সকাল কখনও কাক ডাকা শুভ্রতা নির্মল বাতাসে ভরপুর। চোখ বুঝে বুখ ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার মত একটা সময় সকাল। হঠাৎ কে যেন ডেকে যায় দূরে টেনে নিতে চায় হাতছানি দিয়ে। দূর হতে চেতনা ভাঙা নবসুর এসে কানে লাগে। মিষ্টি কণ্ঠে সুমধুর গান এসে ভীর জমায় পাখিদের গলায়। গাছে গাছে গুল্ম লতাপাতার নাচন মনকে আন্দোলিত করে। সবুজ ঘাস আর মাটির সঙ্গে রক্ত মাংসে গড়া জ্ঞান সঞ্চারনে মানব চরণের একাত্মতা দেহমনে শিহরণ জাগায়। প্রাণে প্রাণে স্ফুরন হয় সজীবতার। উর্দ্ধমুখী হলে তাকিয়ে থাকে অসীম নীল আকাশ। কোথায় তার সীমানা কারও জানা নেই। সব জানা থেকে সব চেনা থেকে হিংসা থেকে পরশ্রীকাতরতা থেকে মুক্ত থাকার ক্ষণিকের সময় এই তো সকাল। এখানেই সংস্কারমুক্ত চিন্তায় উদ্বেলিত হয় মহৎ প্রাণ। বিস্তীর্ণকায় আকাশ, সবুজ অরণ্য আর নির্মল বাতাস শিক্ষাগুরু হয়ে দীক্ষা দেয় আমাদের। এখানে ব্যস্ত কাক প্রত্যাহিক দিনের ন্যায় জীবিকার সন্ধানে পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে।
সকালটা সুন্দর হয় ফুটফুটে শিশুর মত, কি পরিত্রতা তার ফুটে ওঠায়। গোলাপ; হাসনাহেনা; কামিনী আর দোলনচাঁপার ঘ্রান বিমোহিত করে। রাতের অন্ধকার ভেদকরে ওরা বেরিয়ে আসে, শুধু সকালের প্রতীক্ষায়......
কখনও জ্যোৎনার আলোর পায়, কখনও না হয় আমাবস্যা। তবুও সেতার লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর, সেই অন্ধকার তিমির রাত্রি যতই বিধে ফেলুক কাটা হয়ে, সে নিরাশ হয়না। পূর্নিমার আলোতে কিংবা অন্ধকারে শিশের নিস্তব্দতা টুপটাপ শব্দে ঠিকই ঝরে পড়ে, তখন কেঁপে ওঠে কিন্তু হু হু করে ওঠেনা। তবু সে পাপড়ি মেলে চায়; সমস্ত প্রতিকূলতা জয় করে শুধু সকালের প্রত্যাশায়।
শিশু মায়ের গর্ভে আসে ভ্রুন আকারে। মাতৃগর্ভে মানব শিশুর রূপ নিতে দীর্ঘদিন, দীর্ঘ সপ্তাহ, দীর্ঘ মাস অপেক্ষা করে। তার মায়ের নিবিড় আত্মত্যাগ তাকে পৃথিবীতে আসতে সাহায্য করে। প্রতিটি মানুষ এভাবেই তো ধরণীর মুখ দেখে। মা প্রতীক্ষায় থাকে প্রতিটি মূহুর্ত। স্বপ্ন দেখে অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে। শিশু মাতৃগর্ভের সুখময় আঁধার পেরিয়ে পৃথিবীর প্রত্যাশিত আলোয়ে স্থান করে নেয়ার জন্য বেড়ে উঠতে থাকে ধীরে ধীরে। মায়ের মনে ভেসে আসে অস্পৃশ্য আধোমুখ। মা সকল যন্ত্রণা ভুলে গিয়ে তাকে জড়িয়ে নেয় আত্মার নিগুঢ় বন্ধনে। নারীর টান তার চিরকাল সন্তানের জন্য স্থায়ী হয়ে যায়।
শিশুতো ফুলের মত। কুড়ি মঞ্জুর থেকে বেরিয়ে আসে। পেরিয়ে আসে রাত্রির অন্ধকার। ভ্রুন থেকে নবজাতক শিশু শৈশব, কৈশর পেরিয়ে তারুণ্যে জ্বলে ওঠে যৌবন ছুঁয়ে যায়। ধীরে ধীরে বয়োপ্রাপ্ত হয়ে ফুলের মত মাটিতে মিশে যায়। সমাধি হয় মৃত্যুর মধ্যদিয়ে। এখানেই শেষ নয় এরই মাঝে সে বেঁচে রবে কর্মের দ্বারা প্রত্যাহিক জীবন ধারায়। ফুল রোদ, বৃষ্টি, ঝড় পেরিয়ে কামিনী, হাসনাহেনা, ছোলনচাঁপা, রজনীগন্ধা হয়ে বেঁচে থাকে আমাদের অন্তরে। সমস্ত প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে অন্ধকার ভেদ করে ফুটে থাকে তার সুবাস ছড়িয়ে আমাদের আনন্দদানের প্রত্যাশায়। সে ফুল যতই শুকিয়ে ঝরে পড়ে যাক সে কখনও অসলিন হয় না।
সবুজ ঘাস সীমাহীন ধৈর্য্য নিয়ে দাড়িয়ে থাকে রাস্তার দুধারে ধূ-ধূ করা মাঠের পরে। পায়ের নিচে তার আবেশটুকু বুলিয়ে দেবার জন্য। যে আবেশের মাঝে তার ছোট প্রাণের অমরত্ব লুকিয়ে আছে। তেমনি মেঘ বেঁচে থাকে তার জলধারায়। পৃথিবীকে দাহনমুক্ত করে পবর্তশৃঙ্গ তার ভিতরে অগ্লিলাভাবে আগলে রাখে।
তবে কেন মানুষ পারবেনা একটুখানি ধৈর্য্য একটিখানি ত্যাগ। একটুখানি শৃঙ্খলা মেনে চলতে। সবুজ ঘাস ও ফুলের মত আমাদের রয়েছে কিছু না কিছু করার। তা খুজে নেয়ার মাঝে আমাদের দায়বদ্ধতা লুকায়িত। আমাদের সংগ্রাম থেমে যাবার নয়।
আমি, সে অথবা তারা সবার অন্তরালে অন্তঃরীক্ষে শুধুই মানুষ। মানুষের বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার মাঝে মানুষের স্বার্থকতা। ‘আশা’ চিরন্তন সজীব প্রাণবন্ত সকালের মত। সফলতার দৃঢ় প্রত্যয় জাগরিত হয় মানবতার জয়ধ্বনিতে...