somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময় হয়েছে আরেকটি বিপ্লবের

১৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১০:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্বাধীনতার ৩৭টি বছর আমরা পার করে ফেলেছি। বাংলাদেশের ৩০ লক্ষ মানুষ ৭১-এর যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন। তাও মাত্র নয় মাসে! এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। আবার ভাষার জন্য শহীদ হতে পিছপা হয় নি এ জাতি। এই ঘটনাও পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। আর তাই, ২১-শে ফেব্রুয়ারীকে সম্মান জানিয়ে তাঁকে ঘোষনা করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। এই সমস্ত ঘটনা আমাকে গর্বিত করে। আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ, আমি একজন বাঙালী। বাংলাদেশ আমার অহংকার। এই সব বাক্য আমাকে ইমোশনাল করে তোলে। কিন্তু, এই বিরল ইতিহাসের দেশটিতে যখন বিরল কিছু নোংরা ঘটনা ঘটে তখন লজ্জায় আমার মাথা হেট হয়ে যায়। আফসোস হয়। যখন দেখি, রাজাকাররা মন্ত্রী হয়ে যায়। যেই পতাকাকে তারা কখনও চায়নি সেই পতাকা তাদের গাড়ীতে ওড়ে। তখন কষ্ট হয়। বড্ড কষ্ট হয়। আমি জানি না, মুক্তিযোদ্ধারা কিভাবে এই ব্যাপরগুলোকে হজম করেন। অন্তত হজমতো আমার হচ্ছে না। ধর্মের দোহাই দেয়া মানুষগুলো যেনো আজ সারা দেশের রাজত্ব ভার নিয়ে ফেলেছে। আর তাই তারা আজ আঘাত করতে শুরু করেছে আমাদের মুক্তচিন্তার উপর।
২.
গত বুধবার রাজধানীর বিমান বন্দরের গোলচত্বরে কাওমি মাদ্রাসার কয়েক শ ছাত্রের হুমকির মুখে নির্মাণাধীন "খাঁচার ভিতর অচিন পাখি" নামের ভাস্কর্যটি গুড়িয়ে দিয়েছে কর্র্তৃপক্ষ। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, তাদের নাকি ভাস্কর্যের নকশা পছন্দ হয়নি। কিন্তু আসল ঘটনাটি হচ্ছে, লালন সম্রাটের মূর্তিটি গুড়িয়ে দেয়া।
এই বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন ধরে ব্লগে অনেক পোষ্ট এসেছে। কিন্তু আমি খুব উদাসিন ভাবেই ব্যাপারটিকে এড়িয়ে গিয়েছিলাম। কারন হচ্ছে, লালনের প্রতি সম্মান জানানো আমার এতটুকু ক্ষুন্ন হবে না তার মূর্তি সরানোর কারণে।
কিন্তু আজ পত্রিকা পড়ে আর এড়িয়ে যেতে পারলাম না। যখন দেখলাম, খোলাখুলিভাবে বলে ফেলা হচ্ছে, সব ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হবে। এমনকি শিখা চিরন্তন ও শিখা অনির্বান নিভিয়ে ফেলার হুমকিও দিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব আমাকে উত্তেজিত করে তুলেছে। আমি, অন্তত আমি মেনে নিতে পারছি না ধর্ম ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এই সংঘর্ষ। ধর্মে নাকি মূর্তির উপর নিষেধ আছে। কিন্তু আমি জানি, দেশীয় ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য ভাস্কর্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশীয় ইতিহাস কিংবা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে উদ্দেশ্য করে ভাস্কর্যকে সম্মান জানানো আর পূজা করা এই দুটি বিষয় যে সম্পুর্ন আলাদা তা এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা ভুলে গেছে। তারা ধর্ম রক্ষা কিংবা ইসলাম রক্ষার নামে দেশের চেতানা, দেশের অস্তিত্ব, দেশের মানুষের মুক্তচিন্তার উপর আঘাত করা শুরু করেছে।
এখানে শুধু মূর্তিগুলোকে ভেঙে ফেলা মূখ্য নয়। মূখ্য হচ্ছে, দেশীয় সংস্কৃতিকে ও ইতিহাসকে অপমান করা। যে দেশের অস্তিত্ব তার ইতিহাস, তার সংস্কৃতি। এমন অহংকার করার মতো ঐতিহ্যকে তারা নিশ্চিহ্ন করার পায়তারা শুরু হয়ে গেছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে যে রাজনীতি, সে রাজনীতি এখন মুক্ত চিন্তার বিপক্ষের রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে।
ইসলাম রক্ষার নামে হয়তো সব ভাস্কর্যগুলোকে হত্যা করা হবে। কিন্তু ইসলাম কি এতই দূর্বল যে মূর্তিকে দেখে ইসলাম ভয় পেয়ে যাবে? আমাদের ইসলাম কি এতই দূর্বল যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের, আমাদের ঐতিহ্যের স্বারককে সম্মান জানাতেও ভয় পায়? হজ্ব যাত্রীরা শক্ত মন নিয়ে ধর্মের প্রতি প্রবল বিশ্বাস নিয়ে, সম্মান নিয়ে হজ্বে রওনা দেন। সেই যাত্রীদের ধর্ম কি এতই দূর্বল হবে যে, মূর্তি দেখলে তার ঈমান নষ্ট হবে।
এইসব মন্তব্য হয়তো মূর্তিগুলোকেও হাসায়। ধর্ম কি তাহলে এতই দূর্বল? ধর্ম কি এতই অসহায়?
সবার উপরে আমাদের ধর্ম। যার স্থান আমাদের অন্তরের বিশ্বাসে। আর সেই ধর্মের ভিত কি এতই নড়বড়ে যে মানুষের তৈরী মূর্তি দেখে তা ধ্বসে পড়বে?
৩.
সমস্ত ভাস্তর্য ভেঙে ফেলা হবে। এমন হুমকি শোনার পরও সরকার নিশ্চুপ। যেনো গায়ে পড়ে তারা সব দোষ নিজের কাঁধে নিতেও প্রস্তুত। আমি বুঝি না, যখন সারা দেশের মানুষ উগ্রপন্থি ধর্মভিত্তিক দলগুলোর বিপক্ষে তখন সরকারের এতো কিসের ভয়! এই সরকার কেনো জামাতকে এতো তোষামদ করে চলছে। এটাও সবার মনে এক প্রশ্ন। দেশের স্বাধীনতার চিহ্ন, ঐতিহ্যকে যখন নিশ্চিহ্ন করার পায়তারা চলছে তখনও সরকার যেনো ভাবলেশহীন। যেনো, এগুলো কোনো ব্যাপার না।
কিন্তু আমাদের তো সহ্য শক্তি অতিক্রম করেছে। আর কতোদিন এভাবে? চোখের সামনে যে নোংরামী শুরু হয়েছে তা আর কতোদিন আমরা সহ্য করবো? সরকার যদি নিশ্চুপ থাকে তবে কি আমরাও নিশ্চুপ থেকে কাটিয়ে দেবো? দেশের প্রতি আমাদের কি কোনো দায়িত্ব নেই? যেই ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিল ৭১-এ। তাদের প্রাণ কি তবে বৃথা যাবে? এখন রাজাকাররা সরাসরি হুমকি দিচ্ছে ইতিহাসকে ধ্বংস করে দেয়ার। আমাদের কি কিছুই করার নেই? আমরা কি শুরু করতে পারি না আরেকটি যুদ্ধ?
এই ধর্মের দোহাই দিয়ে থাকা মানুষগুলোর বিরুদ্ধে সময় হয়েছে বিপ্লব করার। দরকার হয়েছে আরেকটি বিপ্লবের। যে বিপ্লব রুখে দাড়াবে রাজাকারদের এবং ধর্মব্যবসায়ীদের। এমন একটি বিপ্লব যা হবে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার, আমাদের ইতিহাস, আমাদের চেতানা রক্ষার জন্য। প্রয়োজন, বড্ড প্রয়োজন আরেকটি বিপ্লবের। তাই চিৎকার করে বলতে চাই, সময় হয়েছে আরেকটি বিপ্লবের।

১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×