সমাবেত জনতার হইচই, শোরগোল ক্রমেই বাড়ছে। সুদীপ্ত দাড়িয়ে আছে একটা সুউচ্চ ভবনের ছাদের কিনারে।
উৎসুক জনতাকে চোখে ঝাপসা দেখছে সে।অনেকের হাতে মোবাইল, ক্যামেরা। মানুষের ফেইসগুলো ঠিকঠাক দেখতে পারছে না।
সূর্যালোকের তীব্র দহনে তার শরীর দপ দপ করে ঘামছে।
নিচ থেকে চিৎকারের আওয়াজ পাচ্ছে
-কিহে বৎস তোমার খেল দেখাও।
-রোদের মধ্যে কতক্ষন দাড়িয়ে থাকতে হবে?
সবার দৃষ্টিপাতের কেন্দ্রবিন্দু সুদীপ্ত। সবার আবেগ, উৎসাহ, কৌতুহল আর কোলাহলের কেন্দ্রস্থল সুদীপ্ত।
সে এবার নিজের কিংবদন্তি কে জাগ্রত করছে। মনে মনে আওরাচ্ছি “তুমি পারবে এটা, তুমিই পারবে আর আগেও অনেকবার করেছ এবং এটা শুধুই তুমি পার। এটা তোমার পারসোনাল লিজেন্ড”।
চিবুক থেকে টপ টপ করে ঘাম ঝড়ছে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে সুদীপ্ত বলল, “হে বিশ্বভ্রমান্ড আমি তোমার কোন এক ক্ষুদ্রাতিক প্রান, তোমার পরমাত্নার অংশ। বাঁচিয়ে রেখ।
অনেকগুলো পাখি আকাশে চক্রাকারে ঘুরছে। কি পাখি বুঝতে পারল না।
এসব বোঝার সময়ও নেই।
হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছল সুদীপ্ত।
নিচের দিকে আরেকবার তাকিয়েই তার সমস্ত চিন্তাচেতনা আর সত্ত্বাকে কেন্দ্রীভূত করে সে লাফ দিল।
ওজনহীন সমস্ত শরীরকে ঠান্ডা বাতাসের প্রবাহ ছুঁয়ে দিল।
কয়েকটি হার্টবিট মিস করল সে।
প্রায় সাত-আট সেকেন্ড পর সে আবার শরীরে আগের মত ওজন অনুভব করল। অক্ষত অবস্থায় মাটিতে অবতরণ করল। সবাই হাত তালি আর স্লোগান টাইপের কিছু একটা করছে।
কিছুক্ষণ পর সবার বড় বড় গোল চোখগুলি তার দিকে ব্যঙ্গাত্তকভাবে এগিয়ে আসছে। না তার আর ভালো লাগছে না তার।
শব্দ তিব্রতর হতে লাগল.......
প্রচন্ড শব্দে ঘুম ভাঙল সুদিপ্তের।
ঘুম ভেংগে দেখল ফ্যানটা ঘুরছে না, কয়েকদিন হল ফ্যানটা চলতে চলতে হঠাত থেমে যাচ্ছে। রুমের জানালাটা খোলা।
গা ঘেমে গেছে তার, হঠাৎ একঝলক দমকা হাওয়া সমস্ত শরীরকে আলিংগন করে গেল।
হলের টিভি রুম থেকে শোরগোল আর হাত তালির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
মনে হয় বার্সালোনা আর রিয়েলমাদ্রিদের খেলাটা শুরু হয়ে গেছে।
সে তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় চোখ বন্ধ করে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ভাবতে লাগল, “আচ্ছা যদি কোনদিন কোন এক ছাদ থেকে সত্যি সত্যিই লাফ দেই তাহলে কি হবে? তখন কোন অলৌকিক শক্তি তাকে কি অক্ষত অবস্থায় বেঁচে রাখবে?
আরেকটা চিন্তা তার মস্তিষ্কের নিউরনকে আলোড়িত করল
“আচ্ছা মানুষ যদি পাখিকে উড়তে না দেখত তাহলে কি সে আকাশে উড়বার স্বপ্ন দেখত, বিমান কি আদৌ আবিস্কার হতো”?