শত বছর আগে কোন বৃক্ষ প্রেমিকের হাত হতে বন্ধু বকুলগাছের গাংনী থানা চত্বরে জন্ম। জন্মের কয়েক বছর পরেই আমার সাথে তার পরিচয়। প্রথম দিকে চলার পথে মাঝে মাঝে বকুলের সাথে আমার দু’ একবার দেখা হত কি হত না। তবে বকুল যৌবনাবতি হবার পর সব সময় আমি তার কাছেই ছিলাম । এমন কি আহার নিদ্রাও হত আমার বকুলের সাথে। বড় শাসন বারনের মধ্যে আমাকে সে রাখতে চাইত। তারপরও কখনও পাশের বাড়ীর পেয়ারা খাওয়ার লোভ ছাড়তে পারিনি। কতনা বকা খেয়েছি বকুলের। আমি আর বকুল দু’জনেই অল্প দিনেই খুব ঘনিষ্ট বন্ধু হয়েছিলাম। তার অনেক অজানা কথা ও স্মৃতি রয়েছে আমার হৃদয়পটে। বার্ধক্য জনিত কারনে আমার বন্ধু বকুল মারা গেলেও আমি এখনও অক্কা পায়নি। বয়োভারে বৃদ্ধ তাই অনেক কিছুই হয়তো মনে নেই। তারপরও বকুলের কষ্টের কথাগুলো আমার মাঝে মাঝে খুব মনে পড়ে। আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কেননা আমি আপনাদের মতো সৃষ্টির সেরা জীব নই । তারপরও আমি বলব পেয়ারা চুরি করে খাওয়া ছাড়া অনেকটায় আমি ভালো । তোমাদের মতো আমি এত অকতৃজ্ঞ নই। রাজনীতির আদর্শহীন নেতাদের মতো আমি মঞ্চে দাঁড়িয়ে মিথ্যা বলিনা। স্বার্থের জন্য নিরীহদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি আমাদের কেউ করেনা।
যাক বিগত দিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে হবে তাই আর বেশী কথা বলতে চাইনা, কেননা আমি বন্ধু বকুলকে কথা দিয়েছি সে মারা যাবার পর তার কিছু কথা আমি আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন বকুলের সাথে আমার কি সম্পর্ক । আরে বাবা সম্পর্ক হবে না? আমি তার উপর বসে আহার করেছি দিন রাত কাটিয়েছি। বকুল যখন যৌবনে পা দিয়েছে হাত,পা গুলো শক্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে তখন পুলিশ বাবুরা আসামী ধরে এনে বকুলের কাঁধে চড়িয়ে অকথ্য নির্যাতন করত, কত দেখেছি শুনেছি বকুলের কষ্টের কথা। গভীর নিস্তব্ধ রাতে আসামীদের উপর পুলিশের লোমহর্ষক নির্যাতন সইতে না পেরে কেঁদেছি আমি আর বকুল। এই দৃশ্য মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেখে গেছে বন্ধু। কিন্তু আফসোস যেসব রাজনীতিক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানীর জন্য আমার বন্ধুর কাঁধে ঝুলিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে তারা জীবদ্দশায় ক্ষমতা হারিয়ে কোথায় আছে কেমন আছে আমার বন্ধু দেখে গেলনা । অনেক নেতায় ক্ষমতার দাপটে এ শহরটিকে দোযখে পরিণত করেছিলো এখনও করতে চাই। তবে বর্তমানে ওরা ভোল পাল্টিয়েছে। ক্ষমতায় থাকা কালীন সময়ে ওরা বাপ দাদার সম্পদ ভেবে দেশটাকে আমড়ার আটি চোষার মতো চুষে চুষে খেতে চাই। ক্ষমতা হারিয়ে সবাই চিৎপটাং। তবে আমার বন্ধু বকুল গাছটি মারা গিয়ে ভালই করেছে। শত ইচ্ছে থাকলেও নানা অপরাধে অপরাধিদের সাজা দেখতে পেতেন না। কেননা অনেকেই দল পাল্টিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা হয়েছে। আর ফ্যাল ফ্যাল করে দেখতে হয় নির্যাতিতদের।
বর্ণচোরাদের সম্পর্কে বকুল অনেক কথা বলত । বেঁচে থাকতে অনেক দিন আগে একবার সে আমার বলেছিল বন্ধু অনেকে টাকার দরে সম্মান কিনতে চাইবে । নিজেকে সাচ্চা প্রমানের চেষ্টা করবে। আবার কারো কারো সাদা গায়ে কলঙ্কের দাগ লেপে দিয়ে নিজেকে নেতা বনে যাবার চেষ্টা করবে। যারা অসৎ উপায়ে অন্যের নাম ভাঙ্গিয়ে অর্থ উপার্জন করেছে তারা এক সময় অবৈধ্য অর্থ কামাতে ব্যর্থ হয়ে কিছু নেতা -কর্মীদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি করে দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করবে। রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে। ভোট যুদ্ধে অংশ নেয়ার আগে নেতারা নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও জয়লাভ করার পর আর কেউ মনে রাখবে না। এটা বলতে চাইনি তারপরও বর্তমান সময়ের কথা ভেবে বলতে হলো। আজ আমার বন্ধু বকুল নেই কিন্তু তার কথাগুলো এখনো আমার কানের কাছে খুব উচ্চস্বরে বাজে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৭