ভাদ্রের পরে আশ্বিন । আশ্বিনের মাঝামাঝি পূজা । এক সপ্তাহের জন্য ভার্সিটি ছুটি । কুবের তাহার প্রেমিকা কপিলাকে এবার কিছু একটা গিফট দিবে বলিয়া টিউশানির টাকাটা অগ্রিম নিয়াছিল । কিন্তু বাড়িতে আসিয়াই তাহার এক বিপত্তি ঘটিল, দেখিল তাহার মা অসুস্থ , ডাক্তার দেখানো হয় নাই । ছোট বোনের পূজার জন্যও কিছু কেনা হয় নি । তখনই কুবির পাশের গ্রামের আমনুদ্দিন ডাক্তারকে ডাকিয়া আনিল । পরদিন দিন সে বোনকে সাথে লইয়া বাজারে গেল , বোনকে সে বুঝইয়া একটু কম দামি জমা-কাপড় আর দোকানদারের সহিত দর কষাকষি করিয়া কিছু টাকা বাচাইয়া ছিল , সেই টাকা দিয়া সে কপিলার জন্য কিছু প্রসাধনী সামগ্রী কিনিল । ফোনটা ওপেন করিয়া মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ পাঠাইল, “ আইজ তোর লগে দেখা করুম, love u baby” । বাড়ি এসে মেসেঞ্জার অন করিয়া দেখিল , মেসেজ সিন হইয়া আছে কিন্তু কোন রিপ্লে দেয় নি । মনে মনে অভিমান করে কুবের , ব্যথায় তাহার বুকটা ছটপট করতে থাকে , রাগে, দুঃখে , ক্ষোভে তাহার চোখে আসিতে চায় জল । আস্তে আস্তে স্থির হয় কুবের , মনকে শান্তনা দেয় কেউ একজন তাহার মেসেজের রিপ্লে নাই দিল এত কষ্টের কি আছে ? কে হয় সে কপিলার ? তারপর বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়া শুইয়া পড়ে । হঠ্যাৎ বিকালে গণেশের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে কুবেরের । কপিলা গণেশের কাছে খবর পাঠাইয়াছে যে, বিকালে সে কুবেরের সাথে দেখা করিবে । কুবের ব্যতিব্যস্ত হইয়া পড়ে, সে তৎক্ষনাৎ গণেশকে সাথে লইয়া কপিলাদের বাড়ির দিকে পা বাড়ায় । কপিলদের বাড়ি উত্তর পাড়ায় , মাঝে যেতে রায় বাড়ির পূজা মন্ডপ । রায় মহাশয়গণ অতিশয় ধনী , ইহাদের পূজাও হয় আড়ম্বরের সাথে । হঠাৎ আচমকা পেছন থেকে সিধু জ্যাঠা তাহাদের ডাকে , “অই কুবির খাড়া , কই যাস ?” গণশা বোকা , সে উত্তর দেয়, “ অই কপিলো বাড়ির সুঙ্কি” । সিধু জেঠ্যা কুবের আর গণেশের দিকে কটমট চোখে তাকায় , দেখিয়া ভয় হয় কুবেরের , এই সিধু লোকটা কুবের আর কপিলার মেলামেশা দুই চোখে দেখিতে পারে না । কুবির ঠিক করিল সে আর কপিলাদের ওখানে যাবে না । সে তাহার উপহার সামগ্রী গণেশকে দিয়া পাঠইয়া নিজে বাড়ির দিকে চলিল । দুই দিন পর আজ অষ্টমী পূজা । তাহার মায়ের জ্বর বাড়িয়াছিল ।আজ ভোর রাত থেকে জ্বর নেই । কপিলার সহিত আর তাহার দেখা হয় নি । ফোনেও যোগাযোগ হয় নি , সিধু তাহাদের বাড়িতে কুবেরের নামে যা ইচ্ছে তাই বলেছে , ফোন নেই কপিলার কাছে । মহা অষ্টমীতে অঞ্জলী দেয়ার জন্য সকালে স্নান করিয়া পরিপাটি হইয়া যায় রায় বাড়ির দূর্গা মন্দিরের উদ্দেশ্যে , মন্দিরের ভিতরে ফুল , লতা-পাতা আর সুগন্ধে আমদিত । কিন্তু তাহার মলিন আখিঁযুগল যেখানে আটকিয়া গেল, সে মা দূর্গার দশভূজা মূর্তি নয়, সে কপিলা । কপিলাও অঞ্জলী দিতে আসিয়াছে । কপিলা আজ শাড়ি পরিয়াছে, ভেজা চুল এখনও সম্পূর্ণ শুকায় নি, অসম্ভব সুন্দর লাগছে আজ কপিলাকে, ঠিক যেন দেবী মূর্তি । চোখে চোখ পড়িবামাত্রই কুবের বুঝিল যে, তাহার অঞ্জলী সম্পূর্ণ হইয়াছে ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১৪