somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকান ইহুদী লেখক-শিল্পীদের গাজায় যুদ্ধ-বিরতির আহ্বান

২৭ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুর্ভাগ্যজনক যে, গতকাল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ হয়ে গেছে।জায়নবাদের কঠোর সমালোচক মার্কিন ইহুদী দার্শনিক ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক জুডিথ বাটলার আজ প্রখ্যাত সাংবাদিক এমি গুডম্যান সাথে এক সংক্ষিপ্ত আলাপে ফিলিস্তিনে চলমান ইসরাইলী নিধনযজ্ঞকে পরিষ্কার গণহত্যা বলে অভিহিত করেন। গত ১৯ অক্টোবর, ২০২৩ বাটলারসহ ডজনের অধিক আমেরিকান ইহুদী লেখক ও শিল্পী গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে এক খোলা চিঠিতে অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধ-বিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন।আজ সকালে "ডেমোক্রেসি নাউ" এর সাথে তাঁর সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমাদের সকলেরই এই গণহত্যার প্রতিবাদে দাঁড়ানো এবং এর অবসানের আহ্বান জানানো উচিৎ।বিশ্বকে যা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে যে, গাজার যে লক্ষ্যবস্তুতে ইসরাইল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, সেটা স্পষ্টতই কোন সামরিক চরিত্রের নয়, হামলায় লক্ষ্যবস্তু গাজার বেসামরিক জনগণ। উপর্যুপরি বোমাবর্ষণ করে, বল প্রয়োগ করে বাস্তুচ্যুত করে, গোটা গাজাই জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়ে যা হচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞায় গণহত্যা ছাড়া আর কিছুই না।সেন্টার ফর কন্সটিটিউশনাল রাইটস তাদের ৪০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে একে গণহত্যা বলে সংজ্ঞায়িত করে।নাৎসি জার্মানির মত হুবহু না হলেও, ফিলিস্তিনীদের জীবন-জীবিকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ভাল থাকার সকল ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।

গাজা উপত্যকায় অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চলমান ইসরাইলী হামলা প্রসঙ্গে বাটলার বলেন, ফিলিস্তিন জীবন এবং ইসরাইলী জীবনের মূল্যকে স্পষ্টতই ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদার বিবেচনা করা হয়েছে। মার্কিন মূলধারার গণমাধ্যম এবং সরকার এই গণহত্যাযজ্ঞে সহায়ক শক্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফিলিস্তিনে সংঘটিত চলমান গণহত্যার অপরাধের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার নীতি অবলম্বন করছে।এটা ভীষণ বিপদজনক সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে কেবল মতাদর্শিক সমর্থনই দিচ্ছে না, কেবল তাদের গণহত্যায় অপরাধকে যুক্তিযুক্তই বলছে না, বরং সত্যি সত্যি এই নিধনযজ্ঞে নিজেই অস্ত্রশস্ত্র, অর্থ-সম্পদের যোগানও দিয়ে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছে।

বাটলার বলছেন, গাজার বেসামরিক জনসাধারনকে এমন এক মানব সম্প্রদায় হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যাদের জন্যে যেন দুঃখ করা সমীচীন নয়(ungrievable), যারা জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষার, দুনিয়াতে জীবন উপভোগের যোগ্য নয়।যেন গাজাবাসী মাত্রই হামাস, যে হামাস কেবলই সন্ত্রাসবাদী, কোনভাবেই সশস্ত্র প্রতিরোধ যোদ্ধা নয়। গাজায় গত দুই সপ্তাহে ৬ হাজারের অধিক নারী-পুরুষ-শিশুর প্রাণহানিকে আদৌ নরহত্যাযজ্ঞ বলে সংজ্ঞায়িতই করা হচ্ছে না।মার্কিন ও মূলধারার পশ্চিমা রাজনীতি ইসরাইলের প্রবর্তিত জায়নবাদী রাজনীতির সাথে একাত্ম হয়ে গেছে যেখানে, ফিলিস্তিনি মানুষ যেন "মানব" এর চাইতে নীচু মর্যাদার দলই নয়, বরং ফিলিস্তিনি জনসাধারণ যেন "মানব" এর ধারনার প্রতি হুমকি স্বরূপ।গাজাবাসী সকল ফিলিস্তিনি হামাসের সমর্থক বিবেচনায় যেন সমগ্র গাজাবাসীর উপর লাগাতারভাবে সক্রিয় গণহত্যা নৈতিকভাবে সমর্থক যোগ্য। যেন ইসরাইলী সহিংসতা নৈতিকভাবে সমর্থন যোগ্য, পক্ষান্তরে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতিরোধ আন্দোলনকে অভিহিত করা হচ্ছে বর্বরতা বলে।গাজার বেসামরিক মানুষের ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল, উত্তর গাজা থেকে পলায়নরত মিলিয়ন মানুষের উপর বোমা বর্ষণ কেন বর্বরোচিত নয়? ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষ হত্যা কোন যুদ্ধের ক্যাজুয়ালটি নয়, এই বোমার লক্ষ্য সরাসরি এই সিভিলিয়ান জনগণ, যারা জাতিগতভাবে আরব, বর্ণগতভাবে অপর - যার বিপক্ষে সকলের দাঁড়ানোকে বাটলার নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন। বাটলার নিজে তাৎক্ষনিক যুদ্ধ-বিরতিকে মনে করেন এই মুহূর্তের ন্যূনতম কর্তব্য। এই ৭৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে চমলান এই সহিংসতা আরও বৃহত্তর একটি পদ্ধতিগত কাঠামোর মধ্যে সংঘটিত হয়ে চলছে। দশকের পড় দশক ধরে বাস্তুচ্যুতি, জেল-জুলুম, হত্যা, ভূমি দখলের পদ্ধতিগত কৌশলে ফিলিস্তিনী জীবন ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হয়েছে। যতদিন না ফিলিস্তিনী জনসাধারণ তাদের নিজেদের জীবনের উপর আত্ম-নিয়ন্ত্রণ লাভ করবে, স্বাধীন নাগরিক বা রাজনৈতিক সত্তা রূপে প্রতিষ্ঠিত হবে, ততদিন আমরা আরোপিত কাঠামোগত সহিংসতা থেকে প্রতিরোধ আন্দোলন সৃষ্টি হতে দেখবো।

অক্টোবর ২৬, ২০২৩
উইস্কন্সিন, যুক্তরাষ্ট্র

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১১:০৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×