somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামের মৌলিক কিছু ধারণা

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(এই প্রবন্ধটি ইসলামের মৌলিক বিষয়াদি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা দিবে। এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পেতে সহায়তা করবে। এটি কোন গবেষণা থিসিস নয়, তাই সব বিষয়ের রেফারেন্স দেয়া হয়নি। সমালোচনার দৃষ্টিতে পড়লে অনেক সমালোচনা করা যাবে, কিন্তু এতে এর মূল আবেদন ক্ষুন্ন হবে। পাঠকদেরকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে পড়ার আহবান জানাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ উপকারী প্রমাণিত হবে।)

এক :
বিভিন্ন ধর্মের মত ইসলামের জন্যও "ধর্ম " শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, কিন্তু এ শব্দটি ইসলামের পূর্ণ আবেদন প্রকাশে যথেষ্ট না। এ শব্দটি মূলত কিছু আচার -অনুষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই ইসলামের জন্য সবচে' গ্রহণযোগ্য শব্দ হল যেটি কোরআনে ব্যবহার হয়েছে -দ্বীন। দ্বীন শব্দের অর্থ হল, এমন কিছু বিধি -বিধান যা মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যুর পর পর্যন্ত পালনীয়। যেমন - জানাজা, কাফন,  দাফন, মিরাস এগুলো মানুষের মৃত্যু পরবর্তী জীবনের সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং ইসলামের ভাব প্রকাশে "জীবন বিধান "শব্দটিও পূর্নাঙ্গ সহায়ক নয়।

দুই :
ইসলামের বিধি -বিধানগুলো দুই ভাগে বিভক্ত। কিছু বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত, দৈহিক কাজ কর্মের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। যেমন : আল্লাহর অস্তিত্ব, জান্নাত,  জাহান্নাম, শেষ বিচার ইত্যাদি। এসব বিধানের নাম -আকিদা। বহুবচনে আকাইদ। এর অপর নাম ঈমান। এটা ইসলামের প্রাণ। কারও আকিদা যদি ঠিক না থাকে তার কর্মের কোনও মূল্য আল্লাহর কাছে নেই।
আর কিছু বিধি বিধান দৈহিক কাজ কর্মের সাথে সম্পৃক্ত। এর চারটি শাখা আছে, কিন্তু সমস্টিকভাবে এগুলোকে বলা হয় শরীয়ত। এর অপর নাম আমল।যেমনঃ নামাজ, রোজা ইত্যাদি। ঈমান ও আমল এই উভয়টির সমস্টি হল ইসলাম। রাসূল সা ছিলেন পূর্নাঙ্গ ঈমানদার, সেই সাথে আমলের ক্ষেত্রে সবচে বেশি যত্নশীল। মৃত্যুর আগ মূহুর্তে যখন তিনি হাঁটাচলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন, তখনো নামাজে গিয়েছেন দু 'জনের কাধেঁ ভর দিয়ে। সুতরাং যারা বলে ঈমান ঠিক থাকলে আমল লাগে না তাদের কথা সম্পূর্ণ ভুল। যেমনটা আজকের মাজার পূজারীরা বলে। মূলত আমল হল ঈমানের মানদন্ড। কার কতটুকু ঈমান আছে তা বুঝা যাবে তার আমলের মাধ্যমে। যেমন এক হাদীসে রাসূল সা বলেছেন - রাতের আধারে যাকে বেশি বেশি মসজিদে যেতে দেখ তার ঈমানের ব্যপারে সাক্ষ দিতে পার।

তিন :
শরীয়তের চারটি শাখা। যথা :
ইবাদত,
মুয়ামালাত (পারস্পরিক লেনদেন), মুয়াশারাত (সামাজিকতা),
আখলাক (উত্তম চরিত্র),
ইবাদত হল যেগুলো শুধু
আল্লাহর জন্য করা হয়। যেমন : নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাত, কোরবানী ইত্যাদি। মুয়ামালাত হল পারস্পরিক লেনদেন, যেগুলো উভয়দিক থেকে বিনিময়যোগ্য। যেমন :ক্রয় বিক্রয়। অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইসলাম কিছু মৌলিক নীতিমালা প্রদান করেছে। যেগুলোর সফলতা আজ বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। সারা দুনিয়া পুজিবাদ, সমাজবাদ চষে বেড়িয়ে এখন প্রবল্ভাবে ইসলামী অর্থনীতির প্রতি ঝুঁকছে। সমাজতন্ত্র তো পৃথিবীর সুপার পাওয়ার সেনাবাহিনীর ট্যাংক কামান দিয়েও টিকিয়ে রাখা যায়নি। আর পুজিবাদ প্রবল প্রতাপে প্রায় সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর এখন মুখ থুবড়ে পড়ছে। পক্ষান্তরে ইসলামী অর্থনীতি নানান বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও তুমুল গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। পৃথিবীজুড়ে ট্রিলিয়ন ডলারের বানিজ্য সে নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশ্ব অর্থনীতির ত্রিশভাগ এখন ইসলামী অর্থনীতি। পুঁজিবাদের আতুঁড় ঘর ইউরোপ এখন তীব্র গতিতে এদিকে আসছে। 29 অক্টোবর 2013 তে লন্ডনে হয়ে গেল বিশ্ব ইসলামী অর্থনৈতিক ফোরামের শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, লন্ডনকে ইসলামী অর্থনীতির কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলবেন। (কালের কন্ঠ, 4 নভেম্বর)। 
তারা বুঝতে পেরেছে যে, এই অর্থনীতির ভবিষ্যৎ আছে। অতিমুনাফা, লোভ ও স্পেকুলেশনের যে ভাইরাস তাদের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে তা ইসলামী অর্থনীতিতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। 

মুয়াশারাত হল সামাজিকতা। পিতামাতা, প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব এদের সাথে কী আচরণ করতে হবে সেসবের বিস্তারিত ও সুস্পষ্ট নীতিমালা। যেমন : কোরআনে আছে ভ্রমনসংগীর সাথেও উত্তম আচরণ করার কথা। অন্যগুলো তো আছেই। কিন্তু এটার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করলাম কারণ বর্তমান আত্মকেন্দ্রিকতার এই যুগে হয়তো অনেকের কল্পনায়ও আসবে না যে ভ্রমণসংগীরও অধিকার আছে।এক হাদীসে আছে -যে ব্যক্তি পেট পুরে খেল আর তার প্রতিবেশী থাকে ক্ষুধার্ত, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত না। এসব আয়াত ও হাদীস আমাদেরকে উত্তম সামাজিকতার পথনির্দেশ করে।

আখলাক দ্বারা উদ্দেশ্যে হল সুন্দর আচরণ।  এক হাদীসে আছে -হাসি মুখে কারও সাথে সাক্ষাৎ করাও পূন্য। এ ধরনের বহু হাদীস হাদিসের গ্রন্থসমূহে আছে। 
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, যারা ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের ন্যায় মসজিদ কেন্দ্রিক কিছু আচার অনুষ্ঠানের সাথে সীমাবদ্ধ করে দিতে চান, তারা ইসলামের প্রাথমিক বিষয়াদির সাথে ন্যুনতম পরিচিতিও গড়ে তুলতে পারেন নি। আর যারা এই স্লোগান তুলেন যে -ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। আর এর দ্বারা বুঝাতে চান যে রাষ্ট্রীয় কাজ কর্মের সাথে ইসলামের সম্পর্ক নেই। তারা আছেন বোকার স্বর্গে। হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে সঠিক সমঝ দাও!!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×