somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুর ৭০ বছর পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শাস্তি

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দীর্ঘ প্রায় ৭১ বছরের কৌতূহলের অবসান হইল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট তারিখে ইহধাম ত্যাগ করিয়া পরকালের দিকে যাত্রা করিলেন। পরকালের খাস কামড়ায় ভগবানের মুখোমুখি হইবার পরেই চিত্রগুপ্ত একখানা হিসাবের খাতা তাহাকে ধরাইয়া দিলেন। রবীন্দ্রনাথ খাতাটা দেখিলেন। ভগবানের হিসাব খুব সূক্ষ্ণ। তিনি হিসাবের বিবরনীতে দেখিলেন যে নিজের অজান্তে এবং অনিচ্ছায় কিছু পাপ করিয়া ফেলিয়াছেন। তিনি ভগবানের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিলেন। ভগবানের খাস কামড়ায় নীরবতা নামিয়া আসিল।

দয়াময় ভগবান প্রথম নীরবতা ভঙ্গ করিলেন। ভগবান রবীন্দ্রনাথকে বলিলেন, "তুমি অনেক বড় কবি। তোমার সৃষ্টির মত তুমিই মহত। কিন্তু পাপ মাত্রই পাপ। আর পাপীকে শাস্তি ভোগ করিতে হইবে। ইহাই নিয়ম। সুতরাং তোমাকেও শাস্তি ভোগ করিতে হইবে। " রবীন্দ্রনাথ অবাক হইয়া ভগবানের কথা শুনিতে লাগিলেন। ভগবান বলিলেন, "আশি বছর বয়স পর্যন্ত তুমি অক্লান্ত পরিশ্রম করিয়াছ। যাও স্বর্গে অবস্থান কর। বিশ্রাম কর। স্বর্গকে উপভোগ কর। " এইবার রবীন্দ্রনাথ অবাক হইয়া প্রশ্ন করিলেন, "প্রভু, আমার শাস্তি কি তবে মওকুফ করা হইয়াছে!" ভগবান বলিলেন, " মওকুফের বিধান এখানে নাই। তোমার ক্লান্তি দূর করিবার জন্যই তোমাকে স্বর্গে প্রেরন করা হইতেছে। স্মরন রাখিও, আজ হইতে ৭০ বছর অতিক্রম হইলে তুমি কৃত পাপের জন্য শাস্তির মুখোমুখি হইবে। "

রবীন্দ্রনাথ স্বর্গবাস করিতে থাকিলেন। স্বর্গের অপ্সরীগন গান গাহিয়া তাহাকে অনন্দ দিতে লাগিল। তিনি স্বর্গের বাগানে বেড়াইতে লাগিলেন। স্বর্গের জোছনা উপভোগ করিতে করিতে ক্লান্ত হইতে লাগিলেন। তথাপি দিন শেষে তাহার মন কৌতূহলে অশান্ত হইত। তিনি ভাবিতেন ৭০ বছর অতিক্রম হইলে ভগবান তাহাকে কি শাস্তি দিবেন। এক একটা করিয়া বৎসর অতিক্রান্ত হইতে লাগিল। রবীন্দ্রনাথের কৌতূহলও গাঢ়তর হইয়া উঠিতে লাগিল।

৮ই মে ২০১১ তারিখে রবীন্দ্রনাথ আবার ভগবানের সাক্ষাৎ পাইলেন। ভগবান "কবি, এইবার শাস্তির জন্য প্রস্তত হও" বলিয়া রবীন্দ্রনাথকে দুইখানা অতি চিকন চৌকোনা বাকসো প্রদান করিলেন। ৭০বছরের কৌতূহল মিটাইতে গিয়া রবীন্দ্রনাথ দ্রুত হস্তে বাকসো দুইটি খুলিয়া দেখিলেন তাহার ভিতরে একখানা করিয়া গোলাকার ধাতব পাত। রবীন্দ্রনাথ ভাবিতে লাগিলেন ইহা কোন প্রকারের শাস্তি!! রবীন্দ্রনাথের ভাবনা অনুধাবন করিয়া ভগবান হাসিয়া বলিলেন, " সকল কিছু পূর্বের মতনই থাকিবে। তবে এখন হইতে স্বর্গের কোন অপ্সরী আর তোমাকে গান গাহিয়া শুনাইবেনা। এই গোল চাক্তিতে তেমার সৃস্টি করা যে গানসমূহ আছে তাহাই প্রতিদিন তিনবেলা করিয়া শুনিতে হইবে। " ভগবান তাহাকে ধাতব চাক্তিটি বাজাইবার জন্য একখানা যন্ত্রও প্রদান করিলেন। রবীন্দ্রনাথ ভাবিয়া পাইলেননা যে, নিজের গান শ্রবন করা কোন ধরনের শাস্তি!!

তিনি স্বর্গে তাহার নির্ধারিত গৃহে ফিরিয়া আসিলেন। বাকসো দুইটি আবার দেখিলেন। একখানা বাকসোর উপরে লেখা রহিয়াছে "মনে রবে কি না রবে আমারে" আর অন্যটিতে লেখা রহিয়াছে "মনে কী দ্বিধা....।" দুইটিতে একজন স্বাস্থ্যবতী রমনীর মুখের প্রতিকৃতি। রবীন্দ্রনাথ শাস্তি ভোগের নিমিত্তে চাক্তিটি যন্ত্রে প্রবেশ করাইলেন। যন্ত্রটি স্বর্গের আকাশ পাতাল কম্পিত করিয়া তাহার সৃজিত সংগীত উদগীরন করিতে শুরু করিল। তিনি নিজের সংগীত শুনিয়া মূর্ছা যাইতে চাহিলেন। কিন্ত মূর্ছা যাইতে পারিলেন না। তিনি যন্ত্রটি বন্ধ করিতে চাহিলেন। কিন্তু যন্ত্রটি বন্ধ করা সম্ভব হইলনা। তিনি নিজের সংগীত শ্রবণ করিতে করিতে বারবার আত্নদংশনে দংশিত হইলেন। সংগীত সৃষ্টির জন্য নিজের প্রতি প্রবল ক্রোধ বোধ করিলেন। গান শ্রবন করা যে এতটা ভয়ংকর শাস্তি হইতে পারে তাহা রবীন্দ্রনাথ বিন্দুমাত্র অনুধাবন করিতে পারেন নাই। সংগীত চলিতে থাকিল আর রবীন্দ্রনাথ প্রবল যন্ত্রনায় কাতরাইতে লাগিলেন। তিনি যন্ত্রনাকাতর অবস্থায় চৌকনা বাকসো দুইটি আবার হাতে লইলেন। দেখিলেন কাগজে মুদ্রিত স্বাস্থ্যবতী রমনীর প্রতিকৃতির প্বার্শে রঙিন হরফে লেখা রহিয়াছে 'ইভা রহমান'। রবীন্দ্রনাথ যন্ত্রণা ভোগ করিতে করিতে ভাবিতে লাগিলেন ভগবান এতটাই ক্ষমতাবান ও সৃজনশীল যে গানকেও শাস্তির কঠিন অস্ত্র বানাইতে পারেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শাস্তিভোগের এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখিয়া ভগবানের হৃদয় কাদিয়া উঠিলেও আড়াল হইতে চিত্রগুপ্ত হাসিতে লাগিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪১
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×