somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাডের দীঘির কিংবদন্তী (লোক সাহিত্য)

২৬ শে মে, ২০০৮ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিংবদন্তী হলো তাই যা ইতিহাস ও কল্পনার সংমিশ্রণে লৌকিক কথা সাহিত্যের রূপ নেয়। আপনাদের ভালো লাগলে জানাবেন। তাহলে সামনে আরও কিছু লোক সাহিত্য থেকে নেয়া গল্প তুলে ধরা যাবে।

কুমিল্লা জেলা থেকে বাংলা একাডেমীর নিয়োজিত সংগ্রাহক জনাব মোহাম্মদ মোর্তজা আলী “নাডের দীঘির” কিংবদন্তীটি সংগ্রহ করেছেন।
নাডের দীঘির কিংবদন্তী

কুমিল্লা জেলার হাজিগঞ্জ থানার শহরের কাছে এক প্রকান্ড দীঘি আছে। এই দীঘিটিকে লোকে নাডের দীঘি বলে।

একটি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দীঘিটি অবস্থিত। দীঘিটির চারটি পাড় এখনো অভগ্ন অবস্থায় আছে। দীঘিটি দর্শকদের কাছে খুবই দর্শনীয় বস্তু। নাডের দীঘি নিয়ে একটি চমৎকার কিংবদন্তী আছে। তবে কিংবদন্তীটি কিছুটা ইতিহাসমূলক।

মহামান্য মোগল সম্রাট শাহজাহানের অন্তিম মুহূর্তে দিল্লীর সিংহাসন নিয়ে তার পুত্র শুজা, ঔরঙ্গজেব ও মুরাদের মধ্যে ভিষণ কলহ বাধে। পিতার সিংহাসনের জন্য প্রত্যেকেই দাবী জানালো। মোগল সম্রাজ্যের তখন ঘোর দুর্দিন। সিংহাসন লাভের দুর্বার মোহে শুজা, ঔরঙ্গজেব ও মুরাদ প্রত্যেকেই স্ব-স্ব সৈন্য নিয়ে দিল্লী অভিমুখে যাত্রা করলেন।
কিন্তু ঔরঙ্গজেব আপন বীরত্ব ও বিচক্ষণতার গুণে সকল ভাইকে পরাজিত করে দিল্লীর সিংহাসন লাভ করলেন। সম্রাট শাহজাহান আপন ছেলে ঔরঙ্গজেব কর্তৃক বন্দী হলেন।
এইদিকে শুজা প্রাণের ভয়ে পূর্বদিকে পালালেন। তারপর তিনি আরাকান রাজ্যে পাড়ি জমালেন। কথিত আছে যে আরাকান যাওয়ার পথে শুজা হাজিগঞ্জে কিছুদিন সপরিবারে অবস্থান করেন। সেখানে থাকাকালীন অবস্থায় তার খায়েশ হলো এখানে তিনি একটি স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে একটি প্রকান্ড দীঘি খনন করে রেখে যাবেন।
যেই চিন্তা সেই কাজ। বাদ্শার আদেশত্রƒমে দীঘি খনন কাজ শুরু হলো। হাজার হাজার লোক দিঘির কাজে লেগে গেলো।
এইভাবে একমাস একদিন খননের পর দীঘি হাজিগঞ্জের চেহারা পরিবর্তন করে দিলো। কিস্তু বাদ্শার মনের স্বাদ পূর্ণ হলো না। কারন দীঘিটি জলপূর্ণ নয়। কোনত্রƒমেই দীঘিতে পানি আসছিল না। তাই নিয়ে বাদ্শাহ খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন।
এরপর বাদ্শাহর মনে চিন্তার উদ্ভব হলো। বাদ্শাহ মনে করলেন বিপদ যখন আসে তখন চারিদিক থেকে আসে। তাই তার দীঘিতে জল আসছে না। একদিন রাতে বাদ্শাহর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তিনি তখন খোদার কাছে প্রার্থনা করে বললেন - “হে অঘটন ঘটন পটীয়সী, এই বিশ্বধামে তোমার অগোচর কিছুই নাই, তুমি অকুলের কুল। তুমি বিপন্নকে উদ্ধার করো। তুমি সর্বত্র বিরাজমান। আজ আমি বিপদে পড়িয়া তোমাকে আকুল আবেদন করিতেছি। আমার মতো হতভাগার ডাক কি তোমার কর্র্ণে স্থান পায় না। যুগে যুগে পান্থগণ যদি এই জলাশয়ের পানি পান করিতে না পারে তবে আমার তথা তোমার সার্থকতা রইলো না। তোমার আদেশেই আমি উক্ত দীঘি খননের কাজে হাত দিয়েছি। আজ কেন আমার আশা অপূর্ণ থাকিবে। এক বিন্দু জল দানে আমার মনোবাসনা তুমি পূর্ণ করো। ”
বাদ্শাহর আবেদন আল্লাহ কবুল করলেন। বাদ্শাহর চোখে ঘুম এসে পড়লো। তারপর তিনি দেখলেন যেন এক বিরাটকার পুরুষ তাহার শিয়রের সামনে দাড়িয়ে বাদ্শাহকে বললেন, বৎস, চিন্তা করো না। তোমার মনোবাসনা পূর্ণ হবে। তুমি আগামীকাল দুপুরে তোমার দীঘির দক্ষিণ-পূর্ব কোণায় একটা পাঁঠা বলিদান দাও। আর কিছু আমোদ ফূর্তির ব্যবস্থা করো।
তারপর ঐ লোকটি চলে গেলো। বাদ্শাহর ঘুম সাথে সাথে ভেঙ্গে গেলো।
সকাল হওয়ার পর বাদ্শাহ তার লোকজনকে বললেন, তোমরা একটা পাঁঠা জোগাড় করো। আর গান বাজনার ব্যবস্থা করো। আজ আমার দীঘিতে আমোদ করতে হবে।
বাদ্শাহর আদেশমত সব কিছুই হলো। পাঁঠা বলিদানের পর শুরু হলো নাচ আর গান। সেইদিন গায়ক, বাদক আর নর্তকীদের নৃত্যের ছন্দে হাজিগঞ্জের আকাশ বাতাস পাগল হয়ে উঠছিল।
শিল্পীবৃন্দ মদ্যাসক্তের মত পাগল প্রায় হয়ে গান বাজনার নিমগ্ন। এমন সময় হঠাৎ দীঘিতে একটা কম্পনের সৃষ্টি হলো। শিল্পীবৃন্দ গান বাজনায় এত ব্যস্ত ছিল যে তারা ব্যাপার উপলব্ধি করতে পারে নাই। দীঘির কম্পনের শেষ হওয়ার পরেই জলাশয়টির ঠিক মাঝখানের অংশ থেকে একটা ভিষণ শব্দ হলো। সাথে সাথেই আচমকা পানিতে দীঘিটা সম্পূর্ণ রুপে ভরে গেল। গায়ক, বাদক আর নর্তকীবৃন্দ পাড়ে উঠার সময় পেলো না। দীঘির পাড়ে ডুবে উক্ত “নাডের দল” মারা গেল।
এই জন্য একে নাডের দীঘি বলা হয়। হাজিগঞ্জের বুকে আজও দীঘিটি আপন সত্তা নিয়ে বিরাজমান।


বি:দ্র: তথ্যগুলো বাংলা একাডেমীর “লোক সাহিত্য সংকলন” থেকে সংগ্রহিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০০৮ রাত ১২:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গান গাইলাম (সাময়িক)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৪:০৮

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমি আদর করে 'আই' ডাকি। আইকে দিয়ে অনেক কাজই করাতে হয়। এবারে, আমাদের ৫ ভাইদের নিয়ে একটি গান বুনেছি। আমরা ৫ ভাই অনেক দিন একসাথে হই না। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্যারাভান-ই-গজল - তালাত আজিজ

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৬:৩১


ভারতীয় অন্যতম গজল শিল্পীদের তালিকায় তালাত আজিজের নাম অবশ্যই থাকবে বলে আমার ধারনা। তার বেশ কিছু গান আমার শোনা হয়েছে অনেক আগেই। জগজিৎ সিং, পঙ্কজ উদাস ও গুলাম আলী সাহেবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×