somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ছায়ীদ আল আরিফ
আমি ছাইদুর রহমান।অ্যাকোইন্টেন্সরা আরিফ নামে জানে।ব্লগে লিখি “ছায়ীদ ‍আল আরিফ” নামে।কতো ভেরিয়েশন তাইনা? আমিও ঠিক এমনই, ভেরাইটিজ।কোন বিষয়ে স্পেশালিটি নাই বাট নানান বিষয় জানতে ভালো লাগে...nস্বপ্ন দেখি সুন্দর কিছুর...

সপ্তাহান্ত ভালোবাসা এবং শরতের দিয়াবাড়ি

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উত্তরা হাউজবিল্ডিং, বলা চলে আমার ঘরের বারান্দা। বরাবরই তার বক্ষ মাড়াতে হয় আমার। তবে শুক্রবার শেষবেলায় আজই প্রথম।আসছিলাম উত্তরখান থেকে, গন্তব্য; সেক্টর -১১, রোড-১৫,বাড়ি-৮০।মূল সড়ক থেকে সোনারগাঁ জনপথ ধরে পা বাড়াচ্ছি রিকশা চেয়ে চেয়ে। গজ বিশেক এগুতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেল।যেখানে রিকশা -লেগুনা থাকার কথা সেখানে শুধু উপচে পড়া জনস্রোত। বৃহদাংশ তাদের উঠতি বয়সের তরুণ -তরুণী; জুটিতে জুটিতে সাজানো।দেখেই বোঝা গেল এরা সবাই ঘুরতে বেরিয়েছে।এখন রিকশাবিলাসের অপেক্ষায় আছে।রিকশা পেলেই ছুট....তার মানে এরাই রিকশার সঙ্কট সৃষ্টি করেছে, বুঝতে কষ্ট হলো না আমার।আমি প্রায় বিলি কেটে কেটে রাস্তার পাশ ধরে আরেকটু সামনে এগোলাম।একই রকম অবস্থা। রিকশা দু একটা যা আসে তারাই লুফে নেয়।"এই খালি দিয়াবাড়ি যাবে?" এই বাক্যটা কানে আসতেই আমার পূর্বের ধারণায় নিশ্চিত হলাম। অর্থাৎ এরা সবাই ঘুরতে বেরিয়েছে।প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে। উদ্দেশ্য, আশপাশের পার্ক-উদ্যানে বিশেষ করে উত্তরার বিখ্যাত দিয়াবাড়িতে।সপ্তাহ শেষে এক বিকেল প্রিয়জন ও প্রকৃতির উষ্ণ আলিঙ্গনে তৃপ্তি হতে এবং তাদের যৌথ সান্নিধ্যের পরশ পেতে।যা সারা সপ্তাহের কর্মব্যস্ততার ক্লান্তি অবসাদ দূর করে দিতে পারে এক বিকেলের প্রাণচাঞ্চল্যতায়।শরতের শেষবেলার কাশফুলরা যেন মাথা নেড়ে নেড়ে তাদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।
.
এখানে দু'বয়সের জুটিদের লক্ষ করা গেল।মাঝ বয়সী এবং উঠতি বয়সী। তবে আধিপত্য দ্বিতীয় শ্রেণিদের।উল্লেখ্য, উত্তরার উন্নত এলাকা এবং উচ্চবিত্ত অধুনা সমাজ হওয়ায় এদের সাজ সজ্জা, বিলাসিতা, স্বাস্থ্যসচেতনতা বলতে গেলে সর্বদা চুঁইয়ে পড়ে।কাজেই চোখের দেখায় তারুণ্য আর প্রৌঢ়ত্বের মাঝে তেমন কোন ফারাক নেই।নিখুঁত পারলারিং পৌঢ়াকে করে তোলে তরুণী আর তরুণীকে বানিয়ে ফেলে অপ্সরী। এ দেখে অতি বৃদ্ধের নীরস মনও ক্ষণিকের জন্য সরস হয়ে উঠবে।
.
স্বচ্ছ সুনীল আকাশ।আকস্মাৎ আলো আঁধারির মেলা; রোদ বৃষ্টির খেলা।শুভ্র মেঘের আল্পনা; যেন নিরুদ্দেশে ছুটে চলা ভেলা।দুধেল শাদা কাশফুলের মন মাতানো ঢেউ। শিউলি ফুলের মন উদাস করা গন্ধ।মাঠে মাঠে পক্বপ্রায় ধানক্ষেত।দূর নীলিমার বুকে হারিয়ে যাওয়া দৃষ্টিপথ।সব মিলিয়ে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা। একেই বলে দুরন্ত উচ্ছল শরৎবেলা।তাইতো রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'শরৎ' কবিতায় এর বন্দনা গেয়েছেন- "আজি কি তোমার মধুর মুরতি/হেরিনু শারদ প্রভাতে!/হে মাতা বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ/ঝলিসে অমল শোভাতে।/পারে না বহিতে নদী জলধার,/মাঠে মাঠে ধার ধারে না'কো আর-/ডাকিছে দোয়েল গাহিছে কোয়েল /তোমার কাননসভাতে!/মাঝখানে তুমি দাঁড়ায়ে জননী, /শরৎকালের প্রভাতে।"
শহুরে প্রাণদের এসব কেবল কল্পনা।এই কল্পনাকে কিছুটা হলেও বাস্তবে রূপ দিতে পারে ঢাকাস্থ গড়ে ওঠা 'দিয়াবাড়ি'।উল্লেখিত প্রায় সব উপভোগ্য বস্তুরই সমাগম ঘটেছে সেখানে। পাশপাশি কৃত্রিম কিছু উপভোগ সামগ্রীরও সুব্যবস্থা রয়েছে এ সুবিশাল উদ্যানটিতে।লেকপাড়, বটতলা (বটচত্বর),নৌকা ভ্রমণব্যবস্থা,খানিক দূরে দূরে ছোট ছোট ছনের ঘর।কোলাহলমুক্ত শুনশান নীরব পরিবেশ। খানিকক্ষণ পরপর নীরবতার প্রাচীর ভেঙ্গে গর্জন করে উড়ে যাচ্ছে উড়োজাহাজ।খুব কাছ থেকে উড়েচলা বিমান দেখার একটি অদ্বিতীয় স্থান।আরো রয়েছে উদ্যানের মধ্যদিয়ে বয়েচলা ছোট্ট নদী, নদীর উপর স্টীলের ব্রীজ; যা অতিমাত্রায় স্থানটির সৌন্দর্যবর্ধন করেছে।আজকাল উদ্যানের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে বটচত্বর।কারণ, চলচিত্র তারকাদের পদভারে প্রায়শই জায়গাটি থাকে মুখরিত।ইতোমধ্যে বেশ নাটক-নাটিকার ফ্রেমে বদ্ধ হয়ে রূপালী পর্দায় বটবৃক্ষসহ ভেসে উঠেছে এ স্থানটি।এসবকে কেন্দ্র করে বটচত্বরে এসে তুমুল আনন্দে ফটাফট ছবি তুলছে দর্শনার্থীরা।অনেকের ভাগ্যে আবার চলচিত্রের 'পাখপাখালি' দেখার বিরল সুযোগও জুটে যাচ্ছে এখানে এসে।এ সবকিছু মিলিয়ে বড় চমৎকার, অসাধারণ, রোমাঞ্চকর এবং মনোরম একটি পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে দিয়াবাড়িতে।
চাইলে আপনিও পারেন হারিয়ে যেতে প্রকৃতির এ অপার্থিব আবহে।যা আপনার সারা সপ্তাহের ক্লান্তি-ক্লেষ, অবসাদ-অবসন্নতা দূর করে বয়ে আনতে পারে অনাবিল শান্তি।আর প্রিয়জন সঙ্গী হলেতো আপনার এ 'শান্তি' হয়ে উঠবে স্বর্গীয় সুখ।
.
ঘুরোঘুরি শেষে ক্ষুধার হামলার শিকার হওয়া অস্বাভাবিক নয়।তবে প্রতিরোধের জন্য রয়েছে নানা খাদ্যের বিপুল সম্ভার- সমাহার। ফুচকা-চটপটি থেকে শুরু করে একদম শাহী পোলাও -বিরিয়ানী পর্যন্ত।সো, টেনশন ফ্রী।
.
সহজতম যাতায়াতঃ উত্তরা, হাউজবিল্ডিং। সেখান থেকে সোজা পশ্চিমে পনের কিঃমিঃ দূরত্বে অবস্থিত দিয়াবাড়ি। সোনারগাঁ জনপথ ধরে লেগুনা বা রিকশা যোগে অনায়াসেই পৌঁছা যাবে এ স্বপ্নভূমিতে।ভাড়া,২০ টাকা লেগুনা যোগে। রিকশাবিলাসে ৮০-১০০ টাকা।
.
ছায়ীদ আল আরিফ
উত্তরা, ঢাকা
১৩/১০/১৫

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৩০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×