somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুশান্ত পালঃ বলির পাঠা

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুশান্ত পাল, এক বলির পাঠা

অল্প কদিনই আগে সুশান্ত পাল তার ফেসবুক টাইমলাইনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান কিছু অপকর্ম নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। আর তারপর থেকেই ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলনে নেমে পরেন দাবী - সুশান্ত পালের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা, তার সার্টিফিকেট বাতিল করা, তাকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের ", একটি ফেসবুক গ্রুপ, এর দাবী ছিল তারা যেন অতিদ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্হা নেন। একটুকুও সময় ক্ষেপন না করে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে মামলা করে। খুবই আশ্চর্যজজনক হলেও সত্য যে এনবিআর ও চোখের পলকেই তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্হা নিয়ে নিল মাত্র তিরিশ মিনিটের মধ্যেই! আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে যে এই মামলাটি কি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এনবিআর কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছিল?? আবার এনবিআর কর্মকর্তা তার ফেসবুক ওয়ালে লিখলেন, "সুশান্ত পালের বিরুদ্ধে ব্যাস্হা নেয়া হয়েছে, অভিযোগ প্রমানিত হলে তাকে চাকরিচ্যুতও করা হবে। আশা করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা শান্ত থাকবে "। তার এ পোস্ট কি প্রমান করে?
আমার কাছে এমনটাই মনে হল যেন এই ব্যাবস্হা কারো অপরাধের জন্য নয় বরং কাউকে খুশি করার জন্যই নেয়া। আসুন বিস্তারিত জানি



কি লিখেছিল সুশান্ত?ঃ যে লেখার কারণে সে আজ অপদস্ত সে লেখাটিকি আদৌ কোন গল্প নাকি বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে লেখা সেটা জানা যায়নি তবে তার এ লেখায় অনেক অসঙ্গতি আমার চোখে ধরা পরে। তার গল্পটিতে আমরা দেখি সায়ং নামের একটা ছেলে খুব কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেয় এবং সে মেধা তালিকায় ৪৩ নাম্বার হয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। রাজশাহীর ছেলে ঢাকায় এসেছে কোন আত্বীয়-স্বজন না থাকায় তাকে হলেই থাকতে হবে, বাধ্য হয়ে সে হলেই উঠল। এ পর্যন্ত সবাইকে মটিবেইট করেই এগিয়ে গেল তার গল্প "সংশপ্তক সায়ং"। কিন্তু এই প্লটে এসেই দেখা দেয় বিপত্তি গল্পকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকান্ড নিয়ে কথা তুলেন, কথা তুলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বড়ভাইদের দ্বারা র্যাগিং সিস্টেমের। আগেই বলেছি গল্পটি কতটা সত্য নির্ভর তা জানা যায়নি তবে এভাবে একটা প্রথম শ্রেনীর বিশ্ববিদ্যালয়কে সাধারন মানুষের সামনে প্রচার করাটা তার নেহায়েত অন্যায় হয়েছে বলেই আমি মনে করি। সে পোস্ট করার পরেরদিন নিজের ওয়ালে থাকা পোস্টটি রিমোভ করে ক্ষমা চেয়ে নতুন আরেকটি পোস্ট করেন কিন্তু মনে হয় মৌমাছি একবার মৌচাক ছেড়ে বের হলে প্রতিশোধ না নিয়ে আর ঘরে ফিরে না। তেমনটাই লক্ষ্য করা গেছে এখানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার উত্তাল, দাবী একটাই সুশান্তকে শাস্তি দিন।




ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের ভুমিকাঃ যেদিন মি পাল পোস্ট করলেন ঠিক সেদিন ই "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার" নামক ফেসবুক গ্রুফে তার পোস্টের স্ক্রীনশট সহ পোস্ট করা হয়। শুরু হয় তুমুল হট্টগোল, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ফুসে উঠতে শুরু করে আন্দোলনের হুংকার। তোপের মুখে পরে পরদিনই পোস্ট রিমোভ করে দিয়ে কয়েকঘন্টার জন্য ফেসবুক ডিএক্টিভেটও করে রাখতে দেখা যায় তিরিশতম বিসিএসে যোগদান করা এই রাজস্ব কর্মকর্তাকে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ক্ষ্যান্ত হওয়ার নয় তার বিরুদ্ধে মামলা করা, তার সনদ বাতিল করা, তাকে আইনের আওতায় আনাসহ আরো কিছু দাবী নিয়ে সর্বশেষ মানববন্ধন পর্যন্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। অবশেষে আজ(২৭/১০/২০১৬) বিকেল চারটার দিকে শাহাবাগ থানায় তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে (৫৭ ধারা) মোতাকাব্বির নামের এক ছাত্র তার বিরুদ্ধে মালমাটি দায়ের করে।




এনবিআরের ভুমিকাঃ উপরের যা বললাম তার কিছু টপিক সেন্টেন্সের সাথে মিলে না। পুরো ঘটনার একটু সারসংক্ষেপ বুঝানই এর লক্ষ্য ছিল।

এবার তাহলে মুল কথায় আসি,

ঘটনা ঘটার ঠিক চারদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে এক ছাত্র শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করে এই বলে যে সে দেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়কে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। সাথে এটে দেয়া হয় পনের পৃষ্ঠার এক স্মারকলিপি। সন্ধ্যা সাতটা, তখন বাদি মামলা করে বের হল মাত্র তার ঠিক আধা ঘন্টা পরই এনবিআর কর্মকর্তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট "সুশান্ত পালের বিরুদ্ধে ব্যাস্হা নেয়া হয়েছে,অভিযেগ প্রমানিত হলে তাকে বরখাস্ত করা হবে। আশা করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এখন শান্ত থাকবে "। তার প্রথম পংক্তিটাতে আমার আপত্তি আছে, সে বলেছিল তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্হা নেয়া হয়েছে আবার বলল অভিযোগ প্রমানিত হলে তারপর চাকরিচ্যুত করা হবে। দুইটা কথা কেমন সাংঘর্শিক!! তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ যদি প্রমানিত না ই হয় তবে তাকে কেন শাস্তি ভোগ করতে হবে?
পরের লাইনে রয়েছে আরো বড় প্রশ্ন, "তিনি আশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আর তেলেবেগুনে জ্বলে উঠবেনা। প্রশ্ন হল তবে কি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে ঠান্ডা করার জন্যই সুশান্তকে ওএসডি করা হল??





মন্তব্যঃ সুশান্তকে আমি বলির পাঠা বলেছি পোস্টের শিরোনামে, নামটির যথার্থতা নিয়ে হয়ত প্রশ্ন তুলতে পারেন কিন্তু সে যে পাঠারুপ বলি হয়েছে তার কোন ব্যত্যয় হয়নি। আমরা অনেকই দেখেছি পাঠা বলি দেয়ার জন্য বড়, আকর্ষনীয় পাঠাটাই বাছাই করা হয়। আর তার আর্তচিৎকারে হুংকার দিতে থাকে নরপশুরা। এও এখানে পাঠা। অনেক কষ্ট ক্লেশ করে বড় হয়ে আজ প্রতিষ্ঠিত কিন্তু হঠাৎ এক ফেসবুক পোস্ট যেন তাকে আবার ধুলোয় মিলিয়ে দিল। তার ভুল ছিল সত্য কথাগুলো যদি সে একটু মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অন্য নামে বলত তবে হয়ত তাকে এতটুকু ঢুবতে হত না। যেদেশে আনোয়ার হোসাইনের মত ভিসিরা মাসের পর মাস আন্দোলনের পরেও স্বপদে বহাল থাকে সেদেশে সুশান্ত শুধু তার এক পোস্টের কারনেই চাকুরীচ্যুত! যেদেশে ছাত্রলীগ নেতারা বছরের পর বছর প্রশ্ন ফাসের মাধ্যমে অপরাধ করে যাচ্ছে আর রাস্তায় বুক ফুলিয়ে হাটছে সেদেশে সুশান্তরা একটি ফেসবুক পোস্টের কারনেই হচ্ছে লাঞ্চিত।
যেদেশে মানিকরা ধর্ষনের সেঞ্চুরী করেও পার পেয়ে যায় সেদেশে সুশান্তরা কয়েকজন মেয়ের সাথে চ্যাট করার অপরাধেই ধরাসায়ী!

সে পাঠা যখন হয়েছে বলি তাকে হতেই হবে। কারণ সে ঐ মোচওয়ালা পাঠাদের দলে নাই যারা মোচের আড়ালে হিংস্র দাতগুলো লুকিয়ে দিবে।

তার কাজটি খারাপ ছিল, এনবিআরের কাজটি ভাল ছিল

এই লাইনের কারণে হয়ত অনেকের কাছে পোস্টের গুরুত্ব হারাবে তাই একটু খোলাসা করি আমি পোস্টে মুলত সিস্টেম নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। সুশান্তর পক্ষ নিয়ে বা এনবিআরের বিপক্ষে যাওয়ার কাজ আমার না। আমি সুশান্তর বিপক্ষে এই জন্য যে সে একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে দায়িত্বজ্ঞানহীন একটি পোস্ট লিখেছে। অন্যদিকে এনবিআরের পক্ষে কথা বলছি এই জন্য যে তারা তড়িৎ পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের এই পদক্ষেপের কারণে হয়ত এমন আরো কয়েকটি ঘটনা ঘটবেনা।তাদের এই কাজকে সাধুবাদ জানিয়ে পরবর্তী কাজগুলো প্রতিশ্রুতিমত করার আহবান করছি।

ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

মন্তব্য পাতা খোলা আছে, আপনার মনের কথা লিখতে পারেন কষ্ট পাব না।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৪৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×