জায়েদ!
তুই কি জানিস? তোকে কাল সপ্নে দেখেছিলাম!
আমরা কেমন যেন আবার ছোট হয়ে চড়ুইভাতি খেলছিলাম,
কি মজা তাইনা!!
তুই তো জানিস! আমি কত দুষ্ট ছিলাম।
এখন যদি থাকতিস আমায় দেখে অবাক হতিস, সে দুষ্ট ছেলেটি এখন কত ভদ্র হয়ে গিয়েছে,
সে এখন আর হয়হুল্লোড় টুকুও করেনা।
.
তোর কি মনে আছে আমার টকটকে লাল সাইকেলটার কথা?
হি হি তোকে তো আমি ছুঁতেই দিতাম না,
কিন্তু দুক্ষের বিষয় কি জানিস? সে সাইকেলটা এখন আর চলেনা,
নষ্ট হয়ে পড়ে আছে অবহেলিত এক বদ্ধ কক্ষে।
কারো এখন সেদিকে নজরই পড়েনা!
.
তোর কি মনে আছে! আমরা যখন একসাথে হতাম তখন আমাদের কেউ আলাদা করতে পারত না?
যেটুকু হলফ করতে পারি, আমাদের একে অপরকে ছাড়তে খুব কষ্ট হত,
ইচ্ছে হত তোকে বড়দের সব কথা অমান্য করিয়ে আমার কাছে রেখে দিতে
কিন্তু কখনো সাহস হতনা।
.
জায়েদ!
তুই কি জানিস? আজো তোকে নিয়ে এলোমেলো সপ্ন দেখি!
যেন আমায় ফেলে তুই বহুদূরে চলে যাচ্ছিস,
মনে হয় আরো একবিংশ শতাব্দী রেখে যাচ্ছিস
সূর্য অস্তের মাঝামাঝি রক্তিমা পার হয়ে গেছিস।
.
তোকে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলাম
কারণ প্রায় সময় তুই অশুখে ভুগতিস,
তোর কথা বলতে কষ্ট হত তা বুঝতাম
কিন্তু অতটা কষ্টের ভেতর আছিস তা বুঝতাম না।
.
কখনো কল্পনা করিনি সেদিন আমাদের শেষ দেখা হবে
আর আচও করিনি তোকে এভাবে হারাতে হবে,
কিছু বুঝার বাকি রইলনা ইতি বা সমাপ্তি ঘটার
শেষ করে গেলি আমাদের বন্ধুত্বের অধ্যায়।
.
জায়েদ!
তুই পারলি নিয়তির সাথে মিশে যেতে
যাওয়ার আগে তোর কি আমার কথা একবারও মনে পড়েনি?
জানিস! আমার সাথে তোর বলা শেষ অস্পষ্ট কথা এখনো কানে বাজে,
যার তিন ভাগের দুই ভাগই ছিল হাত ইশারাতে।
.
জানিস! তুই যখন ইন্ডিয়াতে পাড়ী জমিয়েছিলি
তখনো জানতাম তুই বাঁচবি,
তুই আবার আমাদের সাথে খেলবি
আবার আগের মত বাড়ির আঙ্গিনায় পায়চারি করবি।
.
জানিস তো! যখন তোর দেহটা বাংলাদেশে নিয়ে আসছিল ওরা
তখনো আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না তুই আমাদের মাঝে নেয়,
আমি সেদিন ফুফার দিকে কয়েকবার তাকিয়ে ছিলাম
তুই যে দেশে ফিরে আসছিস তা কতই না আনন্দ লাগছিল ওনার
আমি ফুফার মুখ না দেখে কখনো তা বুঝতাম না!
কিন্তু ওনি তখনো জানতোনা যে তুই আমাদের মাঝে নেয়।
.
দুক্ষের বিষয় কি জানিস? এর কিছুক্ষণ পর ফুফা সবটায় জানতে পেরেছিল!
আমি ভেবেছিলাম ওনি স্ট্রুক করে বসবে,
কিন্তু খুশির সংবাদ কি জানিস? ফুফা ধর্য্যের সাথে নিজেকে সামলে নিয়েছিল
তখনও শুধু আমার তোকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছিল।
.
তুই থাকলে দেখতে পেতিস, তোকে সবাই কতটা ভালবাসত
আমি তো রীতিমত তোর গানের ফেন ছিলামরে,
সে অল্প কয়েকটা বসন্তে তুই কতটা অপরিপক্বতা অর্জন করেছিলি
সত্যিই তা দৃষ্টি কেড়ে নেওয়ার মত।
.
তখন রাত দু'থেকে তিনটা, অ্যাম্বুলেন্স চলে এসেছে
অপেক্ষাকৃত সবার কানে অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ বেঁজে উঠল,
কিন্তু তোর জন্য অপেক্ষা করতে করতে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
তুই তো জানিস! তখন আমরা কত ছোট ছিলাম
তাই বোধহয় হাপিয়ে গিয়েছিলাম।
.
তুই এসেছিস শুনে আম্মা আমাকে ডাকছিল
তবুও কেন যেন আমি শুনছিলাম না,
তখন জানিস! তোর সাথে সপ্নে কথোপকথনে ব্যস্ত ছিলাম
আর তোর সাথে যখন খেলতাম তখন কেউ ডাকলে,
তখনও কি কারো কথা শুনতাম?
.
একসময় আম্মার ডাকে ঘুম ভাঙ্গল
তখন আম্মা বলল; তুই এসেছিস,
আমি আর আমার পাশের কাউকে দেখতে পেলামনা
ছুটে গেলাম তোর কাছে!
কিন্তু যাওয়ার পর যা দেখলাম
তার জন্য সত্যিই প্রস্তুত ছিলাম না,
তুই তখন ঠান্ডা কফিনে আয়েশ করে ঘুমাচ্ছিলি।
.
তোকে আর প্রশ্নগুলো করা হলো না
জানিস! উত্তর গুলো দিতে পারলে ভাল হত,
তখন সত্যি আমি তোকে মুক্ত করে দিতাম
তবুও আজ তুই সাথে থাকতিস ভাল হত
আমার পথ চলাটা অন্যরকম হত,
পেতাম সাহস প্রেরণার মত আরো কত কিছু
তুই আর আমি এক ছায়াই মিশে দেখতাম না আর পিছু।।
..............
..........
.....
উৎসর্গঃ জায়েদুল গণি।
সংগ্রহঃ সবুজ ডাইরী থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৩২