somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ কি করলেন রবীন্দ্রনাথ! (ভিডিওসহ)

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় ফেসবুকে 'মরি যাইম...মরি যাইম... নজ্জায় মরি যাইম...' লিখিয়া পোস্ট করিলেন। অত:পর গুনগুনাইয়া 'নহ মাতা নহ কণ্যা নহ বধূ সুন্দরী রুপসি' গাহিতে গাহিতে নায়লা নাইমের ফেসবুক পেইজে ঢুকিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে আপলোডিত ছবিসমূহ গভীর মনযোগের সহিত দেখিতে লাগিলেন। মনে মনে ভাবিলেন সানি লিওনের মতন নায়লা নাইমের নাম লিখিতেও দুইবার দন্তন্য ব্যাবহার করিতে হয়। অফসোস, দুইজনের নামের পারস্পরিক মিল থাকিবার পরেও বাঙ্গালি নায়লা নাইম এই আধুনিক যুগেও ফিরিঙ্গি সানি লিওনের উদারতা অর্জন করিতে পারেন নাই, ষোল কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী/রেখেছ বাঙ্গালি করে উদার করনি। তিনি কোন ছবিতে লাইক বা মন্তব্য করিলেন না। কে জানে হয়তো তাহার একটা নির্দোষ লাইক বা মন্তব্যকে ভিত্তি করিয়া অনলাইন নিউজ সাইটগুলি 'নায়লা নাইমের সাথে বৃদ্ধ বয়সে এ কি করলেন রবীন্দ্রনাথ! (ভিডিওসহ)' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করিবে।

কিছু দিন পূর্বে রংধনু প্রসংগে খুব ভাবিয়া চিন্তিয়া 'সহজ কথা যায় না বলা সহজে' লিখিয়া একখানা নিষ্পাপ নি:ষ্কলংক পোস্ট দিয়াছিলেন। পোস্ট প্রদানের আধাঘন্টার মধ্যেই প্রায় সকল অনলাইন নিউজসাইট 'রবীন্দ্রনাথই প্রথম বাঙ্গালি রংধনু (ভিডিওসহ)', 'মধুসূদন দত্তকে যে গোপন কারণে অর্থ সাহায্য দিতেন রবীন্দ্রনাথ (গোপন ভিডিওসহ)', 'রবীন্দ্রনাথের রংধনু প্রস্তাব শুনে আজীবনের জন্য নির্বাক হয়ে গেলেন নজরুল' এবং 'রংধনু প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় উপেনের দুই বিঘা জমি কেড়ে নিলেন রবীন্দ্রনাথ (ভিডিওসহ)' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করিয়াছিল। প্রগতিশীল ভক্তদের অনেকে ফটোশপে তাহার শ্বেত-শুভ্র দাড়িকে রংধনুর সাতরংয়ে রাঙ্গাইয়া নিজেদের প্রোফাইল পিক হিসাবে ব্যাবহার করিয়াছিল। আবার একদল নামের বিকৃতি ঘটাইয়া তাহাকে 'পুটুন্দ্রনাথ' বানাইয়া তাচ্ছিল্য করিয়াছিল, পুটুমনা বলিয়া হাস্যরসের বস্তুতে পরিণত করিতে ছাড়ে নাই।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় নায়লা নইমের পেইজ ঘুরিয়া জ্যাকুলিন মিথিলার ফটো এলব্যামে সামান্য বিশ্রাম লইয়া নিজের পেইজে ফিরিয়া আসিলেন। তিনি অগ্র-পশ্চাত না ভাবিয়াই পোস্টখানা আপলোড করিয়াছিলেন। ফিরিয়া আসিয়া বিষ্ময়ের সহিত দেখিলেন পোস্ট প্রকাশের সাথে সাথেই সৈয়দ হক মহাশয় মন্তব্যে লিখিয়াছেন-'ইহাই বাংলাভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ অতিউত্তরাধুনিক (Post Ultra Modern) কবিতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাত্র একলাইন লিখিয়াই প্রমাণ করিয়াছেন তিনিই অতিউত্তরাধুনিক(Post Ultra Modern) কবিতার প্রধান খেলারাম। বাংলাদেশে আনসারুল্লাহ বি টিমের উত্থানে কবি গভীর কষ্টে কষ্টিত। লজ্জায় কবিগুরু নিজের মৃত্যু কামনা করিতেছেন। তাহার কষ্ট এতই প্রবল যে 'মরে যাব... মরে যাব' না লিখিয়া তিনি 'মরি যাইম...মরি যাইম...' লিখিয়াছেন। 'মরি যাইম' শব্দযুগলে ভাবের যে গভীর ব্যাঞ্জনা তাহা 'মরে যাব' শব্দযুগলে নাই। কবির লজ্জা এতই গাঢ় যে 'লজ্জা' শব্দটি উচ্চারণ করতেও তিনি লজ্জাবোধ করিতেছেন। তাই লজ্জার পরিবর্তে তিনি 'নজ্জা' লিখিয়াছেন। এখন হইতে ইহাই সহস্রাধিক নাগরিক কমিটির অফসিয়াল শ্লোগান।' আবদুল গাফফার চৌধুরী মহাশয় এই মন্তব্যের নিচে লিখিয়াছেন-'হক সাহেব, তুমি কেন ঘষো আমি তাহা জানি। শিল্পী-সাহিত্যিকদের রাষ্ট্রীয় পুরষ্কার, সুযোগ সুবিধা প্রদান আর বিদেশ ভ্রমণের ডিপার্টমেন্ট কিন্ত এখন আমিই দেখি।' ইহার পরেই শফিক রেহমান মহাশয় লিখিয়াছেন - 'রবিবাবুর লজ্জা নজ্জা হইলেও তসলিমা নাসরিনের 'লজ্জা' কিন্তু লজ্জা-ই রহিয়াছে। অবশ্য তসলিমার 'ক' প্রকাশিত হইবার পরে সৈয়দ হকের লজ্জা একেবারে নজ্জা হইয়া গিয়াছিল।কি নজ্জা! কি নজ্জা!' সুকুমার রায় লিখিলেন-'এতই যখন লজ্জা তখন ধূতির উপরে দুইটা জিন্সের প্যান্ট পরিলেই হয়। ধূতির গিঁট ঢিলা থাকিলে লজ্জা তো নজ্জা হইবেই।' তিনি আর পরের মন্তব্যগুলি পড়িবার উতসাহ পাইলেন না।

দু:খে-ক্রোধে-অভিমানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় 'মরি গেছি... মরি গেছি... পুরাপুরি মরি গেছি...' লিখিয়া নতুন পোস্ট দিলেন। এই পোস্ট পড়িয়া ভক্তরা কান্নাকাটি করিয়া ফেসবুকের টাইমলাইন ভিজাইয়া ফেলিল। তাহাদের চোখের পানি ফেসবুকের সীমা অতিক্রম করিয়া ল্যাপটপ ট্যাব মোবাইলের স্ক্রিন দিয়া প্রবল বেগে বাহির হইতে লাগিল। নিখিল বাংলাদেশ লিংক দেন আন্দোলনের সভাপতি মহাশয় পোস্টে মন্তব্য করিলেন- 'মরে গেছেন কিভাবে বুঝিলেন! মরার লিংক দেন।' বাংলাদেশ জামায়াতে মিল্লাতে কাঠমোল্লা ফাউন্ডেশনের আমির মহাশয় লিখিলেন- 'আপনার মৃত্যুর পক্ষে প্রমাণ পেশ করুন।' হাজার হাজার ভক্ত 'ফ্রেন্স, রবিগুরু কবিন্দ্রনাথ এইমাত্র মরে গেসেন, যারা কষ্ট পাইসো তারা লাইক দাও, যারা কান্না করসো তারা কমেন্ট দাও আর যারা কষ্ট পাইসো আবার কান্নাও করসো তারা শেয়ার করো। ফ্রেন্স, দেখিয়ে দাও মরা কবিন্দ্রনাথের জন্য কতগুলা লাইক'- লিখিয়া পোস্ট শেয়ার করিল। কবির মহাশয় এই মৃত্যুর প্রতিবাদে পাকিস্তান দূতাবাস এবং ফরহাদ মজহার মহাশয় ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাওয়ের কর্মসূচী ঘোষণা করিলেন। ইনু আর মেনু মহাশয় ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া 'দুনিয়ার রবীন্দ্রনাথ এক হও লড়াই কর। রবীন্দ্রনাথের রক্ত বৃথা যেতে দিবনা' শ্লোগান লিখিয়াই পোস্ট আপডেট করিলেন। স্যার জাফর ইকবাল মহাশয় লিখিলেন- 'আমি মৃত্যু ঠিক বুঝিনা। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় রবীন্দ্রনাথ মারিয়া যাইবেন তাহা মানিয়া লওয়া যায়না।আমরা কি এমন রবীন্দ্রনাথ চাহিয়াছিলাম!' সিপিগ্যাং গ্রুপের রাসেল রহমান দু:খ ভারাক্রান্ত মনে পোস্টে মন্তব্য লিখিলেন- 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'সোনার তরী'তে ধান তুলিয়াছিলেন এবং 'নৌকাডুবি' লিখিবার পরেও আমরা তাহাকে পোন্দাই নাই। কারণ উনি বুড়ো মানুষ, আমাদের পোন্দানি সহ্য করিতে পারিবেন না। আজ তিনি বিনা পোন্দানীতেই মরিয়া গেলেন। আমরা যথাযথ শ্রদ্ধা ও ভাবগাম্ভীর্যের সহিত তাহার বিদেহী আত্নাকে নিয়মিত পোন্দাইবো।' বাঁশেরকেল্লার পোস্টে রবীন্দ্রনাথের টুপি পরহিত ছবি দিয়া দাবি করা হইল মৃত্যুর পূর্বে তিনি তোওবা করিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহন করিয়াছিলেন। জামাতে ইসলামি তাহার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করিয়া নরেণ মোদিকে সমবেদনা জানাইল। বিএনপির দুদু মহাশয় লিখিলেন- 'এই সরকারের আমলে রবীন্দ্রনাথও নিরাপদ নহেন। তাহার শ্রাদ্ধের পরেই তীব্র আন্দোলন শুরু হইবে।' লীগের হাছন মাহমুদ মহাশয় স্ট্যাটাসে লিখিলেন - 'রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর জন্য খালেদা জিয়া দায়ী। খালেদা জিয়া শিফন শাড়ি পরিধান করিবার কারণে এলার্জীতে আক্রান্ত হইয়া রবীন্দ্রনাথ মরিয়াছেন।' মাহবুবুল হানিফ মন্তব্য করিলেন- 'শ্রাদ্ধের মেনু কি? খাসির কাচ্চি না চিকেন বিরানী? হঠাত মৃত্যুর জন্য রবীন্দ্রনাথকেও আইনের আওতায় আনিয়া বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচার করা হইবে। ডিংকাচিকা... ডিংকাচিকা... ডিংকাচিকা...ট্যাওট্যাও... ট্যাও...ট্যাওওওওও...।' অনলাইন নিউজসাইটগুলি ব্রেকিং নিউজ করিল-'যে ১০টি কারনে মারা গেলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (ভিডিওসহ)'।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় আর সহ্য করিতে পারিলেন না। ভিক্টোরিয়া ওকাম্পের হাত ধরিয়া ব্যাকুল হৃদয়ের সকল মিনতি উজার করিয়া গাহিতে লাগিলেন-
''সোনাবন্ধু তুই আমারে ভোঁতা দাও দিয়া কাইট্টালা
পিরীতের খেতা দিয়া চাইপ্পা ধইরা মাইরালা...'

|গল্প|
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩০
১০টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×