somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুলভালের ডায়েরী- খেলাপাগল, পাগল খেলা।

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাতে মাঝে মাঝে হাটতে বের হই। কখনও পরিবেশ প্রকৃতি দেখতে কখনো মানুষ দেখতে। দিবালোকে মানুষ একরকম রাতের অন্ধকারে আবার অন্যরকম।
আজ রাতে অবশ্য অন্ধকার নেই। জোৎস্নার আলোতে ভেসে যাচ্ছে পৃথিবী। বসন্ত বাতাসে ভেসে আসছি কখনো মাধবীলতা, কখনো নিমফুলের গন্ধ।
এরকম দুপাশে গাছ-গাছালী ঘেরা রাস্তার পাশে একটি চায়ের দোকান। দোকানে ২/৪ জন বসে আছে আর দোকানদার চা বানাচ্ছে।
দোকানে চায়ের অর্ডার করলাম।
দোকানের এক কোনায় মাঝারী সাইজের টিভি। টিভিতে ফুটবল খেলা হচ্ছে। লিগের কোন একটা খেলা হবে বোধয়।
এই টিভিতে আর ক'দিন পর আইপিল দেখানো শুরু হবে। সেই সাথে শুরু হবে বাজিধরা জমজমাট আসর। প্রতিটা উইকেট থেকে শুরু করে বলে বলে ধরা হয় হাজার হাজার টাকার বাজি। জমজমাট আসর বসে এই দোকানে, তখন আর এদিকটায় আমার আসা হয়না।

কোণ থেকে অবজারভেশন ভালো হয়। তাই আমি বসলাম দোকানের চারপাশে যে বেঞ্চ আছে পাতানো আছে তার এক কোণায়। চায়ের অর্ডারটা করেই টিভিতে খেলা দেখছিলাম।

আমার ডানপাশে একটু দূরে বসে দুজন গল্প করছে। মাঝবয়সী তরুণ আর এক মধ্যবয়স্ক চাচা।
টিভিতে সাউন্ড নাই বিধায় তাদের আলোচনা শুনতে পাচ্ছিলাম।
অনেকটা এমন-
যুবকঃ শুনলাম এবার আইপিএল থেকে অস্ট্রিলিয়ান অধিনায়ক কি জানি নাম হে নিষিদ্ধ হইছে। খেলতে পারব না।
চাচাঃ অইত স্টোক। একদম শিক্ষা হইছে। ক্রিকেট খেলায় ফাইজলামো! কত্তগুলা ক্যামেরা থাকে! ধরা ত খাবোই।

যুবকঃ এইডারে ফাইজলামো কইতাছেন ক্যান? এটা তো দূর্নীতি, পুরাই দূর্নীতি। খবরে দেখেন না কত পিলিয়ার ম্যাচ ফিক্সিং করে। লাখ লাখ টাকার খাইয়া শেষে ধরা।নেওনের সময় হেই টাকাগুলা রাখবো কই? এবার হাতেনাতে ধরা।
একদম টিভিতেই নাকি দেহায়ে দিছে সেই টাকা।
ফেসবুক জুড়ে হেই ছবি। প্যান্টের ফাঁক দিয়া হাত দিয়া টাকা চাপা মাইরা রাখছে। একদম ইজ্জত ধুইয়া দিছে।

চাচাঃটাকাই দেখছস নাকি অন্যকিছু ক দেহি?
যুবকঃ ডলার চাচা ডলার।
চাচা অবাক হওয়ার ভঙ্গীতে বলল,
কত ট্যাকা ইনাগো! প্যান্টভর্তি ট্যাকা, উছলাইয়া পড়ে….মাঠে উড়ে বেড়ায়

(দূর্ভাগ্যবশত আমি খবরটি জানি। আসল খবর হচ্ছে “ ক্রিকেটে বল টেম্পারিং বা বিকৃতির অপরাধে বেন স্টোক ও ওয়ার্নারকে আইসিসি ১ বছর নিষিদ্ধ করেছে। আইপিলেও খেলতে পারবেনা।
ক্যামেরায় সিরিজ কাগজ টাইপ কিছু একটা ধরা পড়েছিল যা দিয়ে লুকিয়ে সে বলে ঘষে টেম্পারিং করছিল)

একটা তীব্র আলোতে সেই কথাবার্তায় ছেদ পড়ল। মোটরবাইক থেকে এক লোক নেমে এল। বেশ ভাবভঙ্গী তার।
হাতের প্রতিটা আঙুলে আঙুলে সোনার বা তামার আংটি। গলায় মোটা চেইন। সোনারই হয়ত হবে। কালো কুচকুকে গুম্ফ। গায়ে লাল কালারের শার্ট।
এসে দোকানীকে এক প্যাকেট বেনসন এন্ড হেজেস দিলে বলল। দোকানী প্যাকেট গামছা দিয়ে ভালো করে মুছে তার হাতে দিল। তার মাথার ওপর এক কাদি পাকা পাকা কলা ঝুলছিল। কাঁত হয়ে পরিষ্কার নিখুত চারটা কলা ছিড়ে নিয়ে দাম জিজ্ঞেস করল।
দোকানী দাম বললে ২০ টাকার কলা ১৮ টাকায় খরিদ করল।
আমার ডানপাশে খালি জায়গায় কলা আর সিগারেটের প্যাকেট রেখে বসে পড়ল। এরপর সেখান থেকে কলা নিয়ে ছিলে ছিলে খাওয়া শুরু করল।
খাওয়া শেষ করে ভদ্রলোক তড়িৎ ভঙ্গীতে বেঞ্চে জমানো কলার ছোবলাগুলিকে সিগারেট ভেবে পকেটে পুরে হনহন করে চলে গেল। সিগারেটের প্যাকেটটি যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেল।

ওইপাশে বসা এক পাগল। একটু আগেও যে নাদুস নুদুস একটা কুকুরের গা বুলিয়ে দিচ্ছিল আর আর নিজে নিজে প্রলাপ করতেছিল। গায়ে তার জোড়াতালি দেওয়া নোংরা শার্ট।সে এই কেতাদুরস্ত লোকটিকে চুপি চুপি দেখছিল।
আমি লোকটিকে বলতে যাব এমন সময় পাগলটা আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলল- বইলেন না, বইলেন না। চোখে মুখে তার কী আনন্দ! পৈশাচিক বললে ভুল হবে না।

মোটরবাইক স্টার্ট হল। লোকটি চলে যেতেই
পাগলটা ওঠে দাড়াল। সাথে তার কুকুরটাও।
আমার সামনে এসে দাত খিঁচিয়ে হাসি দিয়ে পাগলটি বলল, দেখছনি হালায় কেমন পাগল**দা। হা হা হা আ…!

সে যখন তামাটে রঙের বেনসনের প্যাকেটটা হাতে নিল কুকুরটা আনন্দে লাফিয়ে উঠল।
পাগল কুকুরটাকে কোলে নিয়ে দোকান থেকে চলে গেল। সামনে সোজা সরু রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে সে। দূর থেকে কুকুরটার লেজ নাড়ানো দেখছি।

চা কখন দোকানদার দিয়ে গেছে খেয়াল করিনি। অবশ্য আপসোস হল না। আমি মানুষ দেখি, আনন্দ দেখি, প্রকৃতি দেখি। এসব দেখতে আমার খুব ভালো লাগে।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×