somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক্সুয়াল লাইফ বনাম ভার্চুয়াল লাইফ

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভার্চুয়াল লাইফ বনাম এক্সুয়াল লাইফ

০৭-০৮-২০১৭ঃ আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার হিসেবে আজকে বন্ধু দিবস। ইংরেজি ক্যলেন্ডারের হিসেবে রাত বারটা থেকেই ০৭ তারিখ শুরু।সেই তখন থেকেই বিভিন্নজন টেক্সট করে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা জানানো শুরু করল। একটু সেকেলেই রয়ে গেলাম তাই আর কাউকে শুভেচ্ছা জানানোর মত সৌজন্যতাবোধ টুকুও দেখাই নি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিত্যকাজে বাসা থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসে পা রাখলাম। কিছুক্ষন পর হঠাৎ করে থমকে গেলাম। কারণ,

ছোট ভাইয়ের টেক্সট- " কি ভাই, ছোট একটা যে ভাই আছে মনে হয় ভুলেই গেলি"। এ টেক্সটটা পাওয়ার পর আমারর তিনপ্রকার অনুভুতি হইছিল, প্রথমটা হাসি, দ্বিতীয়টা কান্না তৃতীয়টা ভাবনা। হাসির কারণ- সকাল সাতটায় আমিমি বাসায় ফোন দেই তখন মায়ের সাথে কথা হয়েছে ওর খোজ নিতেই বলল ঘুমে। সে হিসেবে বললাম যে ছোটতো তাই আবদারটা একটু বেশী।
কান্না- এর পেছনে একটা কারণ আছে যা আমার মত সকলকেই কাদায়। ২০১৪ সাল থেকে আমি স্নাতক ভর্তি হয়ে বাড়ির বাহিরে থাকি। ঐ বছরই আমার বাবাও আমাদের ছেড়ে চলে যান ওপাড়ে। আমার বড় ভাই আগে থেকেই গ্রামের বাহিরে। তৎক্ষনাৎ খুব লাগছিল ব্যাপারটা, নিজেও যেন ছোট হয়ে গেছিলাম।ষোল বছরের একটা ছোট্ট ছেলে একা থাকে কেমন তার অনুভুতি!!
ভাবনাঃ- এই টপিকে যাওয়ার জন্য এই অংশটা জরুরী। যখন আমি ২০১৪ সালে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসি তখন প্রায় প্রতিদিনই এলাকার ছেলে-মেয়ে গুলোর খোজ নিতাম। মায়ের খোজ নিতাম, ভাইয়্যাকেও কল দিতাম। অনেকে হয়ত প্রতিদিন ফোন দেয়াতে বিরক্তবোধও করত। কিন্তু আমি সেটাকে উপভোগ করতাম মন থেকে। সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে গিয়ে দিনদিন ভার্চুয়াল লাইফে ঝুকে পরি আমি।ঠিক তখন থেকেই গ্রামের সেই দিনগুলোও ভুলতে শুরু করি।২০১৫ সালের কথা, আমি তখন অনার্স ফার্স্ট ইয়ার তথা দুই সেমিস্টার শেষ করে তৃতীয় সেমিস্টারে। একটু একটু পরিচিতি বাড়তে শুরু করে ক্লাস থেকে সেকসান, সেকসান থেকে ডিপার্টমেন্ট, ডিপার্টমেন্ট থেকে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। আমি এখন খুব ব্যস্ত ভার্চুয়াল লাইফ নিয়ে।সকালে ঘুম থেকে উঠেই মোবাইলের ডাটা অপেন করতে হয় নাহয় যেন ঘুম ভাঙ্গবেনা অবস্থা। আবার সেই শেষ রাত অবধি সঙ্গি একটাই ভার্চুয়াল জগৎের কিংখান মোবাইল। এর বাহিরের সব ভুলে যেতে লাগলাম দিনদিন। ঐদিন প্রথম-আলোতে একটকটা রিপোর্ট পড়েছিলাম, "মা মোবাইল টিপছে, ছেলে পানিতে ভাসছে"। আমার ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিল। আমি যেন দিনদিন আপন ভুলে যাচ্ছিলাম।আমার মা আমাকে দুই-তিনদিন পর ফোন দিয়েয়ে বলত,"কিরে একদম ভুলে গেছিস?"। কিসের মোহে পরে এমনটা হচ্ছিল তার হদিস পেতে আমার দুইটা বছর সময় লাগছিল। আজ ঠিক দুইবছর পর ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে এসে আমি আবারর সেই পুরনো বাবুতে ফিরে যাচ্ছি। আমার হুস ফিরেছে, লাইক, কমেন্টট আর হাই-হ্যালোর বন্ধুত্ব থেকে দূরে সরে নিজের আপনকে কাছে নেয়র দীক্ষা নিচ্ছি রোমেন্টিক পয়েট্রি থেকে। ছোট-ভাইয়ের টোক্সট আমাকে অনেকটা ভাবিয়েছে।নিজেকে চিনতে নিজেকে ভালবাসতে গিয়ে নাহয় একটু আধটু সেকেলে বনে গেলাম তাতে আর তেমন ক্ষতি কোথায়??

ভার্চুয়াল বন্ধুত্বের ক্ষনস্থায়ীত্বঃ যেকোন কারণে হঠাৎ করে ফেমিলিয়ারিটি কুবের হয়ে গিয়েছিলাম। সেটাও ২০১৫ সালের কথা।আমি তখন থেকে বেশী বেশী অনলাইনে থাকা শুরু করি। একজন দুইজন করে গুনগ্রাহী আমাকে টেক্সট দিতে থাকে বিভিন্ন পরামর্শ আদান-প্রদানের জন্য। এক পর্যায়ে তা পরামর্শ প্রদান থেকে অন্যদিকে মোড় নেয়।একদিন দুইদিন এমন করতে করতে একবছর। শেয়ারিংয়ের মাত্রাটা একটু বাড়তে শুরু করল। সবকিছুই শেয়ার করি এখন আমরা। আমার এমন কোন ফটো পাওয়া যাবেনা যেটাতে তার লাভ ইমো নাই এবং আমার সব ফটোই তার কালেকশানে থাকে। এমন করে একবছর চলল। ২০১৫ সেপ্টেম্বর -২০১৬ এর জুলাই মাস। সে হঠাৎ করে আমার পাশ থেকে স্রোতের আঘাতে ছিটকে পরে অর্থার্ৎ আমার সংস্পর্ষ আর তার প্রয়োজন নেই। সেই অপারেটর এখন আর আমাকে আগের মত চিনে না। এক ক্লিকেই তার ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে আমি বাদ পরে যাই, তার সাথে শেয়ার করা স্মৃতিগুলো শুধু অনলাইনে আসলেই চোখে পড়ে। এখন আর আমার ফটোগুলোতে তার লাভ ইমো নাই, প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলেই তার টেক্সট পাওয়া যায় না।তবে হ্যা! এখন সে আমাকে মিস করে! যদি কোন দরকার পরে তখন হঠাৎ ম্যাসেন্জারের নিল বাততি জ্বলে উঠে আর স্ক্রিনকে আলোকিত করে ভেসে উঠে, "আই মিস ইউ ... আমার এই কাজটা...!"
এটা বাস্তব ঘটনা। আমার সাথে ঘটে যাওয়া ভার্চুয়াল জগৎের সবচেয়ে মনে রাখারমত একটা ইভেন্ট।ছোট বেলার বন্ধুরা যারা না বুঝেই আবেগের কারণে বন্ধুত্বের আবেশে জড়িয়ে পরে তারাই আসল বন্ধু। এরা শিকড়ের মত, শিকড় যেমন গাছ কেটে ফেলার পরেও বাকি থাকে এরাও তেমন দেহ চলে গেলেও মনে রাখবে বহুদিন।

বন্ধু দিবসে এসে আসল বন্ধু চেনাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন কাজ। সবাইকে দিয়ে তা হয়ে উঠে না। আপনি যদি পারেন তবেই আপনি সফল।

সায়েম মাহামুদ কাজল,
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
[email protected]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×