ে শার্ট খুলে রাইফেলের বাঁট দিয়ে পুলিশ পেটায়”।
এই হচ্ছে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে নৈরাজ্যের সর্বশেষ পরিস্থিতি।আচ্ছা কেউ যদি বলে বাংলাদেশ দিন দিন অসভ্য হয়ে উঠছে,তাহলে কি সে ভুল বলবে? কোটি কোটি টাকা চুরি করেছে প্রশ্ন ফাঁসকারীরা আর নির্যাতন করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে তাদের উপর! কি হওয়ার কথা ছিল! আর হচ্ছেটা কি? বাংলাদেশ কি মগের মুল্লুক হয়ে যাচ্ছে? নাকি জোর যার, বাংলাদেশ তার?
“এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ” এই বিলবোর্ডে সারা ঢাকা শহর ছেয়ে গেছে। আর আমরা সেই সংবাদে খুশি হয়ে বসে বসে তামুক খাচ্ছি। আর দেখছি কি করে একটা দেশের পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যর্থ হয় একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে!
প্রথমবার যখন পিইসির, জেএসসির,এসএসসির, এইচএসসির প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল সরকারদলীয় বুদ্ধিজীবী হিসেবে সমধিক পরিচিত ডঃ জাফর ইকবাল অনেক চিল্লাচিল্লি করেছিলেন। কিন্তু সরকার কান দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি ডঃ ইকবালের কথায়।অধ্যাপক ডঃ ইকবালের ইমেইলে পরিক্ষার আগের দিন প্রশ্ন পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল।পরের দিন তিনি মিলিয়ে দেখেছেন সেই প্রশ্ন হুবহু মিলে গেছে! আর সরকার উল্টো অস্বীকার করেছে পুরো বিষয়টা।
আরে দুইশো টাকায় নীলক্ষেত, আজিমপুর চায়না বিল্ডিং গলিতে প্রশ্ন কিনতে পাওয়া যায় এ কথা আমার ছাত্র আমার নিজের কাছে বলেছে। কিনে এনে দেখিয়েছে। আমিও পরে মিলিয়ে দেখেছি।আর মাগনায় পাওয়া গেছে ফেইসবুকে! আর অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী, এক কালের বামজীবী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই ‘ওপেন সিক্রেট’ নৈরাজ্যকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন; আরও খোলাসা করে বললে একের পর এক পরিহাস করেছেন।শুনেছি পয়সার ব্যাপারে নাহিদ সাহেব এখনো ১০০ ভাগ সৎ লোক। তবে একটা কথা স্বীকার করতেই হবে আমরা যারা প্রশ্নফাঁসের বিষয়টা সরেজমিনে দেখলাম তাদের শ্রদ্ধা সম্ভবত তিনি আর কোন কালেই পাবেন না!
গত সরকারের হাজারও অপকর্মের ভিড়েও এহসানুল হক মিলনকে আজও অনেকে মনে করে তাঁর নকল বিরোধী ভুমিকার জন্য। আমি দুঃখিত, কারন আমাকে এ কথা বলতে হচ্ছে; নুরুল ইসলাম নাহিদ ব্যক্তিগত ভাবে টাকা পয়সার ব্যাপারে যতই সৎ হন না কেন, তার কথা মানুষ যুগ যুগ ধরে মনে করবে গভীর অশ্রদ্ধা নিয়ে।কারন সেদিন যদি তিনি যথাযথ পদক্ষেপ নিতেন তাহলে প্রশ্ন ফাঁসের সর্বশেষ ঘটনাটি,যা ঘটেছে মেডিকেলের ভর্তি পরিক্ষায়, ঘটতো না।
মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁসকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র লক্ষ লক্ষ টাকার বাণিজ্যই হয়নি; লুটপাট হয়েছে কোটি কোটি টাকার । সরকার যদি পুনরায় ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা না করে তাহলে আমরা ধরে নেব সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক হোমরা চোমরা ওয়ালারাও এই মহাদুর্নীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত! না হলে কেন সরকারের এত অনীহা পুনরায় ভর্তি পরিক্ষা নিতে? এই নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা সরকারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী?
চোর দের হাত যদি এতই লম্বা হয়ে থাকে তাহলে সরকারকে বলবো, রাইফেল দিয়ে না পিটিয়ে দেশের প্রতিবাদী মানুষদেরকে ধরে ধরে মেরে ফেলুন, লঞ্চে করে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিয়ে আসুন। তারপর আপনারা আপনাদের পেয়ারের দুর্নীতিবাজদের নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকুন।আপনাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা, মধ্যম আয়ের দেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করুন! কেউ আপনাদের ঝামেলা করবে না।
কারন একটা জিনিস মাথায় রাখবেন রাইফেলের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য আপনারা প্রতিবাদী মানুষদের থামিয়ে রাখতে পারলেও, লুটপাটকারিদের খপ্পরে পরে সর্বস্বান্ত হওয়া কোটি কোটি বাংলাদেশীকে দীর্ঘ সময়ের জন্য দাবায়ে রাখতে পারবেন না......
সরদার মাটি মাসুম
০১ অক্টোবর,২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৪৬