জাহিদের মন মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। পকেটে টাকা নেই প্রায় এক সপ্তাহ। সকালের নাস্তার খরচ বাচানোর জন্য সারাটা সকাল ঘুমিয়ে কাটায়। সকালের ক্লাসগুলোতে আর যাওয়া হয় না। পোলাপানের কাছে টাকা ধার নিতে নিতে এখন আর ধার নেবার মুখ নেই। কাউকে বলতেও পারছে না। সবাই ব্যাস্ত। একমাত্র রুমমেট শুধু ব্যাপারটা জানে। কিন্তু জানা সত্ত্বেও সে কিছুই করতে পারছে না। জাহিদের রুম মেটের নাম তুষার। তার পকেটেও টানা টানি। হলের সামনের হোটেলে বাকি খেতে খেতে পাহাড় সমান বাকি হয়ে গেছে। মুখ দেখানোর উপায় নেই। কিন্তু পেট তো আর মুখের কথা শুনবে না। রাত পোহালে পাখি বলে দেরে খাই দেরে খাই অবস্থা।
জাহিদ একটাই টিউশনি করে। মাস এখনো শেষ হয় নি। টাকা পেতে এখনো তিন চার দিন বাকি। এই তিন চার দিন কিভাবে চলবে জাহিদ জানে না। বাড়িতে টাকা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। বাড়িতে টাকা চাওয়া মানে বাপ মার উপর আলগা একটা চাপ দেওয়া। সেই বয়স বহু আগেই পার করে এসেছে জাহিদ। এখন বরং বাড়ীতে কিছু টাকা পাঠেতে পারলে বাপ মার একটু উপকার হত। ছোট ভাইয়ের পড়াশুনা কিভাবে চলছে আল্লা মালুম।
দুপুরে রুটি কলা খেয়ে রুমে এসে এক জগ পানি খেয়ে পেট ভরে নিল জাহিদ। বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক হুমায়ুন আহমেদ সাহেব তার কোন একটা বইয়ে বলেছিলেন খালি পেটে পেট ভরে পানি খেলে নাকি নেশা নেশা ভাব হয়। খাটের উপর ঠায় বসে থেকে জাহিদ কিছুক্ষন অপেক্ষা করল নেশা নেশা ভাবটা ধরে কিনা। গতকাল ধরেছিল আজ মনে হয় আর ধরবে না। প্রতিদিন পানি খেলে নেশা ধরবে কিনা হুমায়ুন সাহেব সেটা বলেন নি। হতাশ হয়ে জাহিদ জামা প্যান্ট পরে বেরিয়ে পড়ল। রদ্দুর পড়ে গেছে। রঙ বেরেঙ্গের জামা কাপড় পরে প্রেমিক প্রেমিকাদের আগমন শুরু হয়ে গেছে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে ভাল লাগে। অন্যের সুখ দেখেও মজা। হিংসা হিংসা মজা। জাহিদ হাটতে হাটতে ছাত্রের বাড়ির দিকে রওনা হল। সারাদিনে এই একটি কাজ ছাড়া তার আর কোন কাজ নেই।
ছাত্র পড়াতে পড়াতেই তুষারের ফোন। তুষার বলল, জাহিদ কোথায় তুই ?’ জাহিদ বলল, ছাত্রের বাসায়, কেন?’ তুষার বলল, আমি ফোন না দিলে বাসা থেকে বের হইস না। ঝামেলা আছে, বুঝছিস ? জাহিদ হ্যা বলার সাথে সাথেই ফোন কেটে দিল। এরকম কেন বলল তুষার জিজ্ঞাস করা গেল না। টেনশনে ফেলে দিল। না জানি কি কাহিনী বাধিয়েছে। তুষারের কোন কাজ হয় না। সারাদিন হিমুগিরি করে বেড়ায়। পাঞ্জাবীর রঙ অবশ্য হলুদ নয়, সবুজ। লোকজনের আতেল গালি খাওয়ার ভয়ে হলুদ পাঞ্জাবী পরে না। বাপের অনেক টাকা পয়সা থাকলেও তার নিজের পকেটে কোনদিন টাকা থাকে না। সারাদিন ধান্দাবাজী করে বেড়ায়।
টেনশন নিয়ে জাহিদ অপেক্ষা করছে কখন তুষার আবার ফোন দেয়। সন্ধ্যা হয়ে পার হয়ে গেছে। ছাত্র পড়ানো অনেক আগেই শেষ। এরকম সময় তুষার এর ফোন এল। কানে ধরতেই তুষার চিতকার করে উঠল, কোন কথা বলবি না, শুধু তোর ছাত্রের মাকে নিয়া নিচে নাম। যা বলার আমি বলব তুই শুধু মাথা ঝাকাবি, কোন কথা বলবি না।‘ আবার জাহিদ হু বলার সাথে সাথেই তুষার ফোন কেটে দিল। ফোন ব্যাক করার উপায় নেই, টাকা নেই ফোনে। অগত্যা ছাত্রের মাকে ডেকে নিয়ে সঙ্কিত মনে নিচে নামল জাহিদ।
তুষার যদি উল্টাপালটা কিছু করে তবে আজ এখানেই তুষারকে খুন করে ফেলবে জাহিদ। নিচে নেমে দেখা গেল বাড়ির সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে মুখ চোখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে তুষার। ছাত্রের মাকে দেখেই সালাম দিয়ে বলল, আন্টি জাহিদ তো অনেক অসুস্থ ওকে নিয়ে হাসপাতালে যাব একারনে এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসেছি। ছাত্রের মা ভিষন অবাক হয়ে গেলেন। এরকম কিছুর জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। জাহিদ নিজেও ছিল না। ছাত্রের মা অবাক হয়ে বলল জাহিদ তুমি তো আমাকে কিছু বল নি। কি হয়েছে ? জাহিদ আমতা আমতা করছে। তুষার আবার বলল আসলে আন্টি ও তো একটু মুখ চোরা সহজে কিছু বলে না। আন্টি বলল কি বল ? জাহিদ তোমার কাছে টাকা আছে ? জাহিদ আমতা আমতা করে বলল জি না আন্টি। আন্টি বলল, আগে বললেও পারতে, তুমি দাড়াও আমি তোমার টাকা নিয়ে আসি। আন্টি কিছুক্ষন পরই টাকা নিয়ে এসে জাহিদের হাতে গুজে দিলেন। জাহিদ বিদায় নিয়ে এ্যাম্বুলেন্সে উঠল। এ্যাম্বুলেন্স চলা শুরু করতেই সে তুষার কে চেপে ধরল, শালা তোর কোন কাজ হয় ??? তুষার হা হা করে হাসি দিয়ে বলল না তো আমার কোন কাজ হয় না। টাকা তো পাইছস চল পেট ভরে ভাত খেয়ে আসি…
*সত্য ঘটনা অবলম্বনে
Courtesy:অপভ্রংশ