বাংলাদেশের রাজনীতি বনাম বৃক্ষ প্রেম
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আমি রাজনীতি করিনা কিন্তু রাজনীতি বুঝি, শতভাগ না হলেও দেশ বিদেশের খবরাখবর, ইতিহাস লব্ধ জ্ঞান থেকে মনে হয় অনেকের চেয়ে ভাল বুঝি। আর তার থেকেও ভাল বুঝি কিভাবে রাজনীতি কে ঘৃণা করতে হয়, এটা বুঝতে খুব বেশী কিছু লাগে না। আমাদের প্রিয় (!!!!!) রাজনীতি বিদেরা বাংলাদেশের রাজনীতিকে ঘৃণা করার যত উপকরন আছে সবই আমজনতা, ঊঠতি তরুন সমাজের সামনে পরিবেশন করেছে। ৭১ এর পর থেকে রাজনীতি আর শুধু মাত্র রাজনীতিক দের হাতে নেই। এটা চলে গেছে সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ী, অশিক্ষিত বর্বর দের হাতে, আর তখন থেকেই রাজনীতিতে ঘুন লেগে গেছে। দুই প্রধান দল ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয় এই সকল ব্যবসায়ীদের সংসদে জায়গা করে দিয়েছে। আর বেশীরভাব দুর্নীতিপরায়ন রাজনোইতিকের মাঝে থেকে কিছু সৎ রাজনীতি নিরবে দিন গুনে গেছে আর কিছু স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। যার ফল আমরা দেখতে পাই, কেউ খাম্বা বিক্রি করে আর কেউ যুদ্ধের চেতনা বিক্রি করে। আর এরই ফাঁক দিয়ে এক দল গুটী গুটি পায়ে শক্তি সংগ্রহ করে হয় ওঠে মহীরুহ যার দানবীয় রুপ আমরা দেখতে পাচ্ছি গত কয়েক মাস ধরে। সো একটি দেশের যত ভাবে বারোটা বাজানো সম্ভব তা আমাদের সন্মানিত (!!!!) রাজনীতিবিদেরা দেখিয়ে দিয়েছেন। আর তাদের সকলের নাটক তামাশার সর্বতকৃষ্ট উদাহরন বাংলাদেশের দশম নির্বাচন। রাজনীতিবিদের আমাদের সাধারন জনতাকে এত আবাল মনে করে ভাবতেই অবাক লাগে !!!! যাক যা বলতে এসেছিলাম-
ঢাকায় থাকতে মাস দেড়েক আগে একটি দৈনিকের ভিতরের দিকের খবর ছিলো- "আন্দোলনের নামে ১৫ হাজার বৃক্ষ নিধন, ক্ষতি পোষাতে ২০ থেকে ৩০ বছর সময় লাগবে। সবচেয়ে বেশি গাছ কেটেছে নোয়াখালী জেলায়। তার পরই রয়েছে সাতক্ষীরা, যশোর, বাগেরহাট এলাকা। আর সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হয়েছে রাস্তার পাশের। এ গাছগুলোর মালিক বাংলাদেশ বন অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ , এলজিইডি ও এনজিও। এর মধ্যে সামাজিক বনায়নেরও প্রচুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে শুধু বন বিভাগেরই রয়েছে ১৪ হাজারেরও বেশি গাছ। বিভিন্ন সাইজের এই গাছ কাটার ফলে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করতে ২০-৩০ বছর সময় লাগবে।"
এখন বৃক্ষ নিধনকারী এইসব অশিক্ষিত রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি আমার প্রশ্ন-
তোরা রাজনীতি করবি কর, আন্দোলন করবি কর। তবে গাছের উপর তোদের কিসের আক্রোশ হারামির বাচ্চারা !!!! একটা গাছ বড় হতে কত বছর লাগে !!!! এই গাছ গুলা কি আওয়ামীলীগ না বিএনপি নাকি কোন দল করে !!!! অকারনে একটা গাছ হত্যাকরা মানে তোর মাকে হত্যা করা, জানিস এইটা !!!!
এই যে ১৫ হাজার গাছ , এগুলো ৩০ হাজার মানুষের সারা বছরের অক্সিজেন প্রস্তুত করতে পারত। সাথে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষন করে বাতাস পরিষ্কার রাখত। কে বা কারা বুঝাবে এদের, কে দিবে শিক্ষা !!!! বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলন সংস্থা আছে, বড় বড় পরিবেশ বিদ, প্রায় সব ইউনিভার্সিটিতে পরিবেশ বিজ্ঞান দিপার্ট্মেন্ট আছে, সেখানে হাজার এর উপর স্টূডেন্ট আছে। কই কাউকে তো দেখলাম না একটা ব্যানার নিয়ে প্রটেস্ট করত, সভা সেমিনার, আন্দোলন করতে বা প্রতিবাদ জানাতে। রাজনৈতিক দল্গুলোর কাছে স্মারক লিপি জমা দিতে। আর স্রকারের ভুমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ এই বিষয়ে। কই রাস্তার পাশের সরকারি গাছ কাটার জন্য কারও নামে মামলা হয়েছে বলে কোন খবর তো পত্রিকায় চোখে পড়ল না। বি আর টি সি বাসের উপর ইট মারলে যেমন দেশের ক্ষতি, তার থেকেও দেশের জন্য বেশী ক্ষতি একটা গাছ কাটলে। একটা চাক্ষুস দেখা যা এর একটা সময়ে অনুভব কারাযায় এইটাই পার্থক্য। এতো এতো বৃক্ষ নিধনের খবর দেখি প্রায়শ পত্রিকায়, দেখে খারাপই লাগে। আপাতত যেগুলো মনে আছে সেগুলো হল-
১। বাপার সুত্রানুযায়ী , পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পের নামে রাজউক ইতিমধ্যেই সেখানকার ১,৬০০ একর এলাকার বন উজাড় করে ফেলেছে। রাজউক তার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বেটেক্সকে দিয়ে একটি প্রতারণামূলক প্রতিবেদন তৈরি করেছে৷ তাতে বলা হয়েছে ঐ এলাকায় মাত্র ৫.৭ শতাংশ এলাকায় বনভূমি৷ কিন্তু বাস্তবে সেখানকার প্রায় ৪৫ শতাংশ এলাকায় বনভূমি রয়েছে৷
২। পটুয়াখালির কলাপাড়ায় নির্দয়ভাবে ছোট বড় বৃক্ষ কর্তন, বিদেশী গাছ শিশু, মেহগুনি, ইপিল ইপিল প্রভৃতি গাছে পাখি না বসা এবং বন-জঙ্গল দিনে দিনে হ্রাস পাওয়ার সংকুচিত হচ্ছে পাখিদের আবাসস্থল। এসব অঞ্চলে থেকে ঘুঘু, কাঠঠোকরা, ফিঙ্গে, শালিক, ধানবাবুই, ডাহুকসহ অনেক প্রজাতির পাখি হারিয়ে গেছে। নিশুতি রাতে ডাহুকের মিষ্টি ডাক আর শুনা যায় না। অনেক প্রাণীর আবাস ধ্বংস হয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে খাদ্যের অভাব। আর এসব নানামুখী সমস্যার কারণে জীববৈচিত্র্যে দেখা দিয়েছে সংকট।
৩। নোয়াখালীর উপকূল, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এবং কক্সবাজারের টেকনাফের উপকূলে বৃক্ষ নিধনের এক মহাযজ্ঞে বিলীন হয়ে গেছে শত সহস্র গাছ। নোয়াখালীর উপকূলে কয়েক লক্ষ একর জুড়ে নতুন জেগে উঠা চরে বন বিভাগ এই সব বন সৃজন করেছিলো। সেখানে শুধু বনই সৃষ্টি করা হয়নি, দৃষ্টি নন্দন সেই বনভূমি পর্যটনের এক অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছিলো। কিন' দুর্ভাগ্য আমাদের। এক শ্রেণীর লোভাতুর হিংস্র মানুষের উন্মত্ততায় নি:শেষ হয়ে গেছে সে বনভূমি। এখন সেখানে খাঁখাঁ করছে বিরান চর। অনেক জমিই দখল হয়ে গেছে অবৈধ চিংড়িঘের মালিকদের সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে। পতেঙ্গায় প্রভাবশালীরা জাহাজ ভাঙ্গার শিল্প গড়ে তুলতে কেটে ফেলেছে শত শত গাছ। টেকনাফে জমির প্লট তৈরী করার জন্য কেটে ফেলেছে বিশ সহস্রাধিক ঝাউ গাছ। এগুলো পত্র পত্রিকায় বড় করে এসেছে। কিন্তু এর আড়ালে প্রতিনিয়ত চলছে বৃক্ষ নিধনের যজ্ঞ।
২০১১ সালের ইঊনেস্কোর রিপোর্ট অনুযায় বাংলাদেশে বনভুমীর পরিমান ১০%। যদিও বাংলাদেশ বনবিভাগ বরাবরের মত তাদের পুরোনো নথি ঘেটে বলে যাচ্ছে ১৭%। আমাদের জানামতে দেশের ভবিষ্যত যেমন অর্থনৈতিক, সামাজিক, নিরাপত্তা, বাজার এর দুষ্প্রাপ্যতা সহ বিভিন্ন দিক থেকে হুমকির মুখে তেমনি পরিবেশগত বিপর্যয় এর দিক থেকেও আমরা চরম হুমকির সম্মুখিন হতে যাচ্ছি অচিরেই। এইসকল বৃক্ষ বিনাশী কর্মকান্ড এবং ব্যাক্তিদের যদি আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলোক শাস্তির ব্যবস্থা না করা হয় তবে এই দেশ বিরান হতে আর এক যুগও মনে হয় লাগবে না। আর অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে যেয়ে আমরা যদি নিজেরাই আমাদেরকে নিশ্চিত বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেই তবে তা হবে স্লো পয়জনিংএ আত্ম হত্যার শামিল।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
টের পেলে
টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ
টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন
কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য
ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার
(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭
ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।
এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন
একাত্তরের এই দিনে
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন