somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বজিতের শরীরে কোপের চিহ্ন নেই! X( X( X(

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে পথচারী বিশ্বজিত্ দাসকে কোপানোর ভিডিও ফুটেজ ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছবি সারা বিশ্ব দেখেছে। চাপাতি, ছুরি, রড ও লাঠি দিয়ে যে যেভাবে পেরেছে আঘাত করেছে তাকে। বিশ্বজিতের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে হামলাকারী শাকিলের সাদা শার্ট। অথচ আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ময়না তদন্তকারী চিকিত্সক ডা. মাকুসদ বিশ্বজিতের দেহে কোন কোপের চিহ্ন পাননি। শুধু পেয়েছেন পিঠে সামান্য ছুরিকাঘাতের আলামত। ময়না তদন্ত রিপোর্ট গতকাল সোমবার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে এসে পৌঁছেছে।

গতকাল সকালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ থেকে এসআই মাহবুব বিশ্বজিতের ময়না তদন্ত রিপোর্ট গ্রহণ করেন। সেখান থেকে তিনি সরাসরি ডিবি কর্মকর্তাদের কাছে তা পৌঁছে দেন।

ডা. মোঃ মাকসুদ স্বাক্ষরিত ময়না তদন্তের রিপোর্টে দেখা গেছে বিশ্বজিতের পিঠে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যা মাংশপেশী পর্যন্ত গভীর একটি সাধারণ আঘাতের চিহ্ন। ওই রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়, বাম পায়ের গোড়ালি থেতলানো ছিল। হার্টে রক্ত শূন্যতা অর্থাত্ রক্ত নেই বলে উল্লেখ করেছেন। গ্রেফতারকৃত ঘাতক রফিকুল ইসলাম শাকিল ওরফে চাপাতি শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, রাশেদুজ্জামান শাওন, সাইফুল ইসলাম, এইচএম কিবরিয়া ও কাইয়ুম মিয়া টিপু জিজ্ঞাসাবাদে ডিবির কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছে বিশ্বজিতকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে, ছুরি মেরে রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। কে কিভাবে কোন অস্ত্র ব্যবহার করেছে তাও ঘাতকরা ডিবি কর্মকর্তাদের বলেছে।

শাকিল জানায়, চাপাতি দিয়ে বেশ কয়েকটি আঘাত করেন তিনি। এর মধ্যে তিনটি আঘাত জোরে বিশ্বজিতের গায়ে লাগে। পলাতক রাজন তালকুদার ও মোস্তফা ছুরিকাঘাত করেছে। নাহিদ, শাওন, সাইফুল, পলাতক ওবায়দুল কাদের তাওসীন, ইমদাদুল হক, নূরে আলম লিমন, তমাল ও ইমরান রড ও লাঠি দিয়ে প্রত্যেকে কমপক্ষে তিন থেকে ১০ বার আঘাত করেছে বলে ডিবি কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করে।

অথচ ময়না তদন্ত রিপোর্টে ডা. মো. মাকসুদ এসব আঘাতের আলামত পাননি। ময়না তদন্ত রিপোর্টটি নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ বলেন, আসামিরা আঘাতের স্বীকারোক্তি দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত চাপাতিটিও উদ্ধার হয়েছে। পাওয়া গেছে হত্যাকান্ডের নানা আলামত। কিন্তু ময়না তদন্ত রিপোর্টের সঙ্গে এসবের কোন মিল নেই। ঘাতকদের রক্ষা করার জন্য এই ময়না তদন্ত রিপোর্ট। এমন মন্তব্য করেছেন কোন কোন কর্মকর্তা।

একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক বলেন, ময়না তদন্তকারী চিকিত্সক যে রিপোর্ট দিয়েছে, সে অনুযায়ী বিশ্বজিতের মারা যাওয়ার কথা নয়। সে একদিন নয়, কয়েকদিন বিনা চিকিত্সায় পড়ে থাকলে মারা যাওয়ার কথা নয়। পিঠের ইনজুরির কারণে হার্টের রক্ত বের হওয়ার কথা নয়। বিশ্বজিতের দেহের আঘাতের সঙ্গে ডা. মাকসুদের ময়না তদন্তের রিপোর্টের মিল নেই। তিনিও বিশ্বজিত্ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজে দেখেছেন বলে জানান।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ডা. মাকসুদ স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতা। এর আগে একটি ধর্ষণের ঘটনায় তিনি মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকা উেকাচ নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে গোয়েন্দাদের কাছে। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী ও সুবিধাভোগী চিকিত্সক ডা. মাকসুদের পক্ষে ঘাতকদের বাঁচানো ময়না তদন্ত রিপোর্ট দেয়া সম্ভব বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন। স্বাচিপের এক নেতা বলেন, ডা. মাকসুদ প্রকৃত স্বাচিপের নেতা নন। তিনি স্বাচিপের নেতা সেজে ও নাম ভাঙ্গিয়ে ময়না তদন্তের রিপোর্টে গড়মিল করার বাণিজ্যে লিপ্ত। এভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। তদন্ত করে ডা. মাকসুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান ঐ স্বাচিপ নেতা।

সুত্রাপুর থানার বিশ্বজিত্ হত্যা মামলার বাদি এসআই জালাল উদ্দিন বলেন, বিশ্বজিতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা ও ফোলাসহ অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। বিশ্বজিতের সুরতহাল রিপোর্টে তা উল্লেখ করা হয়। এ সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বজিত্ হত্যা মামলার এজাহার লেখা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী এসআই জাহিদুল হক বলেন, লাশ যেমন দেখেছি, তেমনি রিপোর্টে তা উল্লেখ করেছি। বিশ্বজিতের মাথা, হাত, পা ও পিঠসহ সারা শরীর কাটা জখমের ও ফোলা দাগ ছিল অসংখ্য। সারা শরীর ছিল রক্তাক্ত। গতকাল ময়না তদন্তকারী চিকিত্সক ডা. মাকসুদের মোবাইল ফোনে কয়েক দফা চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চক্রবর্তীর সঙ্গে গতকাল রাত ৯টায় যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডা. মাকসুদ বিশ্বজিতের শরীরে একটি আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা তাকে জানিয়েছেন। ঐ আঘাতটি গুরুতর ছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি আঘাতই মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। বিশ্বজিতের দেহে আর কোন আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা তিনি আমাকে জানাননি।

ঘটনার পর সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয় বিশ্বজিতকে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিত্সক বিশ্বজিতকে মৃত ঘোষণা করেন। সেসময় ওই চিকিত্সক সাংবাদিকদের বলেন, বেশ কয়েকটি আঘাত ছিল বিশ্বজিতের দেহে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কারণে বিশ্বজিতের মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. ইকবাল আসর্লান বলেন, ময়না তদন্তকারী চিকিত্সক ময়না তদন্তে অবহেলা কিংবা গাফিলতি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনকি প্রয়োজনে তাকে গ্রেফতারে বিএমএ সহযোগিতা করবে বলে তিনি জানান।

দ্বিতীয় দফা ময়না তদন্ত করার সুযোগ নেই

৯ ডিসেম্বর অবরোধ চলাকালে পুরনো ঢাকার লক্ষ্মীবাজার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে টমাস ডেন্টাল ক্লিনিকে নিরীহ বিশ্বজিতকে নৃশংসভাবে হত্যার পর ঐ দিন তার ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মর্গ থেকে ঐ দিন বিশ্বজিতের লাশ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়। রাতেই সত্কার করা হয়ে যায়। এখন তার লাশ না থাকায় দ্বিতীয় দফা ময়না তদন্ত সম্পন্ন সম্ভব হবে না। অতীতে ময়না তদন্ত রিপোর্টে বড় ধরনের গড়মিল থাকলে দ্বিতীয় দফা ময়না তদন্ত করে তা নিরসন করা হয়। এটা শুধু লাশ রেখে দিলে কিংবা দাফন করা হলে সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফা ময়না তদন্ত করা সম্ভব বলে চিকিত্সকরা জানান।

এদিকে ডিবি হেফাজতে থাকা শাকিল, নাহিদ, শাওন, সাইফুল, টিপু ও কিবরিয়াকে আটদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। তারা বিশ্বজিেক হত্যা করার দায় স্বীকার করেছে। জড়িত আরও ইউনুস, তমাল, মোস্তফা ও ইমরানের নাম প্রকাশ করেছে।

সুত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:০৭
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×